কলকাতা, 3 জানুয়ারি: রাজ্যে এসে লোকসভা নির্বাচনের আগে সিএএ লাগু হওয়ার কথা ঘোষণা করে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । এরপর একই কথা শোনা যায় অপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মতুয়া নেতা শান্তনু ঠাকুরের গলায় । আজ অর্থাৎ বুধবার রাজ্যে এসে সেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়েই উদ্বাস্তুদের আবেগকে আরও একবার উসকে দিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি ।
তিনি বলেন, ‘‘লোকসভার নির্বাচনের আগেই লাগু হবে সিএএ ।’’ এ দিন তিনিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন কোনও একটি সম্প্রদায়কে ভয়-ভীত করার জন্য এই আইন লাগু হবে না । তাঁর কথায়, ‘‘তাই যদি হবে তাহলে আমরা সব সম্প্রদায়কে রেশন, সব সম্প্রদায়ের জন্য পরিষেবা দেওয়ার রাস্তায় হাঁটতাম না ।’’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার একটি সংবাদ সংস্থা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল, লোকসভা নির্বাচনের আগেই দেশের সিএএ লাগু হতে পারে । আর সেই খবরের পর এ দিন রাজ্যে এসে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর সিএএ নিয়ে প্রতিক্রিয়া নতুন করে রাজ্যে রাজনৈতিক তরজার পরিবেশ তৈরি করেছে । সংবাদ সংস্থার খবরের পর এ দিন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘আমি আগেই বলেছিলাম সিএএ লাগু হবে । কখনও বলিনি 24 সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই হবে । এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তার সময় অনুযায়ী সিএএ লাগু করবে । আমার আশা 24 এর আগেই তা লাগু হবে ।’’
বিজেপির এই বক্তব্যের পালটা জবাব দিতে দেরি করেনি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকার । কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, সিএএ নিয়ে দ্বিচারিতা করছে কেন্দ্রীয় সরকার । কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা রাজ্যে এককথা বলছেন, দিল্লিতে গিয়ে আরেক কথা বলছেন । শশী পাঁজা বলেন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিএএ বাংলায় লাগু হবে না । পশ্চিমবঙ্গে যারা বসবাস করছেন, তারা রেশন পাচ্ছেন, ভোট দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত রয়েছেন । তারা ইতিমধ্যেই দেশের নাগরিক ।’’
এ দিন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘আসলে সবটাই বিজেপির ভোট রাজনীতি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেছেনই আমরা সবাই নাগরিক । ধর্মের নামে বিভাজন করতে এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে । ভোট এলেই কেন্দ্রীয় সরকার এই কথাগুলো বলে । আমরা এই ধরনের বক্তব্যের ঘোর বিরোধী । যাঁদের ভোটার তালিকায় নাম আছে, আধার কার্ড আছে, যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁরা সবাই নাগরিক ।’’
একইভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও । তিনি বলেন, ‘‘সিএএ তো চালু আছেই । নতুন করে কী করবে বিজেপি ? আইন পাশ হওয়ার পর প্রায় কয়েক বছর হয়ে গেল । বিজেপি রুল তৈরি করতে পারেনি । রুল তৈরি করবে কখন ভোটের আগে । আর একবার মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সিএএ-র নামে আর একটা বিভাজনের গল্প ছাড়া কিছু হবে না । কোনও একটা বিশেষ ধর্মের জন্য আইন আনাটা সংবিধান বিরোধী । ভোট এলেই বিজেপি এই ধরনের কথা বলে ।’’
আরও পড়ুন: