কলকাতা, 14 নভেম্বর: কলকাতার ঐতিহ্যশালী পুজোগুলির অন্যতম বড়িশার চণ্ডীমেলা(Chandi Mela)। ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ এই চণ্ডীপুজো 230 বছরে পদার্পণ করতে চলেছে এই বছর । এই পুজো উপলক্ষ্যে আয়োজিত মেলা আগামী 30 নভেম্বর থেকে 9 ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে ৷
আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক তথা জগৎচন্দ্র রায়চৌধুরীর বংশধর শুভদীপ রায়চৌধুরী ৷ এই চণ্ডীপুজো ও মেলা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ঐতিহ্যবাহী চণ্ডীপুজোর ইতিহাস বর্ণনা করেন ৷ আগে পাঁঠাবলি এবং মোষবলিও হত এই পুজোয়। তবে মূর্তি পুজোটি বর্তমানে সর্বজনীন পুজোয় পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন : বিশ্বনাথ ধামে অকারণে ঘোরাঘুরি, ধৃত সন্দেহভাজন 3 যুবক
জানা গিয়েছে, মহেশচন্দ্র রায়চৌধুরী মাতৃসাধক ছিলেন। বসতবাড়ি সংলগ্ন একটি পুকুরে অষ্টধাতুর একটি ঘড়া পেয়েছিলেন ৷ কথিত আছে দেবীর আদেশে তিনি সেই কলসি প্রতিষ্ঠা করেন। আর ওই পুকুর চণ্ডীপুকুর নামে পরিচিত। কলসিতে পরানো হয় বেনারসি শাড়ি এবং তার ওপরে রাখা আছে সিঁদুর লাগানো শিষ ডাব। ডাবে রুপোর চোখ, শিষে সোনার নথ-সহ নানান পারিবারিক অলঙ্কার এবং মাথায় মুকুট। কিন্তু বছরে একটি বার দেবীর নির্দেশ অনুযায়ী মূর্তি তৈরি করে পুজো করা হয়। শুক্লপক্ষের অষ্টমী, নবমী এবং দশমীতে পুজো দেওয়ার লাইন চোখে পড়ার মতো। এছাড়া পুজোকে কেন্দ্র করে বিরাট মেলার আয়োজন করা হয় ৷
![ETV Bharat](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/16921440_wb_ghat2.jpg)
![ETV Bharat](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/16921440_wb_chandi-1.jpg)
আরও পড়ুন : আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস, ইতিহাস থেকে গুরুত্ব জেনে নিন বিশদে
প্রসঙ্গত, শিল্পীরা দেবীর মৃন্ময়ী বিগ্রহ তৈরি করেন নিষ্ঠা ভরে ৷ মূর্তি তৈরির আগে চণ্ডীপুকুরে স্নান করে বিগ্রহের একটি কাঠ নিয়ে সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের প্রতিষ্ঠিত মঙ্গলচণ্ডীর কাছে পুজো দিয়ে আসেন। সেই কাঠটি পুজোর আগে অবধি চণ্ডীবাড়িতেই পূজিত হয়। অষ্টমীর দিন ভোরবেলা রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্য সেই কাঠ এবং পরিবারের প্রাচীন শালগ্রামশিলা নিয়ে মূল মন্দিরে গেলে তবেই শুরু হয় পুজো।
এছাড়া অষ্টমী এবং নবমীর দিন সাবর্ণদের বাড়ি থেকে মন্দিরে ভোগ নিয়ে যাওয়ার এক প্রথা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে বড়িশার সাবর্ণপাড়া ও রায় বাহাদুর কালিকুমার রায়চৌধুরী রোডে ভিড় চোখে পড়ার মতো। বার্ষিক পুজোর আগেই মাকে রাজবেশে সাজানো হয়। নানা অলংকারে সেজে তিনি জ্যোতির্ময়ী রূপে বিরাজ করেন মন্দিরে। পুজোর দিন সকাল থেকে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে চণ্ডীবাড়িতে। দুপুরে খিচুড়ি, সাদাভাত, পোলাও, ভাজা, তরকারি, নানান রকমের মাছ, চাটনি, পায়েস, মিষ্টি নিবেদন করা হয় এবং রাত্রে লুচি, তরকারি, মিষ্টি দেওয়া হয়। বর্তমানে মহেশচন্দ্রের দ্বিতীয় পুত্র হরিশ্চন্দ্রের জ্যেষ্ঠপুত্র সতীশচন্দ্র এবং দ্বিতীয় পুত্র জগৎচন্দ্রের প্রপৌত্ররা এই বাড়ির পুজো পরিচালনা করেন।