কলকাতা, 18 ফেব্রুয়ারি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে শুক্রবার সিবিআই গ্রেফতার করেছে বাগদার চন্দন মণ্ডল ওরফে 'রঞ্জন'কে ৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, তাঁকে হেফাজতে পেয়ে নিজাম প্যালেসে রাত দেড়টা পর্যন্ত জেরা করা হয় ৷ এ থেকে উঠে আসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নাম ৷ তদন্তকারীদের অনুমান, এই চন্দন মণ্ডলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত প্রসন্ন রায় ৷ আবার এই প্রসন্ন রায়ের সঙ্গে আতিথেয়তার সম্পর্ক রয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে অন্যতম মূল অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ৷
এছাড়াও এই নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটর হাতে গ্রেফতার হওয়া হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে জেরা করেও তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম পাওয়া গিয়েছে বলে খবর । ফলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি এই দুর্নীতিতে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের একটি সংযোগ ছিল ৷ প্রসন্ন রায়ের এখন সংশোধনাগারে রয়েছেন ৷ ফলে গোটা বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য বাগদার চন্দন মণ্ডল ওরফে রঞ্জনকে সংশোধনাগারে নিয়ে গিয়ে প্রসন্ন রায়ের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চান তদন্তকারী আধিকারিকরা ।
অভিযুক্ত চন্দন মণ্ডলের সঙ্গে হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের যোগাযোগের কথা উঠে এসেছে ৷ সে বিষয়ে চন্দনকে জেরা করে তদন্তকারী আধিকারিকরা কুন্তল এবং রঞ্জনের নামে মোট 22 টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছেন ৷ রঞ্জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইতিমধ্যে লক্ষাধিক টাকার হদিশ পেয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা ৷ তাই তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, এই টাকা সবই নিয়োগ দুর্নীতির লভ্যাংশের ৷
আরও পড়ুন: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ! সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার 'সৎ রঞ্জন'
সিবিআই-এর অভিযোগ, বাগদার এই চন্দন মণ্ডল ওরফে 'সৎ রঞ্জন' একজন বড় মাপের এজেন্ট ছিলেন ৷ তাঁর অধীনে একাধিক দালাল বা এজেন্টরা নিযুক্ত ছিলেন ৷ এই সব অধীনস্থ এজেন্ট বা দালালদের মারফত চাকরিপ্রার্থীদের রোল নম্বর, নাম, পরিচয় সব কিছু আসত চন্দন মণ্ডলের কাছে ৷ তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল এসএসসির (School Service Commission, SSC) প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তি প্রসাদ সিনহার ৷ তিনি বর্তমানে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত এবং সংশোধনাগারে ৷
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অনুমান, এই সব ছোট ছোট এজেন্ট বা দালালদের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের যাবতীয় নথিপত্র নিয়ে 'সৎ রঞ্জন' ওরফে চন্দন মণ্ডল এসপি সিনহার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন ৷ তিনি প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার সুপারিশ পাঠাতেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ৷ সেই সময় শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ৷ তাই টাকার বিনিময় বহু সুপারিশে সবুজ সংকেত দিয়ে পার্থ অনেককে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন ৷ এই 'সৎ রঞ্জন'-এর প্রসঙ্গ প্রথম উত্থাপন করেছিলেন সিবিআই-এর প্রাক্তন শীর্ষকর্তা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্র উপেন বিশ্বাস ৷ গত বছর জুন মাসে কলকাতা হাইকোর্টে তিনি জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক 'সৎ রঞ্জন' ছড়িয়ে আছে ৷ এটি আসলে একটি রূপক ৷ 'সৎ রঞ্জন' অত্যন্ত সততার সঙ্গে বেআইনি শিক্ষক নিয়োগ করে থাকেন ৷
আরও পড়ুন: প্রাথমিক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় চন্দন মণ্ডল ও উপেন বিশ্বাসকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ