কলকাতা, 6 সেপ্টেম্বর : হাইকোর্টে বড় স্বস্তি শুভেন্দু অধিকারীর ৷ নিরাপত্তারক্ষী খুনের মামলায় গ্রেফতার করা যাবে না বিরোধী দলনেতাকে । তবে তাঁকে তদন্তে সহযোগিতা করতে ডাকতে পারবে পুলিশ । এমনই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট । বিচারপতি রাজাশেখর মানথা আজ এই নির্দেশ দিয়েছেন ।
শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি এফআইআর ছিল । তার মধ্যে কাঁথি থানায় 2018 সালে তাঁর দেহরক্ষী রহস্যমৃত্যু মামলা এবং মানিকতলা থানায় বেআইনিভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে ঘুষ নেওয়ার মামলা রয়েছে । এই দু‘টি মামলায় পুলিশ যেমন তদন্ত করছে তা করতে পারবে ৷ তবে তার বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নিতে পারবে না পুলিশ ৷ অর্থাৎ গ্রেফতার করতে পারবে না । পাশাপাশি এই দু‘টি মামলায় শুভেন্দুকে যদি সাক্ষী হিসেবে ডাকতে হয়, তাহলে তাঁর সুবিধামতো সময়ে এবং সুবিধামতো জায়গায় পুলিশ তাঁকে ডাকতে পারে । এছাড়া বাকি তিনটি মামলায় তদন্ত প্রক্রিয়ার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট ।
বিচারপতি তাঁর নির্দেশে আরও জানিয়েছেন, শুভেন্দু অধিকারী একজন বিরোধী দলনেতা । তাঁর বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে যদি রাজ্য সরকার কোনও এফআইআর করে তাহলে সেই সমস্ত মামলায় আদালতের অনুমতি ছাড়া তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না । স্বভাবতই অত্যন্ত স্বস্তিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা । কলকাতা হাইকোর্টে শুভেন্দু মূল আবেদন ছিল, রাজনৈতিক দলবদলের পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পূরণ করার জন্য একের পর এক অভিযোগ করছে । রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা ছাড়া এই মামলার আর কোনও গুরুত্ব নেই । এবং এই সমস্ত মামলার তদন্ত রাজ্য পুলিশকে দিয়ে করলে তা পক্ষপাতমূলক হবে ৷ তাই এই সমস্ত মামলার সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন । পাশাপাশি দেহরক্ষীর মৃত্যু মামলায় আজ সকালে শুভেন্দুকে ভবানী ভবনে তলব করেছিল সিআইডি । সেই ব্যাপারে সকালেই তিনি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন ৷ তখন আদালত জানিয়েছিল, বেলা দু‘টোর সময় মামলা যেহেতু শুনানি রয়েছে তখন বিষয়টির শুনানি হবে । পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারীকে আপাতত সিআইডির সমনে সাড়া না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি ।
আরও পড়ুন : Dilip Ghosh : ভবানীপুরের উপনির্বাচন নিয়ে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিলীপের
মামলার শুনানিতে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, 2018 সালের 14 অক্টোবর শুভেন্দু অধিকারীর প্রাক্তন দেহরক্ষী কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা গিয়েছিলেন ৷ এনআরএস-এ তাঁর যে পোস্টমর্টেম করা হয়েছিল সেখানে পরিষ্কার বলা ছিল, বিষয়টি আত্মহত্যা । সেই মামলায় চলতি বছরের 19 জুলাই মৃত দেহরক্ষীর স্ত্রী কাঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন । এই বিষয়ে বিচারপতি বলেন, ‘‘রহস্য মৃত্যু বা আত্মহত্যার মামলায় পুলিশ চাইলে তদন্ত হতেই পারে । কিন্তু তিন বছর পর কি এমন ঘটল যে ওনার স্ত্রী এখন মৃত্যুর তদন্ত চাইছেন ?’’
বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘গ্রেফতার কখনওই হেনস্থার হাতিয়ার হতে পারে না । তিন বছর পর ওই মহিলার হঠাৎ অভিযোগ স্বাভাবিক লাগছে না আদালতের ।’’ এরপরই বিচারপতি নির্দেশ দেন এই মামলায় শুভেন্দুকে গ্রেফতার করতে পারবে না পুলিশ ৷ তবে তদন্ত করতে পারে । তদন্তে আদালত বাধা দিচ্ছে না ৷ কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী একজন সম্মানীয় নেতা, তাঁকে সুবিধামত সময়ে পুলিশ ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে ।
এই রায় শোনার পর শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী বিল্লাদল ভট্টাচার্য বলেন, "আদালত পরিষ্কার জানিয়েছে আগামীতে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে যত এফআইআর দায়ের হবে সেখানে তাঁকে গ্রেফতার করার প্রয়োজন মনে করলে রাজ্য পুলিশকে আগে আদালতের সম্মতি নিতে হবে ।"
আরও পড়ুন : Abhishek Banerjee : কয়লা কাণ্ডে দিল্লির ইডি দফতরে অভিষেক