কলকাতা, 24 অগস্ট: 117 কোটি টাকা সাইবার প্রতারণা সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্ট থেকেই গ্রেফতার দু'জন। হাইকোর্টে মামলা দায়ের করতে এলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে বলে অভিযোগ। সিআইডি'র এই গ্রেফতারির ধরন দেখে চরম ক্ষুব্ধ হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।
সাইবার অপরাধের মামলায় কুণাল গুপ্তা ও নন্দিনী গুপ্তা নামে দু'জনকে সকালে মামলা চলাকালীনই বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে ঢুকে গ্রেফতার করে সিআইডি। দুপুরে আদালত বসতেই বিচারপতির কাছে নালিশ জানান তাদের আইনজীবীরা। আর সিআইডি'র এই আচরণে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। জানা গিয়েছে, এরপরই তিনি জানতে চান, কার নির্দেশে সিআইডি এই কাজ করল ? রেজিস্ট্রার জেনারেলের অনুমতি নেওয়ার পাশাপাশি কোনও উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশ ছিল কি না, তাও জানতে চান বিচারপতি ৷ এরপরই, রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বিচারপতি ধৃতদের ও যে অফিসাররা ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন ৷
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, 117 কোটি টাকার সাইবার মামলায় এই দু'জনকে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডেকেছে। সিআইডিও তদন্ত করছে। সেই নিয়ে এদিন সকালে মামলা হয় বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে। বিচারপতি শুক্রবার বিষয়টি শুনবেন বলে জানান । আর তার মধ্যেই হাইকোর্ট থেকে সিআইডি গ্রেফতার করে দুই অভিযুক্তকে ৷ এরপর বিচারপতির নির্দেশের পর আদালতের দ্বিতীয়ার্ধে সিআইডি'র পাঁচ অফিসার ও দুই ধৃতকে এজলাসে হাজির করানো হয়। সিআইডির তরফে এদিন জানানো হয়, হাইকোর্টের পশ্চিম গেটের সামনে থেকে এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতের ভিতর থেকে গ্রেফতার করা হয়নি ৷
যদিও ক্ষুব্ধ বিচারপতি বলেন, "আজ সকালে এই আদালতের নির্দেশে তারা হলফনামা জমা দেন। তারপর যদি অন্য এজেন্সি তাদের তুলে নিয়ে যায়, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। কেন রুল ইস্যু করব না? এত দিন সিআইডি কী করছিল? প্রধান বিচারপতি সঙ্গে আজই কথা বলব। না হলে এই প্রবণতা চলবেই। দরকারে এসওপি তৈরি করব।" সিআইডি অফিসারদের উদ্দ্যেশ্যে তিনি বলেন, "ইচ্ছে হলে গ্রেফতার করে রাখুন, ইচ্ছে হলে কাল গ্রেফতার করুন। যা খুশি করুন, কাল সকালে এই মামলায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেব। তারপরে যা বোঝার বুঝবেন।" এখানেই শেষ নয়, বিচারপতি আরও বলেন, "হাইকোর্টের নির্দেশে একজন হলফনামা সই করতে এলেন। আর সিআইডি হামলে পরে তাকে তুলে নিল। এই বিষয়টা যদি অনুমোদন করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ভয়ংকর ঘটনা ঘটবে।"
যদিও এর আগে বিচারপতি বলেন, "হাইকোর্টের ভিতর থেকে গ্রেফতার হলে আদালত তার নির্দেশ দিত। কিন্তু এটা কোর্টের বাইরে থেকে। তাই আদালত এটায় হস্তক্ষেপ করবে না। সিআইডি'র ওয়ারেন্ট ছিল, সেখানে কেন আইনি পদক্ষেপ ধৃতরা নেননি ?" রাজ্যের তরফে জানানো হয়, সাত হাজার বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতি আছে এদের বিরুদ্ধে। পৃথক মামলা হয়েছে। যদিও ধৃতদের আইনজীবীর পালটা প্রশ্ন, "কেন এতদিন গ্রেফতার করা হল না। আজ কোর্টের নির্দেশে তারা হলফনামা জমা দিতে এসেছিলেন। আর এখন থেকে সিআইডি গ্রেফতার করবে ? এটা কি মগের মুলুক চলছে?"
আরও পড়ুন: খেজুরিতে শুভেন্দুর সভা আটকানোর প্রচেষ্টা, রাজ্যকে ভর্ৎসনা হাইকোর্টের
এরপরই, বিচারপতি কার্যত সিআইডির এই গ্রেফতারের ধরন নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। আদালতের বক্তব্য, গ্রেফতারে আইনি বাধা নেই, কিন্তু যেভাবে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, সেটা মেনে নিলে যে যা খুশি করবে। এটা হতে পারে না। শুক্রবার সকালে ফের মামলার শুনানি।