কলকাতা, 9 জুন: পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন যে সময় দিয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছে কলকাতা হাইকোর্ট । প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের মতে, কমিশনের মনোভাবে কোথাও তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে । মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া থেকে শুরু করে ভোটের পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত ।
এছাড়াও ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে । কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যাপারে রাজ্যের কী বক্তব্য তা জানাতে হবে । রাজ্য পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারবে কি না, তাও জানাতে হবে আদালতকে । এ ছাড়াও নির্বাচনের কাজে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ব্যবহার করা হবে কি না, তাও কমিশনকে স্পষ্ট করতে বলেছে হাইকোর্ট ৷ এই সমস্ত ব্যাপারে আগামী সোমবার 12 জুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে রিপোর্ট দিতে হবে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে । পাশাপাশি, অনলাইনে মনোনয়ন পেশের ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে বিষয়টিও কমিশনকে খতিয়ে দেখতে বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট ৷
শুক্রবারের শুনানির সওয়াল-জবাবে কী কী বিষয় উঠে এসেছে তা দেখে নেওয়া যাক একনজরে...
এ দিন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেন, "মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা অত্যন্ত কম দেওয়া হয়েছে ৷"
জবাবে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর হাইকোর্ট সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে কি না সেটা আগে বিচার্য ।"
যদিও মনোনয়ন জমা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজেপির আইনজীবী বলেন, "নিরাপত্তা এবং মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য যে সময় দেওয়া হয়েছে সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন আমরা । মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হোক । পাশাপাশি মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক ।"
আরও পড়ুন: 8 জুলাই এক দফাতেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন, মনোনয়ন পেশ শুক্রবার থেকেই
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জিষ্ণু সাহা বলেন, "24 এপ্রিল 2023-এ বিজেপির তরফে নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল । ফলে তারা এই নির্বাচনের বিষয়ে জানতেন না তা নয় । মনোনয়নের সময়সীমা বাড়াতে হলে সে ব্যাপারে সোমবারের আগে কিছু বলা সম্ভব নয় ।"
এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, "এখন বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে পর্যন্ত সিসিটিভি লাগানো হয় । সমস্ত কিছুর ভিডিয়োগ্রাফি করা হয় ।"
তখন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "2018 সালে নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল । সুপ্রিম কোর্ট জানায় নির্বাচন করতে সমস্যা নেই । কিন্তু ফলাফল ঘোষণা করা যাবে না ।"
এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী বলেন, "আমরা বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করিনি । আমরা কিছু মডিফিকেশন দাবি করেছি । আজ রানিনগরে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে । শাসক দলের গুন্ডাবাহিনীর জন্য । আমরা এই কারণেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি ।"
এই কথা শোনার পর প্রধান বিচারপতি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেন, "মনোনয়ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয় । সে জন্যই বিরোধীরা দাবি জানাচ্ছে যে ই-ফাইলিং হলে বিষয়টি সহজ হয় ।"
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ বিজেপি-কংগ্রেস, শুনানি আজ
যদিও এ ব্যাপারে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, "সংসদের নির্বাচনেও তার অনুমতি দেওয়া হয় না ।"
এ কথা শুনে প্রধান বিচারপতি কল্যাণের উদ্দেশে বলেন, "আপনারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন না !" এ দিন বিরোধী দলের আইনজীবীরা আর্জি জানিয়েছেন যে, প্রার্থীরা যাতে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনার ও জেলাশাসককে । তাঁদের দাবি, কোনও একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির তত্ত্বাবধানে ত্রিস্তরীয় নির্বাচন হোক । প্রত্যেক বুথে সিসিটিভির ব্যবস্থা করতে হবে । অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক ।