কলকাতা, 20 নভেম্বর : প্রসূতি এখনও বলে চলেছেন, তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন । আর তদন্তের পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রসূতি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন । শিশুবদল হয়নি । বরং প্রসূতি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন । কারণ অনেক সময়ই প্রসবের পরে প্রসূতির মানসিক সমস্যা দেখা দেয় । এর মধ্যে সমস্যায় পড়েছেন প্রসূতির পরিজনরা । তাঁরা প্রসূতিকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে চাইছে । কিন্তু যেতে নারাজ প্রসূতি । তবে, DNA টেস্ট করাবেন বলে জানিয়েছেন প্রসূতির পরিবার ।
17 নভেম্বর ডানকুনির বাসিন্দা রিতা দেবনাথ কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রসবের জন্য ভরতি হয় । 18 নভেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অভিযোগপত্র জমা দেন রিতার স্বামী রাজু দেবনাথ । অভিযোগপত্রে রাজু জানান, 18 নভেম্বর সকাল 6 টা থেকে 8 টার মধ্যে তাঁর স্ত্রী রিতা প্রসব করেন । তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন । কিন্তু অপারেশন থিয়েটারের তাঁকে জানানো হয় কন্যাসন্তান হয়েছে । তখনই প্রতিবাদ জানান রিতা । কিন্তু তাঁকে মারধর করা হয় । এই অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার তদন্ত শুরু করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । তদন্তের পরে প্রসূতির স্বামীকে জানিয়ে দেওয়া হয়, হাসপাতালে কোনওরকম শিশুবদল হয়নি । তাঁর স্ত্রী রিতা কন্যাসন্তানই জন্ম দিয়েছেন ।
তদন্তের এই রিপোর্ট পাওয়ার পর থেকেই রিতাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইছেন পরিজনরা । তবে, রিতা কন্যা না পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন তা জানতে তাঁরা DNA টেস্ট করাবেন বলে জানালেন প্রসূতির ভাই চিরঞ্জিত বাগ । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেভাবে তাঁর দিদির মানসিক সমস্যার কথা বলছেন তা মেনে নিতে পারছেন না বলে জানান তিনি । এ দিকে প্রসূতি রিতা দেবনাথ এখনও বলে চলেছেন, "(সন্তানকে) প্রথমে আমার বুকে দিল, বুকে ধরে আছি । এরপর যখন নিয়ে নিল তখন আমার কাছে জানতে চাইছে (হাসপাতালের কর্মীরা) কী হয়েছে আমার? আমি বললাম, আমার ছেলে হয়েছে । ওরা (হাসপাতালের কর্মীরা) নিজেরাও বলছিল, ছেলে হয়েছে। এরপরে পর পর দুটি মেয়ে হয়েছে (অন্য প্রসূতিদের) । ওদের বাচ্চাগুলি ওদের কাছেই আছে । আমার বাচ্চাটা আমাকে দিতে চাইছে না । তখন বলছে, আমার মেয়ে হয়েছে । আমাকে বলছে, ছেলে হয়েছে কেন বলছি? দুটো মেয়ে ঘরে আছে বলে ? তারপর আমাকে মারতে শুরু করে । "
তদন্তের পরে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল (MSVP), চিকিৎসক ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, "অভিযোগ হয়েছিল, পুত্রসন্তানের বদলে কন্যাসন্তান দেওয়া হয়েছে । আমাদের তদন্ত কমিটি দেখেছে, সোমবার 18 নভেম্বর সকাল পাঁচটা নাগাদ কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন এই অভিযোগকারীর স্ত্রী । ওই দিন রাত 2টো থেকে মঙ্গলবার সকাল 10টা পর্যন্ত আট ঘণ্টায় এখানকার লেবার রুমে 7 টি শিশুর জন্ম হয়েছে । এরা সকলেই কন্যসন্তান । লগ বুকেও এটা রেজিস্ট্রার করা আছে । সুতরাং, লেবার রুমের মধ্যে পুত্রসন্তানের থাকার বিষয়টি অসম্ভব । উনি (প্রসূতি) বলছেন, ওনাকে কন্যাসন্তান দেওয়া হয়েছে । ওনার মনে হয়েছিল যে উনি স্তনদুগ্ধ পুত্রসন্তানকে খাইয়েছেন । কিন্তু, তথ্যগতভাবে যেহেতু আমাদের এখানে ওই সময়ে সকলের কন্যাসন্তান হয়েছে । সেই জন্য, এখানে কোনও পুত্রসন্তানের আসার সম্ভাবনা নেই ।"
MSVP বলেন, "তদন্ত কমিটির সদস্যরা যখন ওনার (প্রসূতির) সঙ্গে কথা বলেছেন তখন ওনার অসংলগ্ন কথা ছিল । অনেক সময় প্রসবের পরে একটু সাইকিয়াট্রিক প্রবলেম হয় । এর জন্য সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে প্রসূতিকে রেফার করা হয়েছে । তদন্ত অনুযায়ী যেহেতু কোনও পুত্রসন্তান ছিল না লেবার রুমে সেই কারণে শিশুবদলের সম্ভাবনা নেই । প্রসূতির স্বামীকে সব বলা হয়েছে । তিনি বলছিলেন, তাঁকে কন্যাসন্তান দেখানো হয়েছিল । তাহলে তিনি অভিযোগ করলেন কেন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, তাঁর স্ত্রী বলেছেন ।"
এই প্রসূতির স্বামী রাজু দেবনাথ বলেন, "আমার স্ত্রী বলছে, ছেলে হয়েছে । আমি তাতে খুশি হয়েছিলাম । কিন্তু আমি গিয়ে দেখলাম মেয়ে । আমিও চাইছি যদি ছেলেটা পাই ভালো । না পেলে আর কিছু বলতে চাইছি না । এখানেই শেষ করতে চাইছি । "
প্রসবের পরে সাধারণত 48 ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেলে ছুটি দেওয়া হয় । বুধবার সকালে কি তাহলে কন্যাসন্তানকে নিয়েই বাড়ি ফিরবেন প্রসূতি এবং তাঁর পরিজনরা? উত্তরে MSVP বলেন, "প্রসূতির পরিজনদের জানানো হয়েছে । তাঁরা যে রকম সিদ্ধান্ত নেবেন সেই অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিন্তাভাবনা করবে ।"