কলকাতা, 4 এপ্রিল: নাবালক অভিযুক্তদের জন্য বিশেষ নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের । ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার নির্দেশ দেন, শিশু সুরক্ষা আইন মেনে যদি কোনও অপরাধের সাজা সাত বছরের নীচে হয় ৷ সেই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকায় নাবালক ও নাবালিকাদের বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর দায়ের করা যাবে না । সেক্ষেত্রে তাদের অপরাধ সম্পর্কে অভিভাবকদের অবহিত করতে হবে । বিষয়টিকে বাস্তবায়িত করার জন্য রাজ্য সরকার মনে করলে গাইডলাইনও প্রকাশ করতে পারে ৷ সেই নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট । এই আইনের প্রকৃত বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য প্রশাসনকেই সকলকে অবহিত করতে বলা হয়েছে । এই আইন বাস্তবায়নের জন্য পুলিশকে প্রশাসন ও মানুষের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে ।
প্রসঙ্গত, 2020 সালের 29 অক্টোবর বীরভূমের মল্লারপুরে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় এক নাবালকের । তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ দায়ের হয়েছিল । ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ । পরবর্তীকালে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় ওই নাবালকের । কলকাতা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে ।
এদিন সেই মামলার শুনানি চলাকালীন আবেদনকারীর আইনজীবী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্য পুলিশ প্রশাসন কোনওভাবেই জুভেনাইল জাস্টিস আইন মানছে না । এই আইনে পরিষ্কার বলা আছে নাবালক বা নাবালিকা যদি কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং সেই অপরাধের সাজা যদি সাত বছরের নীচে হয়, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা যায় না । তাকে গ্রেফতার করা যায় না । পুলিশ প্রশাসনের কাজ হবে তার অভিভাবককে ডেকে বিষয়টি জানানো । কিন্তু নাবালক বা নাবালিকাদের ক্ষেত্রে যদি কোনও অপরাধের সাজা 7 বছরের উপরে হয় সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার বিধান আছে ।
আইনজীবী আরও বলেন, "মল্লারপুরের এই নাবালকের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ যা সম্পূর্ণভাবে আইনবিরুদ্ধ ।" ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে জানতে চান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ৷ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধেই বা কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৷
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে একজনকে অস্থায়ী চাকরি দেওয়া হয়েছে । ক্ষতিপূরণের বিষয় আমরা আদালতের উপর ছাড়ছি । ওই থানার পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । পুলিশ অফিসারদের এক বছরের বেতন পরিকাঠামো বৃদ্ধি রোধ করা হয়েছে । ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে জানান, মৃত ছেলেটির পরিবারকে 15 লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য করতে হবে 15 দিনের মধ্যে । পাশাপাশি রাজ্যকে শিশু সুরক্ষা আইন মেনে কাজ করতে হবে ।
আরও পড়ুন: গ্রন্থাগারগুলিতে কোন সংবাদপত্র থাকবে, কর্তৃপক্ষকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের