কলকাতা, 23 নভেম্বর: বাকি থাকা সমস্ত পুলিশি কেস মিটিয়ে তবেই করা যাবে গাড়ির সার্টিফিকেট অফ ফিটনেস । না হলে মিলবে না সিএস । এর ফলে রাস্তায় ধাপে ধাপে কমতে পারে গণপরিবহনের সংখ্যা । এমনটাই মনে করছে মালিকপক্ষ । অবিলম্বে এই নির্দেশিকা প্রত্যাহার না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথেই হাঁটবেন বলে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা ।
রাজ্য পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে প্রকাশিত নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে, কোনও গাড়ির পলিউশন সার্টিফিকেট পেতে হলে বা পেট্রল পাম্পে গিয়ে অটোমেটেড এমিশন টেস্টিং সেন্টারে ধোঁয়া পরীক্ষা করাতে হলে তার আগে সেই গাড়ির সমস্ত বকেয়া ট্যাক্স, ফাইন এবং ই-চালান বা পুলিশি জরিমানা থাকলে সেগুলোকে মেটাতে হবে । এইসব মেটানো না থাকলে করা যাবে না ধোঁয়া পরীক্ষা । এই নিয়মটি বাণিজ্যিক এবং বেসরকারি ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রেও লাগু হতে চলেছে ।
এই নির্দেশিকা পাওয়ার পরেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে বেসরকারি বাস-ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাব মালিকপক্ষ । ওয়েস্টবেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যে কোনও গাড়ির রোড ট্যাক্স বা ইনসুরেন্স মেটানো না থাকলে সেই গাড়ির পলিউশন পরীক্ষা না হওয়া যুক্তিসঙ্গত । তবে পুলিশি জরিমানা মিটিয়ে তবেই ধোঁয়া পরীক্ষা করা যাবে এই নির্দেশিকার কোনও বাস্তবসম্মত ভিত্তি নেই ।
এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, "পুলিশি জরিমানার ক্ষেত্রে লোক আদালতে আপিল করার সুযোগ থাকে । কিংবা সেখানে গিয়ে কিছু কম টাকা দিয়ে কেস মিটিয়ে নেওয়া যায় । আবার কখনও ভুল গাড়ির নম্বর দিয়ে অন্য একটি গাড়ির মালিককে কেস পাঠানো হলে ডিসি ট্রাফিককে চিঠি লিখে সেই ভুল সংশোধন করে নেওয়া হয় । তবে এই ক্ষেত্রে সেই সময়টুকু পাওয়া যাবে না । কারণ একটি গাড়িকে যদি পলিউশন পাস করাতে হয় তাহলে তাকে খুব দ্রুত পুলিশি জরিমানাগুলিকে মিটিয়ে ফেলতে হবে । তখন আর আপিল করা কিংবা লোক আদালতে যাওয়ার সময়টুকু মিলবে না । এই নির্দেশিকায় ই-চালানকে কেন যুক্ত করা হল সেই বিষয়টি ঠিক পরিষ্কার নয় । ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে তবে খুব দ্রুত আমরা এই নিয়ে ডেপুটেশন জমা দেব ।"
তিনি আরও জানান যে, এই নির্দেশিকায় সংশোধন আনা যায় ৷ নাহলে প্রতিদিন রাস্তা থেকে উধাও হতে থাকবে গণপরিবহণ । কমবে বাস-ট্যাক্সি ও অ্যাপ-ক্যাবের সংখ্যা । শুধু তাই নয় ব্যক্তিগত গাড়িও নামতে পারবে না রাস্তায় । এছাড়াও এই বেসরকারি পরিবহণ শিল্পের উপরে নির্ভরশীল লক্ষ লক্ষ মানুষ এবং তাঁদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে ।
এই বিষয়ে বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, এক একটি বেসরকারি গাড়ির উপর প্রায় হাজার-দু'হাজারের উপর পুলিশি কেস রয়েছে । তবে সেগুলো খতিয়ে দেখার দরকার রয়েছে যে, এর মধ্যে কতগুলি প্রকৃত মামলা । অনেক সময় বিনা কারণে চালকদের উপর জুলুম করা হয় । এইসব মামলার আইনি বাস্তবতা নিয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে । বারবার এই বিষয়গুলি প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কোনও কাজ হয়নি । লোক আদালত এবং ভার্চুয়াল আদালতে জরিমানার টাকার অঙ্কটি মধ্যস্থতার মাধ্যমে কিছুটা কমসম করে দেওয়ার যে সুযোগটা ছিল সেটা আর থাকবে না । আসলে ট্রাফিক পুলিশ সরকারের কোষাগার পূর্ণ করার জন্য এই নির্দেশিকা জারি করেছে ।
বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অসীম বসু জানান যে, অনেক সময় এমন কিছু কেস দেওয়া হয় যেগুলি একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয় । কোনও কোনও ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা শিথিল হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে পুলিশের । এক ধাক্কায় জরিমানা মেটানোর সঙ্গে পুলিশি কেস মেটানো আর যদি পলিউশন ফেল হয় এবং সেই গাড়ি ধরা পড়লে 10 হাজার টাকা জরিমানা । একসঙ্গে টাকার অংকটা অনেকখানি বেড়ে যাচ্ছে । এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই চাপ পড়বে মালিকদের উপরেই ।
আরও পড়ুন :
1 রেলের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে সরব মমতা, সোশাল মিডিয়ায় কেন্দ্রকে দুষলেন মুখ্যমন্ত্রী
2 রাজ্যে বাস ভাড়া বাড়ানো যাবে না, জানিয়ে দিলেন পরিবহণমন্ত্রী
3 ভাড়া বৃদ্ধি প্রস্তাব বাস্তবায়িত হবে কি ? প্রশ্ন বাস মালিকদের