কলকাতা, 5 জুন: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন। নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়লেন 20 জন শিক্ষক। এঁদের প্রত্যেককে নোটিশ পাঠানোর নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়।
2016 সালে নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে ভৌত বিজ্ঞান, বাংলা, ভূগোল, ইংরাজি, এডুকেশন-সহ একাধিক বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়। 2018 সালের জুন মাসে নিয়োগ হয়। যে নিয়োগ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে কলকাতা হাইকোর্টে। 2016 সালের এসএলএসটি পরীক্ষায় স্বাগতা বিশ্বাস, বিশ্বজিৎ দেবনাথ, মৌসুমী মন্ডল-সহ মোট 12 জন অভিযোগ করেছেন, যে তাঁদের থেকে প্রাপ্ত নম্বর কম পেয়েও এবং মেধা তালিকার নিচের দিকে থাকা সত্ত্বেও নিয়োগপত্র নিয়ে বহাল তবিয়তে শিক্ষকতার চাকরি করছেন বেশ কিছু প্রার্থী। তাঁদের আরও অভিযোগ, প্রাপ্ত নম্বর তাঁদের বেশি থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাঁদের ৷ পাশাপাশি এই বিষয়ে শিক্ষা দফতর, স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে অভিযোগ করা সত্ত্বেও স্কুল সার্ভিস কমিশন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলেও অভিযোগ।
অবশেষে নিরুপায় হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা। এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে গত 23 ফেব্রুয়ারি মামলাকারীদের আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী আদালতে জানান, বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই ধরনের মামলায় রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশ দেন যাদের প্রাপ্ত নম্বর বেশি, তাঁদের নিয়োগ করতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন কম নম্বর প্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়োগ বাতিল করে ৷ শুধু তাই নয়, যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও তৎপর হয়ে এসএসসি তাদের ভুল আদালতের সামনে স্বীকার করেও নিয়েছিল ৷ কিন্তু এই প্রার্থীদের বিষয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, যা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: বাইরন বিশ্বাসের বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে হাইকোর্টে দায়ের মামলা
এদিন মামলার শুনানিতে বিশ্বজিৎ দেবনাথ, মৌসুমী মণ্ডল, স্বাগতা বিশ্বাস-সহ 12 জন মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, একজন প্রার্থীর মোট প্রাপ্ত নম্বর 70 হওয়া সত্ত্বেও চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অথচ 67.33 নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় নীচের দিকে থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে শিক্ষকতার চাকরি করছেন ৷ এই রকম ঘটনাই ঘটেছে বলে দাবি আইনজীবীর। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর এদিন বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায় মোট ছ'টি মামলায় যাদের ক্রম তালিকা নীচের দিকে এবং প্রাপ্ত নম্বর মামলাকারীদের থেকেও কম, অথচ শিক্ষক হিসেবে কর্মরত তাঁদের এই মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন ৷ পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেরকম 20 জনকে নোটিশ জারি করারও নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী 30 জুনের মধ্যে তাদের হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় তারা কম নম্বর পেয়েও চাকরি করছেন। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী 18 জুলাই।