কলকাতা, 7 এপ্রিল: তবে কি সমন্বয় শেষ, সংঘাত শুরু ! সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া রাজভবনের চিঠিকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে সরগরম রাজ্য রাজনীতি । অবশেষে এই নিয়ে মুখ খুললেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু । এদিন তিনি জানিয়ে দিলেন, রাজ্যপালের চিঠির কতটা আইনি সংস্থান আছে, সে বিষয়ে আইনি আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে । একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্যে সরাসরি সমন্বয়ে থেকে বেরিয়ে আরও একবার রাজভবনের সংঘাতের সুর প্রকাশ্যে এসেছে ।
এদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষা দফতর যতদূর জানে এর (রাজ্যপালের চিঠির) কোনও আইনি সংস্থান নেই । অর্থাৎ এই চিঠির কোনও আইনি ভিত্তি নেই । ইতিমধ্যেই শিক্ষা দফতর বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শ চেয়েছে । আশা করছি, এই আইনি উত্তর আমাদের কাছে চলে আসবে । এই চিঠি আইনি ছাড়াও, নৈতিকভাবে ঠিক নয় । মাননীয় রাজ্যপালকে বলব, তাঁর সম্মান রেখেই বলব, রাজভবন থেকে যে চিঠি গিয়েছে, তা যেন প্রত্যাহার করা হয় ।’’
শিক্ষামন্ত্রী মনে করছেন রাজভবনের এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনের গরিমা ক্ষুন্ন হবে । তাই তিনি রাজ্যপালকে এই বিষয়ে ভেবে দেখতে অনুরোধ করেছেন । তিনি বলেন, ‘‘রাজভবনের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক প্রতিযোগীর নয়, সহযোগীর । আমরা একত্রে ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই কাজ করব । এবং উচ্চ শিক্ষার প্রসারেই একসঙ্গে কাজ করব ।’’ এই নিয়ে অবশ্য এখনও রাজ্যপালের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি বলেই ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন ৷ দ্রুত এই নিয়ে কথা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন ৷ পাশাপাশি রাজ্যপালকে তাঁর বার্তা, ‘‘আমার মনে হয় উনি যা বলতে চান খোলসা করে বলতে পারেন । উনি যা করতে চান খোলসা করেই করতে পারেন । কিন্তু এই দুইয়ের মধ্যে একটা সঙ্গতি থাকা দরকার ।’’
আরও পড়ুন: উপাচার্যদের কাছে সাপ্তাহিক রিপোর্ট তলব আচার্যের, কী বলছে শিক্ষামহল ?
প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কেমন চলছে, তা নিয়ে এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে রিপোর্ট জমা দিতে হবে রাজভবনে । রাজভবনের তরফে বৃহস্পতিবার রাতে এমনই নির্দেশিকা জারি হয়েছে । তাতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক কাজকর্ম রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে উপাচার্যদের । আরও বলা হয়েছে, রাজভবনের সবুজ সংকেত ছাড়া কোনও আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না ।
এই নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ক্ষমতা বলে বিধানসভায় বিল পাস করে সমস্ত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার তথা স্বায়ত্তশাসনকে কেড়ে নিয়েছে । এই বিতর্কে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, আমরা টাকা দিচ্ছি আমরা নাক গলাবো না কেন ? আসলে সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল । এমনকি আচার্যের পদ মুখ্যমন্ত্রীকে পাইয়ে দেওয়ারও একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল । কিন্তু বর্তমানে তা সফল হয়নি ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আচার্যকে অন্ধকারে রেখে ইউজিসির গাইডলাইন না মেনে এতগুলো উপাচার্যকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল । কোর্টের নির্দেশে সেই সিদ্ধান্ত বড় ধাক্কা খেয়েছে । আগে সরাসরি উপাচার্যেরা আচার্যের কাছে পৌঁছতে পারতেন । এখন এর মাঝে বাধা হয়ে রয়েছে রাজ্যের সরকার । আর সেই কারণেই উপাচার্যদের বিভিন্ন কাজকর্মে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে । এক্ষেত্রে রাজ্যপাল কোনও এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করেননি । বরং তিনি তাঁর অধিকারের প্রয়োগ করেছেন ।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যপালকে নিয়মিত রিপোর্ট দিতে হবে উপাচার্যদের, নয়া নির্দেশিকা ঘিরে তৃণমূল-বিজেপি তরজা