কলকাতা, 18 জানুয়ারি: নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে অস্বস্তিতে থাকা রাজ্য সরকার এ বার বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে গুরুতর পদক্ষেপ করতে চলেছে ৷ রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে শুরু করে গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বিভিন্ন দফতরে যত নিয়োগ হয়েছে, তার বিস্তারিত নথি এ বার বিভিন্ন দফতরের কাছে চেয়ে পাঠালেন মুখ্যসচিব ভগবতী প্রসাদ গোপালিকা ৷
2011 সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের কাছে সবচেয়ে বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ নিয়ে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ । ইতিমধ্যেই তা নিয়ে আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ই ডি। এই তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই জেলবন্দি হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং শাসকদলের বেশ কয়েকজন বিধায়ক । শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, এ বার পৌরসভাগুলিতেও নিয়োগ তদন্তকারী অফিসারদের স্ক্যানার রয়েছে । গোটা দেশে লোকসভা ভোটের দামামা প্রায় বেজে গিয়েছে । এ রাজ্যেও দরজায় কড়া নাড়ছে লোকসভা ভোট । আর ঠিক এই অবস্থায় নিয়োগের বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে নড়েচড়ে বসল নবান্ন ।
বৈধতা এবং অবৈধতা - এ সব নিয়ে আলোচনার মাঝেই রাজ্যের মুখ্যসচিব ভগবতী প্রসাদ গোপালিকা, এ বার 2011 সাল থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোন দফতরে কত নিয়োগ হয়েছে, তার পরিসংখ্যান চেয়ে পাঠালেন । মুখ্যসচিবের নির্দেশ, 2011 সালের মে মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে 2023 সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি অফিস ছাড়াও পৌরসভা, পঞ্চায়েত, পুলিশ, স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, জেলা, মহকুমা এবং ব্লক স্তরে যত কর্মী নিয়োগ হয়েছেন, তাঁদের পুঙ্খানুপুঙ্খ তালিকা নবান্নের কাছে পাঠাতে হবে দফতরগুলিকে । সেই রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্যসচিব, প্রধান সচিব, সচিব কিংবা জেলাশাসকদের সই থাকা বাধ্যতামূলক । অতএব দায়সারা ভাবে একটা তথ্য পাঠিয়ে দিলেই যে কাজ চলবে না, মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ থেকে তা স্পষ্ট ।
রাজনৈতিক মহল অবশ্য মুখ্যসচিবের এই পদক্ষেপের পেছনে দুটি কারণ দেখতে পাচ্ছে । তাঁদের মতে, এই তথ্য তলাশ একদিকে যেমন বৈধতা অবৈধতা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরে একটা পর্যালোচনার প্রয়াস । একইভাবে বিভিন্ন সময় কর্মসংস্থান নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্য সরকারকে । রাজ্য সরকারকে বহু ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে থেকে অভিযোগ শুনতে হয় যে, বিভিন্ন দফতরে প্রচুর শূন্যপদ থাকলেও সেখানে লোক নেওয়া হচ্ছে না । এক্ষেত্রে সরকারিভাবে একদিকে যেমন শূন্য পদ পূরণের একটা প্রয়াস নেওয়া হতে পারে, একইভাবে এটি তথ্যের আলোকে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দেওয়ার উদ্যোগও হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, "বিরোধীরা যতই সমালোচনা করুন, এই সরকার কারওকেই বঞ্চিত করেনি । বরং এই সরকারের আমলে শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । বিপুল চাকরি দেওয়া হয়েছে । শুধু এমএসএমই-তেই 1 কোটি 15 লক্ষ লোকের চাকরি হয়েছে । যাঁরা বড় বড় কথা বলছেন, তাঁদের থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দেব । কেন্দ্রে 40% বেকারত্ব বেড়েছে । আমাদের সরকারের আমলে রাজ্যে 40% বেকারত্ব কমেছে ।" আর মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর মুখ্যসচিবের এই উদ্যোগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবেই দেখছে ওয়াকিবহাল মহল ।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রত্যেক মন্ত্রিসভার বৈঠকে কমবেশি নতুন নিয়োগের ঘোষণা করা হচ্ছে । পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শূন্যপদ পূরণের উপর জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার । বর্তমানে মুখ্যসচিবের এই উদ্যোগ সফল হলে শাসকদলের প্রচারে এই কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান একটা বড় অস্ত্র হতে চলেছে বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।
আরও পড়ুন: