ETV Bharat / state

"কাগজে কোনও স্ট্যাম্প ছাড়াই ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি, কীভাবে বিশ্বাস করব"

পরিবার নিয়ে কোথায় উঠবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন ও স্যাঁকরা পাড়া লেনের বাসিন্দারা ৷ তাঁদের প্রত্যেকেরই অভিযোগ, মেট্রো কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল  ৷

মেট্রো
author img

By

Published : Sep 3, 2019, 5:49 AM IST

কলকাতা, 3 সেপ্টেম্বর : বাড়িতে রয়ে গেছে বৃদ্ধ দাদু-ঠাকুমার ওষুধ ৷ বের করতে আনতে পারেনি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বোনের বই ৷ সঙ্গে রয়েছে বছর পাঁচেকের ভাই ৷ আর তাদের নিয়ে অথৈ জলে পড়েছে বছর 20-র প্রিয়াঙ্কা দত্ত ৷ পরিবার সহ হোটেলে উঠলেও দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে বেথুন কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রীর ৷

শনিবার বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন ও স্যাঁকরা পাড়া লেনের কয়েকটি বাড়িতে ফাটল দেখা যায় । শনিবার রাত থেকেই সেই বাড়িগুলির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়তে শুরু করে । ধসে পড়ে কয়েকটি বাড়ি । ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও অনেক । ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । জরুরি ভিত্তিতে খালি করে দেওয়া হয় বাড়িগুলি । অনেকেরই ঠাঁই হয় হোটেলে । এমনই একজন প্রিয়াঙ্কা ৷ রবিবার তাদের স্যাঁকরা পাড়া লেনের বাড়ির ভিতরে তিন ইঞ্চি ধসে গিয়েছিল ৷ গতকাল আরও পাঁচ ইঞ্চি জায়গা বসে গেছে ৷ ভেঙে গেছে বাড়ির ফ্লোর ৷ প্রাণভয়ে উঠতে হয়েছে হোটেলে ৷ তবে, সেখানেও ঠিকভাবে পরিষেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ প্রিয়াঙ্কার ৷ তার বক্তব্য, "আমাদের গাদা ঘরে ফেলে দেওয়া হয়েছে ৷ 15 জনকে তিনটি ঘরে রাখা হয়েছে ৷ তাহলে বুঝতেই পারছেন, কীভাবে থাকতে হচ্ছে ? " হোটেল থেকে যে খাবার দেওয়া হচ্ছে, তাও নিম্নমানের বলে অভিযোগ প্রিয়াঙ্কার ৷ সে বলে, "হোটেলের খাওয়া-দাওয়া ভালো নয় ৷ আমার ভাই-বোন খাবার খেতে পারছে না ৷ অসুস্থ হয়ে পড়েছে ৷ " বাড়িতে বৃদ্ধ দাদু-ঠাকুমা ছাড়া আর কেউ নেই ৷ অভিভাবক বলতে সেই একা ৷ অথচ মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ৷ তার বক্তব্য, "মেট্রো কর্তৃপক্ষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে ৷ সকালে একটা কাগজ দিয়েছে ৷ তাতে কোনও স্ট্যাম্প বা কিছু নেই ৷ তবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে লেখা আছে ৷ কিন্তু, সাদা কাগজে বিশ্বাস করে কীভাবে এগিয়ে যাই বলুন তো?"

Metro
এই সেই চিঠি

একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন স্যাঁকরা পাড়া লেনের রাধানাথ দেবনাথ ৷ বছর 76-র বৃদ্ধ জানান, শনিবার তাঁকে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ গতকাল বাড়ি ফেরার কথা ছিল ৷ কিন্তু, তার আগেই ধসে পড়েছে বাড়ি ৷ চাপা পড়েছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ৷ ওষুধপত্র বের করতে পারলেও একটা কাপড়েই দিন কাটছে রাধানাথবাবুর ৷ শুধু তাঁর নয়, এলাকার বেশিরভাগ মানুষকে দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়েছে ৷ সুনিপা রায় নামে স্থানীয় এক বাসিন্দারও ঠাঁই হয়েছে হোটেলে ৷ তাঁর ছেলে আগামী বছর উচ্চমাধ্যমিক দেবে ৷ কিন্তু, বাড়ি ভেঙে পড়ায় হারিয়ে গেছে ছেলের রেজিস্ট্রেশন, বইপত্র, স্কুলের ইউনিফর্মও ৷ ফলে স্কুলে যেতে পারছে না ছেলে ৷

Metro
এলাকাটি ঘিরে রেখেছে দমকল ও কলকাতা পুলিশ

তাঁদের প্রত্যেকেরই অভিযোগ, মেট্রো কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল ৷ আর এরই মধ্যে পরিবারকে নিয়ে কোথায় যাবেন এখন সেই প্রশ্নই তাড়া করছে এলাকার বাসিন্দাদের ৷

কলকাতা, 3 সেপ্টেম্বর : বাড়িতে রয়ে গেছে বৃদ্ধ দাদু-ঠাকুমার ওষুধ ৷ বের করতে আনতে পারেনি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বোনের বই ৷ সঙ্গে রয়েছে বছর পাঁচেকের ভাই ৷ আর তাদের নিয়ে অথৈ জলে পড়েছে বছর 20-র প্রিয়াঙ্কা দত্ত ৷ পরিবার সহ হোটেলে উঠলেও দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে বেথুন কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রীর ৷

শনিবার বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন ও স্যাঁকরা পাড়া লেনের কয়েকটি বাড়িতে ফাটল দেখা যায় । শনিবার রাত থেকেই সেই বাড়িগুলির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়তে শুরু করে । ধসে পড়ে কয়েকটি বাড়ি । ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও অনেক । ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । জরুরি ভিত্তিতে খালি করে দেওয়া হয় বাড়িগুলি । অনেকেরই ঠাঁই হয় হোটেলে । এমনই একজন প্রিয়াঙ্কা ৷ রবিবার তাদের স্যাঁকরা পাড়া লেনের বাড়ির ভিতরে তিন ইঞ্চি ধসে গিয়েছিল ৷ গতকাল আরও পাঁচ ইঞ্চি জায়গা বসে গেছে ৷ ভেঙে গেছে বাড়ির ফ্লোর ৷ প্রাণভয়ে উঠতে হয়েছে হোটেলে ৷ তবে, সেখানেও ঠিকভাবে পরিষেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ প্রিয়াঙ্কার ৷ তার বক্তব্য, "আমাদের গাদা ঘরে ফেলে দেওয়া হয়েছে ৷ 15 জনকে তিনটি ঘরে রাখা হয়েছে ৷ তাহলে বুঝতেই পারছেন, কীভাবে থাকতে হচ্ছে ? " হোটেল থেকে যে খাবার দেওয়া হচ্ছে, তাও নিম্নমানের বলে অভিযোগ প্রিয়াঙ্কার ৷ সে বলে, "হোটেলের খাওয়া-দাওয়া ভালো নয় ৷ আমার ভাই-বোন খাবার খেতে পারছে না ৷ অসুস্থ হয়ে পড়েছে ৷ " বাড়িতে বৃদ্ধ দাদু-ঠাকুমা ছাড়া আর কেউ নেই ৷ অভিভাবক বলতে সেই একা ৷ অথচ মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ৷ তার বক্তব্য, "মেট্রো কর্তৃপক্ষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে ৷ সকালে একটা কাগজ দিয়েছে ৷ তাতে কোনও স্ট্যাম্প বা কিছু নেই ৷ তবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে লেখা আছে ৷ কিন্তু, সাদা কাগজে বিশ্বাস করে কীভাবে এগিয়ে যাই বলুন তো?"

Metro
এই সেই চিঠি

একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন স্যাঁকরা পাড়া লেনের রাধানাথ দেবনাথ ৷ বছর 76-র বৃদ্ধ জানান, শনিবার তাঁকে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ গতকাল বাড়ি ফেরার কথা ছিল ৷ কিন্তু, তার আগেই ধসে পড়েছে বাড়ি ৷ চাপা পড়েছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ৷ ওষুধপত্র বের করতে পারলেও একটা কাপড়েই দিন কাটছে রাধানাথবাবুর ৷ শুধু তাঁর নয়, এলাকার বেশিরভাগ মানুষকে দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়েছে ৷ সুনিপা রায় নামে স্থানীয় এক বাসিন্দারও ঠাঁই হয়েছে হোটেলে ৷ তাঁর ছেলে আগামী বছর উচ্চমাধ্যমিক দেবে ৷ কিন্তু, বাড়ি ভেঙে পড়ায় হারিয়ে গেছে ছেলের রেজিস্ট্রেশন, বইপত্র, স্কুলের ইউনিফর্মও ৷ ফলে স্কুলে যেতে পারছে না ছেলে ৷

Metro
এলাকাটি ঘিরে রেখেছে দমকল ও কলকাতা পুলিশ

তাঁদের প্রত্যেকেরই অভিযোগ, মেট্রো কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল ৷ আর এরই মধ্যে পরিবারকে নিয়ে কোথায় যাবেন এখন সেই প্রশ্নই তাড়া করছে এলাকার বাসিন্দাদের ৷

Intro:76 বছরের বৃদ্ধ রাধানাথ দেবনাথ জানালেন সেদিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। একমাত্র মেয়ে উমা গুপ্ত কলকাতায় ছিলেন না। 30 তারিখ মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বৃদ্ধ রাধার দেবনাথকে বাড়ি থেকে সরে যেতে বলে। সেদিনই একটি হোটেলে রাধানাথ দেবনাথকে একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। এরপরই শনিবার দিন সকালে তাদের বাড়ির সদর দরজা ভেঙে পড়ে। বৃদ্ধ রাধানাথ দেবনাথ একাই সেই প্রহর কাটিয়েছেন। রাধানাথ দেবনাথ জানিয়েছেন সমস্ত কাগজপত্র টাকা-পয়সা এমনকি ওষুধ প্রেসক্রিপশনে রয়ে গেছে বাড়ির ভেতরে। বাধ্য হয়ে 30 তারিখ রাতে এক কাপড়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। গত তিন দিন ধরে এক কাপড়েই রয়েছেন। বাড়ির এই খবর পেয়ে রাধানাথ দেবনাথ এর একমাত্র মেয়ে উমাদেবী প্লেনে করে দার্জিলিং থেকে ছুটে এসেছেন।


Body:উমাদেবী জানিয়েছেন বাড়ির ভেতরে ঢোকার মতো অবস্থায় নেই। বাড়ির সদর দরজার ধ্বস নেবে ভেঙে পড়েছে। প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসপত্র বাড়ির ভেতর রয়েছে। কি হবে কোথায় যাবেন বুঝতে পারছেন না বৃদ্ধ অসহায় বাবাকে নিয়ে। মেট্রো কতৃপক্ষ সেই হোটেলে রেখেছে সেই হোটেল সম্পর্কেও ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এলো। তিনটি ঘরে 15 জন বাসিন্দাকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। সেই সঙ্গে খাবার নিম্নমানের হওয়াতে ইতিমধ্যে অনেকেই সে খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন। কুড়ি বছরের রিয়া বাড়ি ও ভাঙ্গা পড়েছে এই মেট্রো কাজের জন্য। শাখারী পাড়া লেনের বাসিন্দা রিয়া জানিয়েছে তার বোন এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কিন্তু পড়াশোনার কিছুই হচ্ছে না। জামা কাপড় বইপত্র সমস্ত জিনিসপত্র বাড়ির মধ্যে আটকা পড়েছে। বাড়িতে পুরুষ বলতে তেমন কেউ নেই বৃদ্ধ দাদু দিদা ও ছোট ভাই বোনদের একমাত্র সম্বল এখন এই কুড়ি বছরের কলেজ ছাত্রী।


Conclusion:পিয়া জানিয়েছে তাদের বাড়ি এলাকায় গোপাল বাড়ি নামে পরিচিত। 400 বছরের তাদের জাগ্রত গোপাল সেই ভগ্নস্তূপে আটকা পড়েছে। বৃদ্ধ দাদু দিদিমা ও ভাই বোনকে নিয়ে হোটেলে রয়েছে। না রয়েছে জামাকাপড় না রয়েছে ছোট ভাইবোনদের পড়াশুনোর বই খাতা। এমনকি বৃদ্ধ দাদু দিদিমার ওষুধটা পর্যন্ত ভগ্নস্তূপে পড়ে রয়েছে। রিয়া জানিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকবার আবেদন করা হয়েছে তাদের গৃহদেবতা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী বার করে নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাড়ির এত বিপদজনক অবস্থায় যে ভেতরে গিয়ে কোন জিনিস নেবার অনুমতি দেয়নি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। রিয়া জানিয়েছে বাড়ির একাংশ ধসে গেছে বাড়ির একাংশ মাটির নিচে প্রায় 3 ইঞ্চির বেশি নেমে গেছে। বৃদ্ধ দাদু দিদা ও ছোট ভাইবোনদের নিয়ে কোথায় যাবে এখন সেই প্রশ্নই তাড়া করছে বেথুন কলেজের এই ছাত্রীর। একি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বললেন হোটেলে আশ্রিত আর এক পরিবার। সুনিপা রায় জানিয়েছেন তার ছেলে এবছর উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী। বাড়ি ভেঙে পড়ার খবর প্রায় আকাশ ভেঙে পড়ার মত অবস্থা তৈরি হয়েছে। ছেলের বই খাতা এডমিট কার্ড সবই রয়েছে বাড়ির ভেতরে। ছেলের ইতিমধ্যে পড়াশুনার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বই-খাতা এডমিট কার্ড এমন কি স্কুলের ইউনিফর্ম তাও বাড়ির ভেতরে তাই ছেলে স্কুলে যেতে পারছেনা বেশ কয়েকটি পরীক্ষা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন সুনিপা রায়। এখন কত দিনে বাড়ি ঠিক হবে এবং কত দিনে বাড়ি ফিরতে পারবে সেই দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের।
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.