কলকাতা, 10 এপ্রিল: রিষড়া, হাওড়া ও ইসলামপুরে রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে অশান্তির ঘটনায় রাজ্য মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ও কেন্দ্রের আইনজীবী অশোক চক্রবর্তীর । সোমবার এই ইস্যুতেই, ঘটনায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে তদন্ত করা জরুরি বলে সওয়াল করা হয় আদালতে । অন্যদিকে রাজ্যের দেওয়া রিপোর্টে অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট ৷ রাজ্যে এই ধরনের অশান্তির ঘটনা কেন বারবার ঘটছে, সেই প্রশ্ন তুলে এনআইএ তদন্তের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ ।
সোমবার রামনবমীর অশান্তিকে কেন্দ্র করে সওয়াল-জবাব শুরু হয়েছিল ৷ রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতে বলেন, "হনুমান জয়ন্তীতে তিন কোম্পানি সিআরপিএফ মোতায়েন করা হয়েছিল । পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ছিল । নতুন করে ঝামেলার সৃষ্টি হয়নি ।" এরপরেই বিরোধী দলনেতার আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী বলেন, "রামনবমীর ঘটনায় রাজ্যকে সম্পূর্ণ রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হোক । পেট্রল বোমা ছোড়া হয়েছিল । এনআইএ তদন্ত হোক । তদন্ত করে তারা রিপোর্ট দিক । কেন এখনও এনআইএ অ্যাক্ট যুক্ত করা হচ্ছে না মামলায় ?" সওয়াল তোলেন তিনি ৷ এরপরেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চান, এই ঘটনার পর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ৷ রামনবমীতে ঝামেলার উৎস কী ? কারা ঘটাচ্ছে ? কেন রামনবমীর সময় প্রত্যেক বছর 7-8টা করে অশান্তির ঘটনা ঘটছে ? নানা প্রশ্ন তোলা হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির তরফ থেকে । জানা গিয়েছে, সেই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় ডিভিশন বেঞ্চ ৷
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ বলেন, "প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে । সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছে । রাজ্য পুলিশ, কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠালে কেন্দ্রই সিদ্ধান্ত নেয় এনআইএ তদন্তের প্রয়োজন আছে কি না । এই মুহূর্তে এনআইএ তদন্তের প্রয়োজন নেই বলেই মনে হয় ।" তার সপক্ষে তিনি সুপ্রিমকোর্টের একাধিক নির্দেশ উল্লেখ করেন । এই বিষয়ে তিনি আরও বলেন, "ডালখোলায় বোম ছোড়া হয়েছিল, হাতে লাঠি ছিল । তরোবারি ছিল । কিন্তু ঘরবাড়ি ভাঙচুর বা জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা । ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার মত পরিস্থিতি সেখানে হয়নি ।"
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, "পেট্রল বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগ, মামলার প্রথমদিন থেকেই হাওড়া পুলিশের রিপোর্টে কোনও রকম উল্লেখই নেই !" মামলাকারীর তরফে আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী ফের বলেন, "আগে রাজ্যে লক্ষ্মীপুজো, রামনবমী সবই হতো শান্তিপূর্ণভাবে । কোনও গণ্ডগোল হত না । শেষে বেশ কয়েক বছর রাজ্যের পরিস্থিতির অবনতি কেন হল ?" এই বিষয়ে তিনি অভিযোগ করে বলেন, "এই ঘটনায় এনআইএ-অ্যাক্ট দেওয়া হচ্ছে না উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে । অফিসে বসে রিপোর্ট তৈরি করে দায় সারছে রাজ্য সরকার ।"
আরও পড়ুন: একই দিনে দ্বিতীয়বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য বোস, শুনতে হল গো-ব্যাক স্লোগান
অন্যদিকে আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় আগের দিনের মতই, এই ধরনের ঘটনা প্রশাসন বসে বসে দেখছে বলে উল্লেখ করেন । রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কঠোরভাবে উস্কানিমূলক মন্তব্য বন্ধ রাখার স্থায়ী নির্দেশ দিক আদালত, এমন দাবিও রাখেন তিনি । তাঁর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এ ব্যাপারে আদালত সতর্ক করে দিক নেতাদের ।" মামলার শুনানি শেষে রায়দান আপাতত স্থগিত রেখেছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ।