কলকাতা, 29 অগস্ট: রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআইয়ের রিপোর্টে ফের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা । মঙ্গলবার মামলার শুনানিতে সিবিআইয়ের উদ্দেশ্যে বিচারপতি বলেন, "টাকাগুলো গেলো কোথায় ? খালি পঞ্চায়েত নির্বাচনের কয়েকটা দিন দাপাদাপি করে তারপর সব তদন্ত হয়ে গেল ?" এদিন কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, "আপনারা কী তদন্ত করেছেন, কিছু তো অন্তত দেখান ?"
এর জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য বলেন, "এখনও পর্যন্ত 126.7 কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ।" এরপর বিচারপতি সিনহা সিবিআই আইনজীবীর উদ্দেশ্যে ফের প্রশ্ন করেন,"এটা তো কোনও একজনের কাজ নয় । তারা কোথায় ? আপনারা তাদের ধরতে পারলেন না ?" জবাবে সিবিআই আইনজীবী জানান, "আমরা মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করতে পেরেছি ।" এরপরেও চলতে থাকে বিচারপতি অমৃতা সিনহা ও সিবিআই আইনজীবীর মধ্যে সওয়াল-জবাব পর্ব ৷
বিচারপতি সিনহা এদিন আরও মন্তব্য করেন, যোগ্য যে প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তারা তো দেখতে পাচ্ছেন না যে অযোগ্যদের সরিয়ে তাঁদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে । এর জবাবে সিবিআই আইনজীবী বলেন, "আমাদের কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার অধিকার নেই । আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারি, তদন্ত করতে পারি ।" এরপরেই বিচারপতি ইডির তদন্ত নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "ইডির অফিসারদের ক্যালাসনেসের জন্য তদন্তে দেরি হচ্ছে । হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চ কেন ইডির অযোগ্য অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতেও তদন্তকারী টিম থেকে বাদ দিতে নির্দেশ দিয়েছিল এখন বুঝতে পারছি ।"
এদিন আদালতে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, "2069 প্রার্থীকে বেআইনিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে । কারা সেই প্রার্থী? ইডি খুঁজে বের করতে পারেনি । ইডির রিপোর্ট থেকেই জানা যাচ্ছে প্রাথমিকে 350 কোটি টাকার মতো দুর্নীতি হয়েছে । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কোম্পানি ছিল যেখানে কর্মচারী ছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, যার মোবাইল ফোন থেকে একাধিক তথ্য পাওয়া গিয়েছে ।"
এরপর ইডিকে বিচারপতির প্রশ্ন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমন পাঠানোর পর জিজ্ঞসাবাদ করা হয়েছিল ?" ইডির আইনজীবী জানান, "হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চের নির্দেশ রয়েছে তার বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা যাবে না । পাশাপাশি আদালত মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাঁকে জিজ্ঞসাবাদ করা বা কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না । "
আরও পড়ুন: বধূ নির্যাতন মামলায় সরাসরি গ্রেফতার নয়, নির্দেশিকা কলকাতা হাইকোর্টের
এরপরেই বিচারপতি অমৃতা সিনহার মন্তব্য, তদন্ত তাই বলে কি স্থগিত থাকবে ? বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম ফের বলেন, "একটা সমনে স্থগিতাদেশ দেওয়া মানে আর নতুন সমন পাঠানো যাবে না তা তো নয় । এতবড় দুর্নীতিতে ইডি তদন্তেও গাফিলতি রয়েছে ।" এদিন সিবিআইয়ের তরফে হাইকোর্টে রিপোর্ট দিয়ে জানানো হয়, 96 জনের খোঁজ তারা পেয়েছে যাদের কোনও যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও চাকরিতে নিযুক্ত করা হয় । এই তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের হাতে তুলে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি । এরপর পর্ষদকেও এই নামগুলির ভিত্তিতে তাদের রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দিতে হবে ৷
পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ ও পুরনিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত এবার থেকে একই সিটের অফিসাররা করবেন । 26 অগস্ট সাইবার থানায় দায়ের হওয়া 577 নম্বর কেসের ব্যাপারেও রাজ্যকে আগামী শুনানিতে জানাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি । 14 সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি । আগের দিন শুনানিতে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই দুর্নীতিতে কারা সুবিধা পেয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে ৷ সেইমতো এদিন কয়েকজনের নামের তালিকা দিয়েছে সিবিআই । কিন্তু কাদের হাতে টাকা গিয়েছে সেই ব্যাপারে এখনও সিবিআই অন্ধকারে বলে জানান বিচারপতি । হাইকোর্ট এদিন নির্দেশ দিয়েছে, এই দুর্নীতি থেকে কারা সুবিধা পেয়েছেন তাদের নিয়ে রিপোর্ট পরবর্তী শুনানির দিন আদালতে জমা দিতে হবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিগুলিকে ৷