কলকাতা, 20 জুন: সংগীতশিল্পী কেকে-র মৃত্যুতে (KK Demise Case) রাজ্য সরকারের কাছে হলফনামা (Affidavit) চাইল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) ৷ এর জন্য রাজ্যকে তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছে আদালত ৷ সংশ্লিষ্ট জনস্বার্থ মামলাগুলির (PIL) পরবর্তী শুনানি হবে চার সপ্তাহ পর ৷ যদিও এই মামলার প্রসঙ্গিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (Advocate General Soumendranath Mukherjee) ৷
সম্প্রতি কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন কেকে ৷ পরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর ৷ এই ঘটনার জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজকদেরই পরবর্তীতে কাঠগড়ায় তোলা হয় ৷ নানা মহলের তোপের মুখে পড়তে হয় গুরুদাস কলেজ কর্তৃপক্ষকে ৷ যদিও রাজ্য সরকার ও রাজ্য়ের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বিষয়টিকে আমল দিতে নারাজ ৷ এরই মধ্যে গত শনিবার বরানগরের একটি কলেজের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কেকে-র অনুষ্ঠানে খরচের জোগান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় ৷
আরও পড়ুন: Saugata Roy: সৌগতর মন্তব্য়ে অস্বস্তিতে তৃণমূল, নতুন অস্ত্র হাতে পেলেন বিরোধীরা !
অন্যদিকে, কলকাতা হাইকোর্টে এই ইস্যুতে রুজু করা হয়েছে একাধিক জনস্বার্থ মামলা ৷ সোমবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব (Justice Prakash Srivastava) এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের (Justice Rajarshi Bharadwaj) ডিভিশন বেঞ্চে শুরু হয় শুনানি ৷ তারই প্রেক্ষিতে রাজ্যকে হলফনামা পেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷
সংশ্লিষ্ট জনস্বার্থ মামলাগুলিতে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রশ্ন তোলা হয়েছে ৷ যেমন, যে নজরুল মঞ্চে মেরেকেটে আড়াই হাজার দর্শক ঢুকতে পারেন, সেখানেই ঘটনার দিন প্রায় সাত হাজার লোক ঢোকানো হয়েছিল ! এই অনিয়ম ঘটল কীভাবে ? অনুষ্ঠান চলাকালীন বদ্ধ হলঘরের বাতানুকূল যন্ত্র ঠিক মতো কাজ করছিল না বলেও অভিযোগ উঠেছে ৷ সেই অভিযোগ সঠিক কি না, তাও তদন্ত করে দেখার আবেদন জানিয়েছেন মামলাকারীরা ৷ ভিড় সামলাতে কেন অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা ৷ তাছাড়া, এই অনুষ্ঠানের জন্য যে বিপুল খরচ হয়েছিল, তার জোগান কোথা থেকে কীভাবে হল ? সর্বোপরি, গুরুদাস কলেজে যেখানে কোনও ছাত্র সংসদই নেই, সেখানে ছাত্র সংসদের নামে এই অনুষ্ঠান হল কীভাবে ? এখানে কলেজ কর্তৃপক্ষেরই বা কী ভূমিকা ছিল ?
এমনই একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত (CBI Investigation) এবং ইডি তদন্তের (ED Investigation) দাবি তুলেছেন মামলাকারীরা ৷ তারই ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশ, আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশ করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে রাজ্য সরকারকে ৷ সেই হলফনামার উত্তর দিতে মামলাকারীদের আরও এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে ৷ ইতিমধ্যে গুরুদাস কলেজের সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংগঠনকেও মামলায় পার্টি করতে হবে ৷
যদিও এ দিন আদালতে এই জনস্বার্থ মামলাগুলির প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন অ্য়াডভোকেট জেনারেল ৷ তিনি বলেন, "কেকে-র মৃত্যুতে তাঁর পরিবার কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি ৷ কোনও এফআইআর হয়নি ৷"
মামলাকারীরা অবশ্য রাজ্যের এই যুক্তি মানতে নারাজ ৷ তাঁদেরই একজন সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, "30 লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে কেকে-র অনুষ্ঠানের জন্য ৷ এর ইডি তদন্ত হওয়া দরকার ৷ গত 31 মে ঘটনাটি ঘটেছে ৷ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ৷ উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম পঙ্কজ ঘোষ সংগঠনের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নেতা ৷ আমাদের প্রশ্ন, কোথা থেকে এত টাকা এল ? এই সংগঠনের সঙ্গে কলেজের ছাত্র সংসদের তো কোনও সম্পর্ক নেই ! তাহলে কি আমজনতার টাকায় এই ধরনের অনুষ্ঠান করা হচ্ছে ? 2013 সালের পর থেকে কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি ৷ এই বিষয়ে তাই বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে ৷"
মামলাকারীদের এই বক্তব্য শোনার পরই রাজ্যকে হলফনামা পেশের এবং এই মামলায় সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংগঠনকে যুক্ত করার নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ৷