কলকাতা, 9 অগস্ট: অনিমেষ তেওয়ারি নামে এক ব্যক্তিকে বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়া সংক্রান্ত মামলায় সিআইডি-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ৷ সেই মামলায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা দফতরের তদন্ত প্রক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ বিচারপতি ৷ এই অবস্থায় কেন এই নিয়ে তিনি সিবিআইয়ের হাতে হস্তান্তরিত করবেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি বসু ৷ তাই ওই মামলায় ডিআইজি সিআইডি-কে আদালতে তলব করেছেন বিচারপতি ৷ আগামিকাল বৃহস্পতিবার সকাল 10টায় তাঁকে আদালতে হাজির হতে হবে ৷ তাঁকে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী আধিকারিকদেরও সঙ্গে আনতে হবে বলেও আদালত জানিয়েছে ৷
উল্লেখ্য, অনিমেষ তেওয়ারি নামে এক চাকরিপ্রার্থীকে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে মুর্শিদাবাদের একটি স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে । ঘটনাচক্রে দেখা যায় তাঁর বাবা যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সেই স্কুলেই তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়েছে ৷ ওই প্রধান শিক্ষকই ছেলেকে সেই স্কুলে নথি বিকৃত করে চাকরিতে নিয়োগ করেছেন বলেই অভিযোগ ।
এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয় ৷ সেই মামলার শুনানিতে গত ফেব্রুয়ারিতে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু নির্দেশ দিয়েছিলেন যে ডিআইজি সিআইডি স্বতঃস্ফূর্ত এফআইআর দায়ের করে এই মামলার তদন্ত করবে । মুর্শিদাবাদ জেলার ডিআইকে এফআইআর করতে বলা হয় । দু'সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে বলা হয় । পাশাপাশি অনিমেষ তেওয়ারির বেতন বন্ধ করে তিনি স্কুলেও ঢুকতে পারবেন না বলে নির্দেশে জানান বিচারপতি ।
আরও পড়ুন: আদালতের নির্দেশের পরেও চাকরি মেলেনি, হাইকোর্টের দ্বারস্থ 62 জন চাকরিপ্রার্থী
এই মামলায় এ দিন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু জানতে চান, ‘‘আজ কেন কোনও অফিসার নেই আদালতে ? রাজ্যের তরফে জানানো হয়, "গঙ্গারামপুরে একটি তদন্তের কাজে গিয়েছেন ।" ক্ষুব্ধ বিচারপতি বলেন, "সবাই এক সঙ্গে গিয়েছে ? কাল কোর্টে এসে আজ তাঁরা সবাই কোথায় গিয়েছেন জানাতে হবে সকলকে ।"
পাশাপাশি এই মামলায় রাজ্যকে বলা হয়েছিল যে প্রত্যেক জেলার ডিআইরা রিপোর্ট দিয়ে জানাবে যে তাঁদের জেলায় কোনও বেআইনি নিয়োগ হয়নি । এ ব্যাপারে রাজ্যকে হলফনামা দিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি । সেই নিয়ে এ দিনের শুনানিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে জানানো হয়, বিভিন্ন জেলা থেকে যে ডিআই-দের হলফনামা দিতে জানাতে বলা হয়েছিল, তার মধ্যে 24টি হলফনামা জমা পরেছে । সেখানে 36 জনের বিতর্কিত নিয়োগের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে । তার মধ্যে বোর্ড 18 জনের ক্ষেত্রে প্রকৃত সুপারিশ দেওয়া হয়েছে বলে খতিয়ে দেখে জানিয়েছে । 11 জনের কোনও নথি পাওয়া যাচ্ছে না । বাকিদের বিরুদ্ধে ব়্যাংক জাম্প করে নিয়োগের অভিযোগে মামলা চলছে ।
বিচারপতি বলেন, ‘‘এই জাল নিয়োগ পাওয়াদের বেতন কী করে দিচ্ছে ট্রেজারি ? আসল সংখ্যাটা আরও বেশি হতেই পারে । সেই সংখ্যা খুজে বের করতেই সিআইডি-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল । একটা চক্র কাজ করছে এর পিছনে । সেই চক্র খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ।’’
আরও পড়ুন: আদালতের নির্দেশ অমান্য, শিক্ষা দফতরকে 50 হাজার জরিমানা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের
এর পরই বিচারপতি সিআইডি-র প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার বিশ্বাস ভরসা সিআইডি-র উপর হারাচ্ছি । আমি রাজ্যের এজেন্সিকে ভরসা করেছিলাম । কিন্তু মোহভঙ্গ হচ্ছে । তাহলে এবার কেন নয় সিবিআই ? ডিআইজি সিআইডি-কে এসে তাঁর কাজের ব্যাখ্যা দিতে হবে ।’’
অন্যদিকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে জানানো হয়, মুর্শিদাবাদের ডিআই ও আরেক অফিসারকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি । আগামীকাল সকালে ফের শুনানি ।