কলকাতা, 1 মে : কোরোনা মোকাবিলায় সারা দেশজুড়ে চলছে লকডাউন । বন্ধ কাজকর্ম ও ব্যবসা । বন্ধ রয়েছে গণপরিবহনও । যার জেরে আর্থিক অভাবের মধ্যে যেমন পড়েছেন দিন মজুররা ৷ তেমনই অসহায় অবস্থা বাস ও ট্যাক্সি চালকদেরও। তাই পরিবারের মুখে দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন তুলে দিতে অনেকেই বিকল্প রোজগারের পথ খুঁজে নিতে বাধ্য হচ্ছেন । গণপরিবহনের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ রাস্তায় বসে ফলমূল বিক্রি করছেন, সবজি বিক্রি করছেন, 100 দিনের কাজে যোগ দিয়েছেন, ইটভাটায় কাজ করছেন কিংবা ঠেলা নিয়ে রাস্তায় ছাতু বিক্রি করছেন। এবার ভাত জোটাতে ছাতু বিক্রি করছেন অ্যাপ ক্যাব চালক ৷
টালিগঞ্জের বাসিন্দা টুনটুন সাউ ৷ 2016 সালে ঋণ নিয়ে 'গতিধারা' প্রকল্পে একটি গাড়ি কিনেছিলেন । লকডাউনে বন্ধ গণপরিবহন ৷ এবার অভাবের তাড়নায় তিনি পথে পথে ছাতু বিক্রি করতে বাধ্য হলেন। তাঁর এক পরিচিতের থেকে একটি ঠেলা গাড়ি ধার করে সেখানেই কিছু অল্প টাকার ছাতু কিনে শুরু করেন ছাতু বিক্রির দোকান।
তিনি বলেন, " প্রায় দেড় মাসের উপর হতে চলল এই লকডাউন পরিস্থিতি। হাতে জমানো যা টাকা ছিল তাই দিয়ে প্রথম কতদিন চালিয়েছি । ছাতু বিক্রি করেও তেমন লাভ হচ্ছে না । কখনও 60 টাকা আবার কোনও দিন হয়তো 100 টাকার বিক্রি হচ্ছে । রাস্তায় লোকজন নেই, কে নেবে ছাতু ?" 7 জন সদস্য নিয়ে তাঁর সংসারে। একমাসের বেশি সময় ট্যাক্সি বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে । তার সঙ্গে দোসর মাথার উপর ঋণের বোঝা । তিনি বলেন , " আমার গাড়ির ঋণ এখনও শোধ হয়নি। যেই ফিন্যান্স সংস্থা থেকে আমি ঋণ নিয়েছি তাঁরা আমাকে ফোন ও SMS এর মাধ্যমে টাকা শোধ করার বিষয় বারবার তাগাদা দিচ্ছে । আমি তাঁদের আমার অবস্থার কথা বলা সত্ত্বেও তাঁরা আমাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে আমি টাকা দিতে দেরি করলে আমার গাড়ি নিয়ে নেওয়া হবে । তাই পরিবারের খাবার জোগান দেব না ঋণ শোধ করব । আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি । এইরকম চলতে থাকলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না ।"
ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটরদের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দোপাধ্যায় বলেন, "এঁরা সবাই দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমিক। এঁদের বেশিরভাগই খুব কষ্ট করে একটা একটা করে টাকা জমিয়ে ঋণ নয় গাড়ি কেনেন। একটানা এতগুলি দিন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আমরা সবাই চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়েছি । আমি যথা সম্ভব এঁদের টাকা ও খাবারদাবার দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমরাও আর এভাবে কতদিন টানতে পারব জানিনা ।"