কলকাতা, 8 ফেব্রুয়ারি: বাজেট অধিবেশনের শুরুর দিনেই উত্তপ্ত বিধানসভা (Chaos in WB Assembly Budget Session) ৷ রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বাজেট বক্তৃতা চলাকালীনই তুমুল অশান্তির (C V Ananda Bose) সাক্ষী থাকল বিধানসভা ! কাঠগড়ায় বিরোধীশিবির ৷ রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি সরাসরি রাজ্যপালকেও এদিন আক্রমণ করেন বিজেপি বিধায়করা ৷
বুধবার থেকে শুরু হল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাজেট অধিবেশন ৷ ঠিক ছিল, দুপুর 2টো থেকে শুরু হবে অধিবেশনের কাজ ৷ ধনকড় জমানার তিক্ততা ভুলে রাজ্যপালের ভাষণ দিয়েই অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হবে ৷ তবে, এ নিয়ে যে অশান্তি হতে পারে, তার আগাম একটা আঁচ ছিল ৷ এর আগে বিধানসভায় ভাষণ দিতে এসে বিপাকে পড়েছিলেন প্রাক্তন রাজ্য জগদীপ ধনকড় ৷ তাঁর বক্তৃতা চলার সময় সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া-সহ নানা অভিযোগ উঠেছিল ৷ কিন্তু, সি ভি আনন্দ বোস রাজ্যপাল হওয়ার পর ছবিটা বদলাতে শুরু করে ৷ প্রথম থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলার বার্তা দেন নতুন রাজ্যপাল ৷
আরও পড়ুন: বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপালের ভাষণে বিশৃঙ্খলা চান না অধ্যক্ষ বিমান
এই প্রেক্ষাপটে জানা যায়, বুধবার রাজ্যের লিখে দেওয়া বক্তৃতা পুরোটাই পাঠ করবেন রাজ্যপাল ৷ একইসঙ্গে, শাসকদলের তরফ থেকে নির্দিষ্টভাবে প্রত্যেক বিধায়ককে জানিয়ে দেওয়া হয়, রাজ্যপালের ভাষণে যাতে কোনওভাবেই বিঘ্ন না ঘটে, তা তাঁদের নিশ্চিত করতে হবে ৷ কিন্তু, তারপরও বিতর্ক এড়ানো গেল না ৷ অভিযোগ, এদিন নিয়মমাফিক, প্রথমে শোক প্রস্তাব পেশ করা হয় ৷ তারপর বাজেট বিবৃতি পড়তে আরম্ভ করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস ৷ আর তার কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় হই-হট্টগোল ৷ তৃণমূল সরকারের উদ্দেশে একের পর এক স্লোগান দিতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা ৷ তাঁদের বলতে শোনা যায়, 'তৃণমূলের সরকার, আর নেই দরকার', 'চোর ধরো, জেল ভরো', 'পিসি চোর, ভাইপো চোর, তৃণমূলের সবাই চোর' !
এদিন রাজ্যপালের ভাষণের শুরুতেই অবশ্য পরিস্থিতি এমন ছিল না ৷ প্রথমে যখন রাজ্যপাল তাঁর বক্তব্য শুরু করেন, সেই সময় শান্তই ছিল বিরোধীপক্ষ ৷ প্রয়াতদের প্রতি শোকজ্ঞাপনের পর রাজ্যপাল মূল বক্তৃতায় আসেন ৷ যে মুহূর্তে তিনি বিবৃতির অষ্টম অনুচ্ছেদে পৌঁছন, শুরু হয় অশান্তি ৷ বিজেপি বিধায়করা কখনও নিজেদের আসনে বসে, আবার কখনও নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে ৷ কিন্তু রাজ্যপাল একবারও তাঁর বক্তব্য থামাননি ৷ প্রবল চিৎকার ও বিক্ষোভের মধ্যেই তিনি তাঁর ভাষণ চালিয়ে যেতে থাকেন ৷ এই অবস্থায় প্রায় 20 মিনিট ধরে স্লোগান দেওয়ার পর বিধানসভা থেকে 'ওয়াক আউট' করেন বিজেপি বিধায়করা ৷
এরপর বিধানসভার বাইরে চলতে থাকে স্লোগান-শাউটিং ৷ স্লোগানে রাজ্যপালকে ধিক্কার পর্যন্ত দেন বিজেপি বিধায়করা ! অন্যদিকে, রাজ্যপালকে বিধানসভার মূল ফটক পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁদের সামনেও থামেননি বিরোধীরা ৷ রাজ্যপাল গাড়িতে উঠে চলে যাওয়ার সময় বিরোধী বিধায়কদের উদ্দেশে হাতজোড় করে বিদায় জানান ৷ কিন্তু, বিরোধীদের সেদিকেও কোনও ভ্রূক্ষেপ ছিল না !
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে চাকদার বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র ঘোষ বলেন, নতুন রাজ্যপালের কাছ অন্য ধরনের ভাষণ আশা করেছিলেন তাঁরা ৷ কিন্তু, রাজ্যপাল সেটাই পড়েছেন, যেটা রাজ্য সরকারের তরফে তাঁর বিবৃতিতে লিখে দেওয়া হয়েছে ৷ তাই তাঁরা প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন ৷
পালটা বারাসতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, যেটা এদিন ঘটল, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ৷ ওঁরা (বিজেপি বিধায়করা) বোধহয় আগের রাজ্যপালের ভাষণ যেভাবে উপভোগ করতেন, বর্তমান রাজ্যপালের ক্ষেত্রে তেমনটা হচ্ছে না ৷ কারণ, তিনি নিরপেক্ষ ৷ তাই এসব করছেন ওঁরা !
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, কেন্দ্রের পাঠানো রাজ্যপালের ভাষণের সময়েই অসভ্যতা করল কেন্দ্রের শাসকদলের মানসিক অবসাদগ্রস্ত বঙ্গ শাখা ! কেন্দ্রের পাঠানো রাজ্যপালকেও ছাড়ছেন না ওঁরা ! হাস্যকর ৷ এতে বিজেপির দেউলিয়া মনোভাব, হতাশা প্রমাণিত ৷ এসবই অতৃপ্ত আত্মার অসহায় আর্তনাদ ! এটা ওঁদের ব্যর্থতার নমুনা ৷