কলকাতা, 13 জুন: পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করল না কলকাতা হাইকোর্ট ৷ গত 8 জুন নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, সেটাই বহাল রেখেছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ৷ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, মনোনয়ন জমার সময়সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ৷ অনলাইন মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে কি না সেই নিয়েও কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট ।
মঙ্গলবার পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত মামলার রায়দানের সময় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে কমিশনকে ৷ সমস্ত পোলিং স্টেশনে সিসিটিভি লাগাতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত ৷ যেখানে সেটা সম্ভব নয় সেখানে ভিডিয়োগ্রাফি করতে বলা হয়েছে ৷
এছাড়াও আদালত বলেছে, চুক্তিভিত্তিক কর্মী এবং এনসিসি-র ছেলেদের চতুর্থ পোলিং অফিসার হিসাবে ভোটের কাজে লাগাতে পারে রাজ্য সরকার । তবে প্রাক্তন বিচারপতিকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে ভোট করানোর যে আবেদন বিরোধীরা জানিয়েছিল, এ দিন তা খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট ৷
কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার ব্যাপারে যে আবেদন করেছিলেন মামলাকারীরা সে প্রসঙ্গে আদালত বলেছে, পৌর নির্বাচনে যে হিংসার ঘটনা ঘটেছিল তা যেন না ঘটে । 7টি স্পর্শকাতর জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷ প্রয়োজন মতো বাহিনী কমিশন চেয়ে নেবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট ।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটের দিন পিছোতে চাইছে হাইকোর্ট, রাজ্যের অনুমতি ছাড়া সম্ভব নয় বলে জানাল কমিশন
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন পরিবর্তন থেকে মনোনয়নের দিনক্ষণ বৃদ্ধি ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিল বিরোধীরা ৷ সেই মামলায় গতকাল রায়দান স্থগিত রেখেছিল আদালত ৷ মঙ্গলবার এজলাসে বসে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম জানান, আজই এই মামলার রায়দান হবে ।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে গত 9 জুন এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়, রাজ্যের প্রায় 73 হাজারেরও বেশি আসনে আগামী 8 জুলাই এক দফায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে । তার জন্য 9 জুন বেলা 11 টা থেকে 15 জুন পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা । রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য বিজেপি ও কংগ্রেস । পরে বাম শিবিরের আইনজীবী ও সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চও হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ।
মূল দাবি ছিল, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা করার জন্য যে সময় দেওয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় । পাশাপাশি বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার ব্যাবস্থা না করা হলে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে দাবি করেন মামলাকারীরা । প্রাথমিক ভাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন আদালতকে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনক্ষণ একদিন বাড়াতে সম্মত হয় তারা । আদালতকে সেই প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে ।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল সারাদিন শুনানিতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা যে পর্যাপ্ত নয়, তা স্পষ্ট জানায়। পাশাপাশি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা যায় কি না, কমিশনকে সে কথা বার বার ভেবে দেখতে বলা হয় । তবে কমিশনের তরফে মনোনয়নের সময়সীমা বাড়ানো গেলেও নির্বাচনের দিনক্ষণ পরিবর্তন করা সম্ভব নয় বলে এদিন জানিয়েছে আদালতে ।