ETV Bharat / state

International Antinatalist Day 2023: 'ভালোবাসা বাড়াও, জনসংখ্যা নয় !' বিশ্ব জন্মদানবিরোধী দিবসে প্রচার তিলোত্তমায় - কলকাতায় জন্মদানবিরোধী প্রচার

জনসংখ্যা নয়, ভালোবাসা বাড়াও ৷ বিশ্ব জন্মদানবিরোধী দিবসে এই মর্মে প্রচার চলল কলকাতায় ৷ 'বেঙ্গলি অ্যান্টিনেটালিজম' নামে ফেসবুক পেজের সদস্যরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই প্রচার চালালেন ৷

International Antinatalist Day 2023
বিশ্ব জন্মদানবিরোধী দিবস 2023
author img

By

Published : Apr 9, 2023, 6:13 PM IST

কলকাতা, 9 এপ্রিল: আজ বিশ্ব জন্মদানবিরোধী দিবস । যার প্রচার শহর কলকাতাতেও । 'বেঙ্গলি অ্যান্টিনেটালিজম' নামে ফেসবুক পেজের সদস্যদের তরফে শহর কলকাতার একাধিক জায়গায় এই প্রচার চালানো হচ্ছে । তাদের মূল বক্তব্য, "বংশবৃদ্ধি রোধ করা হল সর্বোত্তম কাজ । যা আমরা আমাদের অনাগত সন্তানদের জন্য করতে পারি । কারণ যারা অস্তিত্বে আসেনি তারা জীবনের কষ্ট থেকে মুক্ত ।"

অ্যান্টিনেটালিজম/জন্মদানবিরোধ - এটি হল এমন একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি যা যে কোনও সংবেদনশীল প্রাণীর বংশবৃদ্ধিকে নৈতিকভাবে ভুল বলে মনে করে । দার্শনিক ডেভিড বেনাটার বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন যেখানে তিনি তাঁর অ্যান্টিনেটালিজম/জন্মদানবিরোধ ধারণাগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ।

বেনাটারের যুক্তি, কারওকে অস্তিত্বে নিয়ে এলে সে অনিবার্যভাবে কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হবে, এ জন্য এই পৃথিবীতে নতুন সংবেদনশীল জীবন আনা সবসময় ভুল । অতএব, বংশবৃদ্ধি রোধ করা হল সর্বোত্তম কাজ, যা আমরা আমাদের অনাগত সন্তানদের জন্য করতে পারি, কারণ যারা অস্তিত্বে আসেনি তারা জীবনের কষ্ট থেকে মুক্ত ।

কলকাতার বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া সুমিত মজুমদার বলেন, "জন্মদানবিরোধ একটি বিতর্কিত বিষয় এবং অনেকের কাছে এটি গ্রহণ করা কঠিন । জনসাধারণ সম্ভবত জন্মদানবিরোধ ধারণার বিরোধিতা করে কারণ এই দর্শনটিকে আপাতদৃষ্টিতে হতাশাবাদী বলে মনে হতে পারে । আমরা যদি জীবনের দিকে তাকাই, তবে এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, জীবনে সুখ এবং দুঃখ উভয়ই আছে । তাহলে আমরা যুক্তি দিতে পারি যে, জীবন ভালো তখনই হতে পারে যদি ভালোর পরিমাণ খারাপের চেয়ে বেশি হয় । কিন্তু যখন জীবনে খারাপের পরিমাণ ভালোকে ছাপিয়ে যায়, তখন কি যন্ত্রণার চক্রকে চালিয়ে যাওয়া অনুচিত নয় ?"

বাংলাদেশের এক কলেজ পড়ুয়া মোহনা সেতু বলেছেন, "'স্বর্গ এবং সুখের অস্তিত্ব নেই । যে কারওকেই এই পৃথিবীতে আনার অপরাধকে ন্যায়সঙ্গত করতেই মা-বাবা এগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে । যা আছে তা হল বাস্তবতা, কঠিন বাস্তবতা ! এই কসাইখানায় আমরা মরতে এসেছি, যতদিন না মরি, ততদিন আমাদের অধীনস্থ প্রাণীদের হত্যা করে খেয়ে বাঁচতে হবে । সুতরাং, জন্ম দিবেন না । যে অন্যায় আপনার সঙ্গে করা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি করবেন না । অন্যায়ের জবাব অন্যায়ভাবে দিবেন না, যেহেতু জীবন দেওয়া চরমতম অন্যায়। যারা জন্ম নেয়নি তাদের শান্তিভঙ্গ করবেন না, তাদেরকে অস্তিত্বহীনতার শান্তিতে থাকতে দিন । আমাদের সবাইকে একদিন সেই অস্তিত্বহীনতায় ফিরে যেতেই হবে, তাহলে কেন শুধু শুধু কারওকে অস্তিত্বের যন্ত্রণা দেওয়া ?"

বেঙ্গলি অ্যান্টিনেটালিজম সদস্যদের আরও যুক্তি যে, জন্মদানকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলে বলা যায়, অনাগত শিশুটি অনেক আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারত, এমনকী তার অস্তিত্বের স্থায়ী অর্থও খুঁজে পেতে পারত । জীবনের অল্প কিছু সুখকর অভিজ্ঞতাগুলি কি জীবনের চরম যন্ত্রণাকে ছাড়িয়ে যায় ? আমাদের ভাবনার সবচেয়ে বড় সংকীর্ণতা হল, আমরা সততার সঙ্গে ভাবতে পারি না । আমাদের যারা ব্যবহার করছে, তারা আমাদের এমনভাবে মগজধোলাই করে রেখেছে যে, অনেক স্পষ্ট সত্যও আমাদের চোখে পড়ে না । যদি সৎভাবে ভাবতে পারতাম, তবে প্রথমেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগত, "আমরা কি অস্তিত্বে আসতে চেয়েছি ?"

বেঙ্গলি অ্যান্টিনেটালিজম সদস্যদের আরও বক্তব্য, কারও উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া অনৈতিক । অথচ চারপাশে এত শিশুর উপর জীবন চাপিয়ে দেওয়ার মতো অনৈতিক ঘটনাকে আমরা মেনে নিচ্ছি, এমনকী উদযাপনও করছি । চোখের সামনে প্রতিনিয়ত নিজের ও প্রিয়জনদের কষ্ট দেখে, জীবনের জটিলতার পুনরাবৃত্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে উপলব্ধি করি আমাদের জন্ম না হলেই ভালো হত । যেখানে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অস্থিরতার নাম দেওয়া হয়েছে 'জীবন', সেখানে অস্তিত্বহীনতায় আছে প্রকৃত ও গভীরতর শান্তি ।

আরও পড়ুন: 2022 শুমারি মতে দেশে বাঘের সংখ্যা 3167; গর্বের বিষয়, বলছেন মোদি

কলকাতা, 9 এপ্রিল: আজ বিশ্ব জন্মদানবিরোধী দিবস । যার প্রচার শহর কলকাতাতেও । 'বেঙ্গলি অ্যান্টিনেটালিজম' নামে ফেসবুক পেজের সদস্যদের তরফে শহর কলকাতার একাধিক জায়গায় এই প্রচার চালানো হচ্ছে । তাদের মূল বক্তব্য, "বংশবৃদ্ধি রোধ করা হল সর্বোত্তম কাজ । যা আমরা আমাদের অনাগত সন্তানদের জন্য করতে পারি । কারণ যারা অস্তিত্বে আসেনি তারা জীবনের কষ্ট থেকে মুক্ত ।"

অ্যান্টিনেটালিজম/জন্মদানবিরোধ - এটি হল এমন একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি যা যে কোনও সংবেদনশীল প্রাণীর বংশবৃদ্ধিকে নৈতিকভাবে ভুল বলে মনে করে । দার্শনিক ডেভিড বেনাটার বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন যেখানে তিনি তাঁর অ্যান্টিনেটালিজম/জন্মদানবিরোধ ধারণাগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ।

বেনাটারের যুক্তি, কারওকে অস্তিত্বে নিয়ে এলে সে অনিবার্যভাবে কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হবে, এ জন্য এই পৃথিবীতে নতুন সংবেদনশীল জীবন আনা সবসময় ভুল । অতএব, বংশবৃদ্ধি রোধ করা হল সর্বোত্তম কাজ, যা আমরা আমাদের অনাগত সন্তানদের জন্য করতে পারি, কারণ যারা অস্তিত্বে আসেনি তারা জীবনের কষ্ট থেকে মুক্ত ।

কলকাতার বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া সুমিত মজুমদার বলেন, "জন্মদানবিরোধ একটি বিতর্কিত বিষয় এবং অনেকের কাছে এটি গ্রহণ করা কঠিন । জনসাধারণ সম্ভবত জন্মদানবিরোধ ধারণার বিরোধিতা করে কারণ এই দর্শনটিকে আপাতদৃষ্টিতে হতাশাবাদী বলে মনে হতে পারে । আমরা যদি জীবনের দিকে তাকাই, তবে এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, জীবনে সুখ এবং দুঃখ উভয়ই আছে । তাহলে আমরা যুক্তি দিতে পারি যে, জীবন ভালো তখনই হতে পারে যদি ভালোর পরিমাণ খারাপের চেয়ে বেশি হয় । কিন্তু যখন জীবনে খারাপের পরিমাণ ভালোকে ছাপিয়ে যায়, তখন কি যন্ত্রণার চক্রকে চালিয়ে যাওয়া অনুচিত নয় ?"

বাংলাদেশের এক কলেজ পড়ুয়া মোহনা সেতু বলেছেন, "'স্বর্গ এবং সুখের অস্তিত্ব নেই । যে কারওকেই এই পৃথিবীতে আনার অপরাধকে ন্যায়সঙ্গত করতেই মা-বাবা এগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে । যা আছে তা হল বাস্তবতা, কঠিন বাস্তবতা ! এই কসাইখানায় আমরা মরতে এসেছি, যতদিন না মরি, ততদিন আমাদের অধীনস্থ প্রাণীদের হত্যা করে খেয়ে বাঁচতে হবে । সুতরাং, জন্ম দিবেন না । যে অন্যায় আপনার সঙ্গে করা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি করবেন না । অন্যায়ের জবাব অন্যায়ভাবে দিবেন না, যেহেতু জীবন দেওয়া চরমতম অন্যায়। যারা জন্ম নেয়নি তাদের শান্তিভঙ্গ করবেন না, তাদেরকে অস্তিত্বহীনতার শান্তিতে থাকতে দিন । আমাদের সবাইকে একদিন সেই অস্তিত্বহীনতায় ফিরে যেতেই হবে, তাহলে কেন শুধু শুধু কারওকে অস্তিত্বের যন্ত্রণা দেওয়া ?"

বেঙ্গলি অ্যান্টিনেটালিজম সদস্যদের আরও যুক্তি যে, জন্মদানকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলে বলা যায়, অনাগত শিশুটি অনেক আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারত, এমনকী তার অস্তিত্বের স্থায়ী অর্থও খুঁজে পেতে পারত । জীবনের অল্প কিছু সুখকর অভিজ্ঞতাগুলি কি জীবনের চরম যন্ত্রণাকে ছাড়িয়ে যায় ? আমাদের ভাবনার সবচেয়ে বড় সংকীর্ণতা হল, আমরা সততার সঙ্গে ভাবতে পারি না । আমাদের যারা ব্যবহার করছে, তারা আমাদের এমনভাবে মগজধোলাই করে রেখেছে যে, অনেক স্পষ্ট সত্যও আমাদের চোখে পড়ে না । যদি সৎভাবে ভাবতে পারতাম, তবে প্রথমেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগত, "আমরা কি অস্তিত্বে আসতে চেয়েছি ?"

বেঙ্গলি অ্যান্টিনেটালিজম সদস্যদের আরও বক্তব্য, কারও উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া অনৈতিক । অথচ চারপাশে এত শিশুর উপর জীবন চাপিয়ে দেওয়ার মতো অনৈতিক ঘটনাকে আমরা মেনে নিচ্ছি, এমনকী উদযাপনও করছি । চোখের সামনে প্রতিনিয়ত নিজের ও প্রিয়জনদের কষ্ট দেখে, জীবনের জটিলতার পুনরাবৃত্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে উপলব্ধি করি আমাদের জন্ম না হলেই ভালো হত । যেখানে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অস্থিরতার নাম দেওয়া হয়েছে 'জীবন', সেখানে অস্তিত্বহীনতায় আছে প্রকৃত ও গভীরতর শান্তি ।

আরও পড়ুন: 2022 শুমারি মতে দেশে বাঘের সংখ্যা 3167; গর্বের বিষয়, বলছেন মোদি

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.