কলকাতা, 15 ডিসেম্বর: লালন শেখের রহস্যমৃত্যুর (Lalan Death Case) ঘটনায় 19 ডিসেম্বরের মধ্যে সিবিআইকে (CBI) বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা করার আদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ।
এদিন লালন শেখের পরিবারের তরফে আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গতকাল সিঙ্গল বেঞ্চে সিবিআইয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে সিআইডি (CID) তদন্তের উপরেই আস্থাজ্ঞাপন করেছে আদালত । ইতিমধ্যে এফআইআর (FIR) করা হয়েছে । কিন্তু এই তদন্তের উপর আমরা ভরসা রাখতে পারছি না । তাই হাইকোর্টের কোনও বিচারপতিকে দিয়ে এর তদন্ত করানো হোক । বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাই ।’’
ওই আইনজীবী আরও বলেন, ‘‘2002-এর সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) রায়ে নিদর্শন আছে হাইকোর্টের কর্মরত কোনও বিচারপতিকে বিচারবিভাগীয় তদন্তে নিযুক্ত করা যায় । এই রায়ে বলা আছে কোনও ঘটনায় যদি রাজনৈতিক রং থাকে সেক্ষেত্রে নিযুক্ত করা যায় । সিবিআই কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থা । অপরদিকে রাজ্য তদন্ত করবে । এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ হিসাবে বিচারবিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘নিয়মানুযায়ী ওই জায়গায় সিসিটিভি লাগানোর কথা । এক্ষেত্রে সিবিআই ক্যাম্পে কোনও সিসিটিভি ছিল না । নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে (NHRC) ইনফর্ম করা হয়নি । বগটুই, কয়লা এবং গরুপাচার তিনটি ঘটনার একটার সঙ্গে অপরটা সম্পর্ক রয়েছে । বিভিন্ন রায়ে নিদর্শন আছে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে কোনও বিভেদ তৈরি হলে সেক্ষেত্রে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ আছে ।’’
অন্যদিকে আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী সিবিআইয়ের তরফে বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক । আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে । তারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন । অভিযুক্ত লালন শেখের প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে । একক বেঞ্চ পরিবারকে সংযুক্ত করতে বলেছে । সেই মামলার শুনানি আছে 21 ডিসেম্বর ।’’
সিবিআইয়ের আইনজীবী আরও বলেন, ‘‘সকাল 11টায় সে সুস্থ ছিল । বেলা সাড়ে তিনটের সময় বাথরুমে যায় । সেখানেই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে । কিন্তু 302-এর মামলা রুজু হয়েছে ৷ যেটা ঠিক নয় । এই এফআইআর-এর কোনও ভিত্তি নেই । এটা পুরো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ।’’
এদিকে রাজ্যের আইনজীবী সম্রাট সেন বলেন, ‘‘কর্মরত বিচারপতিকে নিয়ে তদন্ত করানোর বিষয়ে কিছু বলল না । সিবিআই হেফাজতে একজনের মৃত্যু হল । সুপ্রিম কোর্টের ললিতা কুমারীর নির্দেশে পরিষ্কার বলা আছে, অভিযোগ পেলে তার তদন্ত করতে হবে । সেই কারণের জন্যই অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এফআইআর লজ করে তদন্ত শুরু করেছে । এই এফআইআর-এর তদন্তের সঙ্গে অন্য কোনও তদন্তের কোনও সম্পর্ক নেই । তাই সিবিআই যা তদন্ত করছে, সেটা তারা নিশ্চিন্তে করতে পারে । সিবিআইয়ের হেফাজতে যদি মৃত্যু হয়, তাহলে কে তার তদন্ত করবে ?’’
এরপর সিবিআই তরফে জানানো হয়, তাদের বিভাগীয় তদন্ত চলছে । দু’দিন সময় লাগবে সেই রিপোর্ট আদালতে জমা করতে ৷ সব পক্ষের বক্তব্যের পর প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে জানায়, 19 ডিসেম্বরের মধ্যে সিবিআইকে বিভাগীয় তদন্ত সংক্রান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা করতে হবে । মামলার পরবর্তী শুনানি 19 ডিসেম্বর ৷
আরও পড়ুন: 'আমার স্বামীর দেহের উপর অনেক অত্য়াচার হয়েছে, আর নয় !' বললেন লালনের স্ত্রী