কলকাতা, 23 নভেম্বর: চাকরিহারাদের পুনর্বহাল করতে অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরি করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (School Service Commission) ৷ কমিশনের এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কার হাত রয়েছে, তা জানতে সিবিআইকে (CBI) তদন্তের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly) ৷
তাঁর নির্দেশ, বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়া ব্যক্তি, যাঁদের আদালত চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে, তাঁদের চাকরিতে বহাল রেখে দিতে এই পদ তৈরির আবেদন কেন করা হয়েছে, তার তদন্ত করবে সিবিআই । এই আবেদনপত্র কোথায় তৈরি করা হয়েছে, তা খুঁজে বের করবে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো । সাতদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি । পাশাপাশি আগামিকাল সাড়ে 10টায় শিক্ষা সচিব মণীশ জৈনকে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, চাকরিহারাদের চাকরিতে যাতে পুনরায় বহাল করা হয়, এই সংক্রান্ত তিনটি আবেদন করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন । সুপার নিউমোরিক পোস্ট তৈরি করে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা । গত 27 সেপ্টেম্বর এই আবেদনপত্রগুলি দাখিল করে কমিশন । বুধবার সেই আবেদন প্রত্যাহারের অনুমতি চায় স্কুল সার্ভিস কমিশন ।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এদিন স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে এই আবেদন জানানো হয় । কিন্তু এতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি ৷ কমিশনের এই বক্তব্যের পরই তিনি তোপ দাগেন রাজ্যের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে । তিনি বলেন, "এই আবেদনগুলো বেনামী, তা আমি জানি ৷ আমি কিছু ‘দালাল’ যারা মুখপাত্র বলে পরিচিত এবং কিছু মন্ত্রীর নাম বলতে পারি, যাঁরা প্রকাশ্যে বলেছেন ‘কারো চাকরি যাবে না’ ৷"
এই নিয়ে বিচারপতি এদিন বলেন, ‘‘আপনাদের আবেদনে আপনারা লিখেছেন যে এই শিক্ষকরা (বাতিল হওয়া) 2 থেকে 4 বছর চাকরি করছেন এবং এদের বিরুদ্ধে কেউ কোনও অভিযোগ করেননি ।’’ কমিশনের আইনজীবীর উদ্দেশ্য তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘জানেন এই অভিযোগ জানানোর কোনও সংস্থান আছে কি না ? যদি না থাকে তাহলে কোথায় অভিযোগ জানানো হবে ? 1997 থেকে 2022 পর্যন্ত এই 25 বছরে কোনও এই ধরনের অভিযোগ কি কমিশন পেয়েছে ?’’
এর পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সংযোজন, ‘‘এই আবেদনগুলি ‘বেনামী’ আবেদন । কমিশনকে সামনে রেখে পিছন থেকে কেউ কেউ বিশ্বকাপ খেলছে ? আবেদনপত্রগুলির লেখা কি কমিশন লিখেছে ?’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি এই আবেদন কমিশন লেখেনি । কমিশনকে বাধ্য করা হয়েছে এই আবেদন দাখিল করার জন্য । আমার এই বিশ্বাসের পিছনে উপযুক্ত কারণও রয়েছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি কিছু ‘দালাল’ যাঁরা মুখপাত্র বলে পরিচিত এবং কিছু মন্ত্রীর নাম বলতে পারি যাঁরা প্রকাশ্যে বলেছেন ‘কারো চাকরি যাবে না’ । নাম না করে আদালতের সমালোচনা করা হচ্ছে । যাঁরা এই দুর্নীতির (Bengal Recruitment Scam) তার (স্ট্রিং) ধরে টানছেন, তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে ।’’
একই সঙ্গে বলেছেন, ‘‘অতিরিক্ত শূন্যপদের বিষয়টিও আমি দেখব । সেটা কারো গাত্রদাহের কারণ হতে পারে । কোনও বেআইনি নিয়োগ আদালতের বরদাস্ত করবে না । এটা কার মস্তিষ্ক প্রসূত ? কী উদ্দেশে এটা করা হচ্ছে ? অতিরিক্ত শূন্যপদের মাধ্যমে কোনও বেআইনি নিয়োগ হতে দেওয়া যাবে না । এটা বিপদজনক প্রবণতা । নির্লজ্জতার সাথে অবৈধ চাকরি প্রাপকদের রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে । আরও খতিয়ে না দেখে এই পর্যায়ে আবেদন প্রত্যাহারের অনুমতি দেওয়া সম্ভব না ।’’
এরপর দুপুর 3টের সময় এই আবেদনপত্রগুলি দাখিল করার সময় যে ফাইল তৈরি হয়েছিল, সেই ফাইল আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন বিচারপতি । ফাইল সমেত দুপুর 3টের সময় কমিশনের সচিবকে ও চেয়ারম্যানকে হাজিরার নির্দেশ দেন তিনি । পরে তিনি এই নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন: মানিক ভট্টাচার্যের মামলা এত হালকাভাবে নেওয়া উচিত হয়নি, সিবিআই-কে বললেন ক্ষুব্ধ বিচারপতি