কলকাতা, 27 মার্চ: তিলজলার শিশুর খুনের (Tiljala Child Murder Case) পেছনে কী কারণ, তা জানতে ধৃতকে লাগাতার জেরা করছে পুলিশ ৷ এর পেছনে এখনও পর্যন্ত কোনও তান্ত্রিক যোগ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ সূত্র ৷ হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দাদের মতে, শিশুটিকে অপহরণ করে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে ৷ তার যৌন হেনস্থাও করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা ৷ এ দিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমুল বিক্ষোভের পর এখনও থমথমে হয়ে রয়েছে বন্ডেল গেট এলাকা ৷ ঘটনাস্থল দফায় দফায় পরিদর্শন করে বিশাল পুলিশ বাহিনী ৷
তিলজলায় সাত বছরের নাবালিকাকে হত্যার ঘটনায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় বন্ডেল গেট এলাকায় (Bondel Gate area)। যার জন্য প্রায় চার ঘণ্টা শিয়ালদা দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে । ঘটনাস্থলে যাব কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা । রেল পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা এবং শিয়ালদার জিআরপি-র তরফ থেকে বন্ডেল গেটের রেল লাইন এলাকা পরিদর্শন করেন পুলিশ কর্মীরা ।
তিলজলার ঘটনায় এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভের আগুনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বন্ডেল গেট এলাকা ৷ রেল লাইনের উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় । বিক্ষোভের জেরে দীর্ঘক্ষণ বন্ধ ছিল শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার ট্রেন চলাচল ৷ বিক্ষোভকারীদের দাবি, প্রতিবাদের ঘটনায় তিলজলার তিনজন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ তাঁদেরকে অবিলম্বে রেহাই দিতে হবে ৷ আর তা না হলে দফায় দফায় তাঁরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন । কিন্তু পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের অনুরোধে এ দিন দুপুর সাড়ে তিনটের কিছু পরে শিয়ালদা দক্ষিণ শাখায় ফেল রেল চলাচল এক প্রকার স্বাভাবিক হয় ।
সাত বছরের এক নাবালিকার গলাকাটা দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে রবিবার রাতেই উত্তাল হয়ে ওঠে তিলজলা থানা চত্বর । তদন্তে গাফিলতির অভিযোগকে সামনে রেখে এলাকার উত্তপ্ত জনতা থানায় ঢুকে ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ । গোটা ঘটনায় পরপর তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করে কলকাতা পুলিশ । থানায় ঢুকে হামলা চালানোর হুমকি, নাবালিকাকে অপহরণ করে খুন এবং পকসো ধারায় মামলা রুজু করে তিলজলা থানার পুলিশ ।
আরও পড়ুন: তিলজলার নাবালিকা খুনে রণক্ষেত্র বন্ডেল গেট, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন
ওই নাবালিকাকে অপহরণের আগে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের ৷ শিশুটির দেহ দেখে সে রকমই মনে হয়েছে হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দাদের । ফলে পকসো আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ । যদিও কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানানো হয়েছে যে, তিলজলা এলাকায় সাত বছরের নাবালিকাকে খুন এবং যৌন হেনস্থার ঘটনায় কোনও তান্ত্রিক যোগ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি । এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটের মালিক অলক কুমারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।
দেহটি দেখে হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুমান, ওই নাবালিকাকে অপহরণ করা হয়েছিল । পরে নাবালিকাকে যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটলেও ঘটতে পারে । এবং শেষে কোনও ভোঁতা ভারী বস্তু দিয়ে ওই নাবালিকার মাথা থেঁতলে দেওয়া হয় এবং দেহ লোপাটের জন্য কোনও ধারাল অস্ত্র দিয়ে ঠান্ডা মাথায় নাবালিকার গলা কাটা হয় ৷ এরপর সেই দেহটি একটি সুটকেসে রেখে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন যে, ওই নাবালিকার মাথায় সরু ধারালো কোনও বস্তু দিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত করা হয়েছে । প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের মনে হচ্ছে যে, স্ক্রু ড্রাইভার জাতীয় কোনও বস্তু দিয়ে ওই নাবালিকার মাথায় বেশ কয়েকবার ফুটো করা হয়েছে । যদিও এই ঘটনায় আর অন্য কেউ যুক্ত রয়েছে কি না, সে বিষয়ে জানার জন্য ধৃত অলক কুমারকে লাগাতার জেরা করছে পুলিশ ।