ETV Bharat / state

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরি বাতিলের বিষয়ে এসএসসি-র আচরণে বিরক্ত হাইকোর্ট

Calcutta High Court: স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপর বিরক্ত কলকাতা হাইকোর্ট ৷ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরি বাতিল সংক্রান্ত বিষয়ে এসএসসি-র আচরণে বিরক্ত আদালত ৷ সোমবার হাইকোর্টে বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সাব্বার রাশিদির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি এই মামলার ৷ তখনই আদালত এসএসসি-র আচরণে বিরক্তি প্রকাশ করে ৷

Calcutta High Court
Calcutta High Court
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 18, 2023, 2:01 PM IST

কলকাতা, 18 ডিসেম্বর: স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরি বাতিলের বিষয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের আচরণে বিরক্ত আদালত । এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সাব্বার রাশিদির ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার বলেছে, ‘‘কমিশন কেন সব তথ্য আদালতের সামনে নিয়ে আসতে লজ্জা পাচ্ছে ? গত প্রায় এক মাস ধরে আমরা স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছ থেকে সাহায্য চাইছি । কিন্তু আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আপনারা কিছু লুকাতে চাইছেন ।’’

এসএসসি-র বাছাই প্রক্রিয়ায় ওএমআর শিট ম্যানিপুলেশন, র‍্যাংক জাম্পিং এবং সুপারিশ ছাড়াই নিয়োগ প্রাপ্তদের বিষয়ে এসএসসি-র অবস্থান কী ? জানতে চেয়েছিল আদালত । কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার এ দিন আদালতে হাজির হয়ে নবম ও দশমের চাকরি বাতিলের বিষয়ে হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছে ।

কমিশনের আইনজীবী ফের এ দিন তাঁদের বক্তব্য জানাতে সময় চান বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সাব্বার রাশিদির ডিভিশন বেঞ্চে । একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি এবং গ্রুপ -সি ও ডি চাকরি বাতিলের বিষয়ে 20 ডিসেম্বর তারা হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাবে বলে আদালতে জানানো হয় কমিশনের তরফে ।

বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানতে চান, "এটা শুধুমাত্র নবম এবং দশমের এর জন্য হলফনামা ৷ গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি সংক্রান্ত হলফনামা কোথায় ? এসএসসি-র বাছাই কমিটি থাকা সত্ত্বেও নিয়োগে কেন অনিয়ম ?" উত্তরে স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী ড. সুতনু পাত্র বলেন, "হ্যাঁ, নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম রয়েছে । আমরা হাইকোর্টের নির্দেশের পর গ্রুপ ডি ও গ্রুপ সি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছি । বেশ কিছু বৈষম্য পেয়েছি, যেটা আমরা আদালতে জমা দিয়েছি ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘নবম-দশমের ক্ষেত্রে 183 জনের সুপারিশপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে গলদ ছিল । তাদের মধ্যে 122 জনের সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে । গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র ক্ষেত্রে সুপারিশ পত্র প্রত্যাহার করার কোনও বিধি কমিশনের আইনে নেই ।"

এর পর বিচারপতি দেবাংশু বসাক বলেন, "এসএসসি কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছে, আদালত লক্ষ্য করেছে । এসএসসি প্রাপ্ত ডেটা নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে ? 2011 ও 2012 সালের নিয়োগ নিয়ে এসএসসি-র সিদ্ধান্ত কী ? এসএসসি দেখছি অন্যদের মতোই । এসএসসি সব লুকানোর চেষ্টা করছে । সিবিআইয়ের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে 61 জনের সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করেননি কেন ? আদালত বারণ করেছিল ? সুপ্রিম কোর্টের কোনও স্থগিতাদেশ আছে ? হাইকোর্টের কোনও স্থগিতাদেশ আছে ?’’

বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘এই 61 জনের রাজ্যের বেতন ভোগ করার কোনও অধিকার নেই । কমিশন প্রথম থেকেই বলেছে যে তারা সিবিআই-এর তথ্য গ্রহণ করছে এবং সেই তথ্যকে বিশ্বাস করছে । যদিও তারা বলেছে নথির গ্রহণযোগ্যতা আদালতের দ্বারা বিচার্য হবে ৷’’ কমিশনের আইনজীবী তখন বলেন, "2011 ও 2012 সালে নিয়োগ নিয়ে আদালতের কোনও বাতিলের নির্দেশিকা নেই । কমিশনের চেয়ারম্যান আশঙ্কা করছেন যে এটা করলে তিনি আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হবেন ।"

বিচারপতি বসাক বলেন, "যদি আপনি দশজনের সুপারিশ করেন, কিন্তু অন্য দশজন নিয়োগ পান, তাহলে আপনাকে বেআইনি নিয়োগের জন্য সিবিআই-তে যেতে হবে না ?" এর পর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে বিচারপতি জানতে চান, "সুপারিশ পাওয়ার পরে আপনি নিয়োগ দিয়েছেন ?" বোর্ডের আইনজীবী অবশ্য জানান, হ্যাঁ তাঁরা সুপারিশের ভিত্তিতেই চাকরি দিয়েছেন ।

আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য চাকরি প্রার্থীদের হয়ে আবারও বলেন, "যাঁরা যোগ্য, তাঁদের চাকরি চলে যাক সেটা আমরা চাই না । তাঁরা চাকরি করুক ৷ কিন্তু অযোগ্যরা যেন চাকরিতে না থাকেন । আদালত ভালো করে সবার বক্তব্য শুনুক ।" 20 ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানি হবে এই মামলার ৷

আরও পড়ুন:

  1. নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় 9 জানুয়ারির মধ্যে তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবে সিবিআই, নির্দেশ হাইকোর্টের
  2. নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে স্কুল সার্ভিস কমিশন, একাধিক বিষয়ে তথ্য তলব
  3. প্রাথমিকের টেট মামলায় ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্তাকে গ্রেফতার করল সিবিআই

কলকাতা, 18 ডিসেম্বর: স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরি বাতিলের বিষয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের আচরণে বিরক্ত আদালত । এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সাব্বার রাশিদির ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার বলেছে, ‘‘কমিশন কেন সব তথ্য আদালতের সামনে নিয়ে আসতে লজ্জা পাচ্ছে ? গত প্রায় এক মাস ধরে আমরা স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছ থেকে সাহায্য চাইছি । কিন্তু আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আপনারা কিছু লুকাতে চাইছেন ।’’

এসএসসি-র বাছাই প্রক্রিয়ায় ওএমআর শিট ম্যানিপুলেশন, র‍্যাংক জাম্পিং এবং সুপারিশ ছাড়াই নিয়োগ প্রাপ্তদের বিষয়ে এসএসসি-র অবস্থান কী ? জানতে চেয়েছিল আদালত । কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার এ দিন আদালতে হাজির হয়ে নবম ও দশমের চাকরি বাতিলের বিষয়ে হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছে ।

কমিশনের আইনজীবী ফের এ দিন তাঁদের বক্তব্য জানাতে সময় চান বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সাব্বার রাশিদির ডিভিশন বেঞ্চে । একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি এবং গ্রুপ -সি ও ডি চাকরি বাতিলের বিষয়ে 20 ডিসেম্বর তারা হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাবে বলে আদালতে জানানো হয় কমিশনের তরফে ।

বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানতে চান, "এটা শুধুমাত্র নবম এবং দশমের এর জন্য হলফনামা ৷ গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি সংক্রান্ত হলফনামা কোথায় ? এসএসসি-র বাছাই কমিটি থাকা সত্ত্বেও নিয়োগে কেন অনিয়ম ?" উত্তরে স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী ড. সুতনু পাত্র বলেন, "হ্যাঁ, নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম রয়েছে । আমরা হাইকোর্টের নির্দেশের পর গ্রুপ ডি ও গ্রুপ সি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছি । বেশ কিছু বৈষম্য পেয়েছি, যেটা আমরা আদালতে জমা দিয়েছি ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘নবম-দশমের ক্ষেত্রে 183 জনের সুপারিশপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে গলদ ছিল । তাদের মধ্যে 122 জনের সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে । গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র ক্ষেত্রে সুপারিশ পত্র প্রত্যাহার করার কোনও বিধি কমিশনের আইনে নেই ।"

এর পর বিচারপতি দেবাংশু বসাক বলেন, "এসএসসি কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছে, আদালত লক্ষ্য করেছে । এসএসসি প্রাপ্ত ডেটা নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে ? 2011 ও 2012 সালের নিয়োগ নিয়ে এসএসসি-র সিদ্ধান্ত কী ? এসএসসি দেখছি অন্যদের মতোই । এসএসসি সব লুকানোর চেষ্টা করছে । সিবিআইয়ের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে 61 জনের সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করেননি কেন ? আদালত বারণ করেছিল ? সুপ্রিম কোর্টের কোনও স্থগিতাদেশ আছে ? হাইকোর্টের কোনও স্থগিতাদেশ আছে ?’’

বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘এই 61 জনের রাজ্যের বেতন ভোগ করার কোনও অধিকার নেই । কমিশন প্রথম থেকেই বলেছে যে তারা সিবিআই-এর তথ্য গ্রহণ করছে এবং সেই তথ্যকে বিশ্বাস করছে । যদিও তারা বলেছে নথির গ্রহণযোগ্যতা আদালতের দ্বারা বিচার্য হবে ৷’’ কমিশনের আইনজীবী তখন বলেন, "2011 ও 2012 সালে নিয়োগ নিয়ে আদালতের কোনও বাতিলের নির্দেশিকা নেই । কমিশনের চেয়ারম্যান আশঙ্কা করছেন যে এটা করলে তিনি আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হবেন ।"

বিচারপতি বসাক বলেন, "যদি আপনি দশজনের সুপারিশ করেন, কিন্তু অন্য দশজন নিয়োগ পান, তাহলে আপনাকে বেআইনি নিয়োগের জন্য সিবিআই-তে যেতে হবে না ?" এর পর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে বিচারপতি জানতে চান, "সুপারিশ পাওয়ার পরে আপনি নিয়োগ দিয়েছেন ?" বোর্ডের আইনজীবী অবশ্য জানান, হ্যাঁ তাঁরা সুপারিশের ভিত্তিতেই চাকরি দিয়েছেন ।

আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য চাকরি প্রার্থীদের হয়ে আবারও বলেন, "যাঁরা যোগ্য, তাঁদের চাকরি চলে যাক সেটা আমরা চাই না । তাঁরা চাকরি করুক ৷ কিন্তু অযোগ্যরা যেন চাকরিতে না থাকেন । আদালত ভালো করে সবার বক্তব্য শুনুক ।" 20 ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানি হবে এই মামলার ৷

আরও পড়ুন:

  1. নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় 9 জানুয়ারির মধ্যে তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবে সিবিআই, নির্দেশ হাইকোর্টের
  2. নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে স্কুল সার্ভিস কমিশন, একাধিক বিষয়ে তথ্য তলব
  3. প্রাথমিকের টেট মামলায় ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্তাকে গ্রেফতার করল সিবিআই
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.