কলকাতা/ব্যারাকপুর/দমদম, 8 অক্টোবর: রবিবারের ছুটির দিনে পৌরসভা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের 12টি জায়গায় হানা দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ সিবিআই সূত্রে খবর, এ দিন কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, ব্যারাকপুর, উত্তর দমদম, দক্ষিণ দমদম, কৃষ্ণনগর, টাকি, কামারহাটি, চেতলা ও ভবানীপুর-সহ একসঙ্গে মোট 12টি জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে ।
এ দিন সকাল থেকেই পৌরসভা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের বিভিন্ন দিকে তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআই । নিজাম প্যালেস সূত্রের খবর, নিউ ব্যারাকপুর পৌরসভার প্রাক্তন পৌরপ্রধান তৃপ্তি মজুমদারের বাড়িতে হানা দিয়েছে সিবিআই । সকালে তৃপ্তির বাড়িতে যান সিবিআই আধিকারিকরা । নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি খতিয়ে দেখতেই তাঁরা এসেছেন বলে জানা গিয়েছে । দমদম পৌরসভার চেয়ারম্যান হরিন্দর সিংহের বাড়িতেও আজ এই মামলাতেই হানা দেয় সিবিআই ৷ দমদম পৌরসভার চেয়ারম্যানের বাড়িতে 10 জনের সিবিআই আধিকারিকদের দল তল্লাশি চালাচ্ছে ৷ সঙ্গে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ৷
এ দিকে, কলকাতা পৌরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতেও সাতসকালে হাজির হয় সিবিআই । এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ কলকাতার নিজাম প্যালেসের অফিস থেকে সিবিআইয়ের বিশাল সংখ্যক প্রতিনিধি দল এবং প্রচুর সিআরপিএফ জাওয়ানরা ঘিরে ফেলেন ফিরহাদ হাকিমের বাড়ি । এর পরেই সিবিআই তদন্তকারী আধিকারিকরা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন । কলকাতা পৌরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে সিবিআই হানা দিয়েছে, এই খবর চাউর হতেই এলাকার লোকজন চেতলার মেনরোড অবরোধ করেন । সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে কালীঘাট থানা এবং চেতলা থানার বিশাল সংখ্যক পুলিশ । চারপাশ ঘিরে ফেলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা । সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে পৌরসভা নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ফিরহাদের সঙ্গে কথা বলছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকরা ।
আরও পড়ুন: অভিষেকের ধরনা থেকে নজর ঘোরাতেই সিবিআই তৎপরতা বলছে তৃণমূল
এ বছরেই সল্টলেকে অয়ন শীলের বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ ধরে তল্লাশি অভিযান চালান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা । সেখানেই তল্লাশি অভিযানে বেশকিছু নথিপত্র উদ্ধার করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছিলেন যে, শুধু শিক্ষা দুর্নীতি কাণ্ডের সঙ্গে নয়, বরং অয়ন শীল যুক্ত রয়েছেন রাজ্যের একাধিক পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের সঙ্গেও । উত্তর 24 পরগনার টিটাগড়, ব্যারাকপুর-সহ একাধিক পৌরসভায় বেআইনিভাবে নিয়োগ হয়েছিল । কামারহাটি পৌরসভায় অয়ন শীলের এক বান্ধবীকেও চাকরি দেওয়া হয়েছিল বেআইনিভাব ৷ তদন্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা এমনটাই জানিয়েছিলেন ৷
এরপরই পৌরসভাগুলির তরফ থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা জানতে চান যে, কবে, কোথায়, কীভাবে নিয়োগ হয়েছিল ? কিন্তু পৌরসভার তরফ থেকে কোনও জবাব না দেওয়ার ফলে, রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে প্রায় টানা 19 ঘণ্টা ধরে তল্লাশি অভিযান চালান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটর গোয়েন্দারা । সেখান থেকে বেশকিছু নথিপত্র তাঁরা সংগ্রহ করে নিয়ে যান । আর রবিবার সকাল সকাল চেতলায় কলকাতা পৌরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে চলে আসেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা ।
এ দিন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের ভবানীপুরের বাড়িতেও হানা দেয় সিবিআই ৷ তৃণমূলের এই দুই হেভিওয়েট নেতার পাশাপাশি এ দিন হালিশহর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অংশুমান রায় এবং কাঁচরাপাড়া পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুদামা রায়ের বাড়িতেও তল্লাশি অভিযানে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা । এখনও সেখানে ম্যারাথন তল্লাশি চলছে ৷
সূত্রের খবর, এ দিন সকাল দশটা নাগাদ সিবিআইয়ের চার সদস্যের বিশেষ টিম পৌঁছে যায় হালিশহর ও কাঁচরাপাড়ায় । হালিশহরে পৌরসভার প্রাক্তন তৃণমূল চেয়ারম্যান অংশুমান রায়ের বাড়ি ঘিরে ফেলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা । এরপর বাড়িতে ঢুকে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান । একইভাবে তল্লাশি অভিযান চলে কাঁচরাপাড়ার রেল কলোনিতে পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুদামা রায়ের বাড়িতেও । দু'জায়গাতেই তৃণমূলের দুই প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা । তল্লাশি অভিযান চলাকালীন শাসকদলের দুই প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বাড়ির ভিতরে এবং বাইরে কারওকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না কেন্দ্রীয় বাহিনীর তরফে ।
আরও পড়ুন: সক্রিয় সিবিআই! রবির সকালে ফিরহাদ-মদনের বাড়িতে জোড়া হানা
সিবিআই সূত্রে খবর, পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন এই দুই পৌরসভায় বেআইনি কোনও নিয়োগ হয়েছে কি না, বেআইনি নিয়োগ হয়ে থাকলে তাঁদের ভূমিকা কী ছিল, সেবিষয়ে দুই প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে জেরা করে জানার চেষ্টা করছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা ।
এই বিষয়ে প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুদামা রায় ঘনিষ্ঠ রঞ্জন যাদব নামে এক তৃণমূল কর্মী বলেন বলেন, "তাঁরা (সিবিআই) তাঁদের মতো তদন্ত করছেন । তা নিয়ে কিছু বলার নেই । কিন্তু এখানে কোনও নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়নি বলেই আমাদের ধারণা । সুদামা রায় খুব ভালো লোক । তাঁর আমলে এলাকার যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে । যদি বেআইনিভাবে নিয়োগ হত তাহলে তো সবার আগে চাকরি পেতাম আমরাই ! কিন্তু আমরা তো এখনও বেকার রয়েছি । এখানে কোনও দুর্নীতি হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই । এটুকু বলতে পারি ৷"
মূলত রাজ্যের একাধিক পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তে নামেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকরা । তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের তরফ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন পৌরসভা যেমন টিটাগড়, কামারহাটি, ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম ছাড়াও হুগলির একাধিক পৌরসভা এবং দক্ষিণ 24 পরগনার ডায়মন্ড হারবার পৌরসভাকে নোটিশ পাঠানো হয় ।
সংশ্লিষ্ট নোটিশের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে চান যে, বিভিন্ন পৌরসভায় যে নিয়োগ হয়েছিল, সেই নিয়োগে কতটা স্বচ্ছতা মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল তার বিস্তারিত রিপোর্ট তাঁরা জানাতে চান । কিন্তু তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয় সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলির তরফে কোনও সদুত্তর দেওয়া হয়নি ৷ এরপরেই চলতি সপ্তাহে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে প্রায় টানা 19 ঘণ্টা ধরে তল্লাশি অভিযান চালান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা । মূলত পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তিনি কী কী জানেন তা জানার জন্যই 19 ঘণ্টা ধরে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালান তদন্তকারী আধিকারিকরা ।