কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর: দুর্গাপুজায় রাজ্য সরকারের অনুদান দেওয়ায় সম্মতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট । তবে গত বছরে হাইকোর্টের নির্দেশ মাথায় রেখে পুজায় কী ভাবে টাকা খরচ করতে হবে, তার 6টি গাইডলাইন দিল আদালত । হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে নির্দেশনামা আপলোড হলেই জানা যাবে কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (Calcutta High Court gives nod to TMC Government Durga Puja donation) । রাজ্যের 46 হাজার ক্লাবকে 60 হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । পাশাপাশি বিদ্যুতের বিলেও ছাড় দেওয়ার আশ্বাস দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এরপরই কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় । তাতেই প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিল ।
- 1 সেপ্টেম্বর তৃণমূল সরকারের দুর্গাপুজোয় অনুদান (Durga Puja Donation) দেওয়া নিয়ে নতুন জনস্বার্থ মামলায় প্রশ্ন রাখা হয়েছে রাজ্যের বাজেটে এই অনুদানের জন্য কোনও টাকা বরাদ্দ ছিল কি না ? যদি না থাকে কীভাবে সরকার এই টাকা বরাদ্দ করল ? 60 শতাংশ ছাড় বিদ্যুৎ পরিষেবায় দেওয়ার কথা পুজোয় ৷ সেই সুবিধা রাজ্যের সব ডমেস্টিক কানেকশন হোল্ডারকেও দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে মামলায় ।
- 2016 সালে রাজ্যে চালু হয়েছিল স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ৷ কিন্তু তাতে নার্সিংহোমগুলির কোটি কোটি টাকা বিল বাকি রয়েছে ৷ আর এই কার্ডে রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না ৷ সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন ৷ ফান্ড নেই বলে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে । আমফানের ক্ষতিপূরণের কোটি কোটি টাকা এখনও বাকি ৷ সরকার সেই টাকা দেয়নি । কন্ট্রাকচুয়ালে অনেক সরকারি পোস্ট টাকার অভাবে সরকার বন্ধ করেছে ৷ কিন্তু দুর্গাপুজোর অনুদান দিতে সরকারের টাকার অভাব হয় না ।
গত 8 সেপ্টেম্বর এ রাজ্য়ের বহু ক্লাবেরই দুর্গাপুজোর (Durga Puja) বাজেট কয়েক কোটি টাকা (Big Budget) ! তাহলে তাদের কেন সরকারি অনুদান দেওয়া হবে ? দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদান (Government Grant) সংক্রান্ত মামলায় এই প্রশ্ন তুললেন মামলাকারীরা ৷ বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের (Justice Prakash Shrivastava) বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে ৷ সেখানে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (Bikash Ranjan Bhattacharya) বলেন, আদতে কোন পুজো কমিটিগুলির টাকার প্রয়োজন আছে, তা খতিয়ে দেখা হোক ৷ এভাবে সবাইকে টাকা দেওয়া বন্ধ করা হোক ৷ শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছে আদালত ৷
আরও পড়ুন: দুর্গাপুজোর অনুদান নিয়ে ফের জনস্বার্থ মামলা দায়ের হাইকোর্টে
এরই প্রেক্ষিতে রাজ্যের অ্য়াডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংযোগ বৃদ্ধি করাই রাজ্য সরকারের প্রধান লক্ষ্য ৷ যা করা হচ্ছে, পুরোটাই জনস্বার্থে করা হচ্ছে ৷ রাজ্যের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও তার প্রচার করাই রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য ৷ রাজ্যের আরও যুক্তি, ইমাম ভাতার সঙ্গে দুর্গাপুজোর অনুদানকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না ৷ কারণ, ইমাম ভাতার সঙ্গে নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা জড়িত রয়েছেন ৷ যাঁরা মসজিদে কাজ করেন ৷ কিন্তু, দুর্গাপুজো একটি জাতির প্রধান ও সার্বিক উৎসব ৷
এরপর প্রধান বিচারপতি জানতে চান, অনুদানের টাকা যে সঠিক খাতে খরচ করা হচ্ছে, তার প্রমাণ কী ? জবাবে অ্য়াডভোকেট জেনারেল জানান, প্রত্যেক ক্লাবের কাছ থেকে খরচ সংক্রান্ত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে ৷ সেগুলি পুলিশ খতিয়ে দেখবে ৷ সব শেষে প্রধান বিচারপতি মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্রাচার্যের কাছ অনুদানের টাকা খরচের রূপরেখা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব চান ৷ বিকাশ জানান, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই ধরনের কাজ করে ৷ প্রয়োজনে তাদের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে ৷
হাইকোর্টের নির্দেশ
গত 6 সেপ্টেম্বর রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়েছিলেন, ক্লাব পিছু 60 হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে ৷ আদালত নির্দেশে পরিস্কার জানিয়েছে,
- গত বছর যে সমস্ত ক্লাব সময়মতো তাদের টাকা খরচের হিসাব দিয়েছিল সরকারকে, শুধুমাত্র তাদেরই এই টাকা দেওয়া যাবে ।
- অনুদান দিতে হবে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের মাধ্যমে । তারাই নজর রাখবে এই অনুদান যথাযথ কাজে ব্যবহার হচ্ছে কি না ।
- রাজ্যর অ্যাডভোকেট জেনারেল 6 সেপ্টেম্বর যে যে কারণে খরচ করা হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন, সেই খাতেই যেন খরচ করা হয় ৷ রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলকে এ ব্যাপারে লক্ষ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । জেলার ক্ষেত্রে সাবডিভিশন অফিসার ও কলকাতার ক্ষেত্রে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিষয়টি দেখবেন ।
- 15 নভেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক পুজা কমিটিকে টাকা খরচের খতিয়ান জমা করতে হবে জেলাস্তরে নিযুক্ত অফিসার ও কলকাতা পুলিশের কাছে ।
- রাজ্য নিযুক্ত উপযুক্ত অফিসার ক্লাবগুলোর দেওয়া খরচের হিসাব খতিয়ে দেখবেন, অনুদানের টাকা যথাযথ খাতে খরচ করা হয়েছে কি না ।
আরও পড়ুন: যাদের পুজোর বাজেট কোটি টাকা, তাদের অনুদান কেন ! হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে রাজ্য