কলকাতা, 15 জুলাই : বেশ কয়েক বছর আগে থেকে বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষার উপর জোর দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলোও । এখন তো আবার করোনা এবং লকডাউনের কারণে অনলাইন বা ভার্চুয়াল ক্লাসের উপর নির্ভরশীল ছাত্রছাত্রীরা । কিন্তু সাধারণ সময়ে কম্পিউটার শিক্ষা হোক বা করোনার কালে অনলাইন ক্লাস, এর জন্য দরকার বিদ্যালয়গুলোতে কম্পিউটার থাকা এবং ইন্টারনেট পরিষেবা থাকা । কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বশেষ রিপোর্টে বাংলার স্কুলশিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের করুণ ছবি ধরা পড়েছে ।
এবার দেখা যাক কী বলছে ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস 2019-20-র রিপোর্ট, যা স্কুলশিক্ষা ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সর্বশেষ রিপোর্ট । এখানে বলে রাখা ভাল যে ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস 2019-20-র রিপোর্টটি প্রকাশিত হয় কেন্দ্রকে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করেই ।
দেখা যাক পশ্চিমবঙ্গের চিত্র । রাজ্যে যতগুলো বিদ্যালয় যাচ্ছে তার মাত্র 13 শতাংশ প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার চালু আছে । চালু ইন্টারনেট পরিষেবার ক্ষেত্রে চিত্রটা আরও করুণ । ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস 2019-20-র সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যের মাত্র 10.2 শতাংশ বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু আছে বা বলা ভাল চালু ইন্টারনেট সংযোগ আছে । এই রাজ্যে মোট বিদ্যালয়ের সংখ্যা 95 হাজার 755, যার মধ্যে 83 হাজার 456টি হল সরকারি বিদ্যালয়, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের সংখ্যা 93 এবং বেসরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা হল 10 হাজার 424টি ।
ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস 2019-20-র রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যের সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলির মাত্র 9.65 শতাংশের চালু ইন্টারনেট সংযোগ আছে । বেসরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানটা একটু ভাল । 30.11 শতাংশ বেসরকারি বিদ্যালয়গুলিতে চালু ইন্টারনেট সংযোগ আছে ।
এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কলকাতা নিবাসী শিক্ষাবীদ এবং অ্যাকাডেমিক অ্যাডমিনেস্ট্রেটর, সুচস্মিতা বাগচী সেন বলেন যে এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে এই রাজ্যে যুগের সঙ্গে এগিয়ে থাকার কোনও ইচ্ছা, না সরকারের আছে না আছে কোনও রাজনৈতিক দলের । বলেন, "রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সদিচ্ছার অভাবই হল একই করুণ চিত্রের কারণ । তাই আমাদের রাজ্যের ছেলেমেয়েরা বহুক্ষেত্রে জাতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলিতে লাগাতার পিছিয়ে পড়ছে ৷"
আরও পড়ুন : JMB Suspect Arrested : ছেলের কার্যকলাপ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না ধৃত লালুর মা
দিল্লি- নিবাসী শিক্ষাবীদ, চিরশ্রী দাসগুপ্ত বলেন, ‘‘রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সদিচ্ছার অভাব তো আছেই । তাছাড়াও আছে পরিকাঠামোর অভাব । এই পরিকাঠামো এক সরকারের পক্ষে পুষিয়ে দেওয়াও সম্ভব নয় । সরকারের উচিত অবিলম্বে উইপ্রো বা মাইক্রোসফটের মতো পেশাদার সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বিদ্যালয়গুলিতে কম্পিউটার শিক্ষার পরিকাঠামো গড়ে তোলা এবং একই সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষিত করা । দিল্লির মতো বহু রাজ্য এইভাবেই বিভিন্ন সরকারি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে ৷"