কলকাতা, 4 অগস্ট: বিধানসভায় দলের বিধায়কের কাজে অস্বস্তিতে পড়তে হল বঙ্গ বিজেপিকে ৷ শুক্রবার বিধানসভা চত্বরেই বিক্ষোভে বসে পড়েন কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক বিজেপির বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা ৷ গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে তিনি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ৷ সেই কারণেই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে বিজেপিকে ৷
বিধানসভায় এখন চলছে বাদল অধিবেশন ৷ সেই অধিবেশনে রোজই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রসকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ৷ শাসক দলও প্রধান বিরোধী দলকে সমালোচনায় বিদ্ধ করার সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ এরই মধ্যে দেখা যায় শুক্রবার বিধানসভা চত্বরে ধরনায় বসেছেন কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক বিজেপির বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা ৷
তিনি জানান, দিল্লিতে দার্জিলিং থেকে একাধিক সংগঠন গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, ধরনা প্রদর্শন করছেন গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ৷ ভবেশ ভূজেল নামে পাহাড়ের এক বাসিন্দা একই দাবিতে আমরণ অনশনে বসার জন্য জেলাশাসককে চিঠি লিখেছেন ৷ গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে যাঁরা সরব হচ্ছেন, তাঁদের পাশে থাকতেই এই ধরনা বলে জানিয়েছেন কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক ৷
আরও পড়ুন: বিধানসভায় বাংলাভাগের পক্ষে সওয়াল বিজেপি বিধায়কের, সমালোচনায় সরব তৃণমূল
তবে বিজেপির এই বিধায়কের বক্তব্য যে তিনি দলের পক্ষ থেকে ধরনায় বসেননি ৷ কিংবা দলের বিরুদ্ধে কোনও প্রশ্ন করছেন না ৷ বরং তিনি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্ন করছেন ৷ আর নিজেকে প্রশ্ন করছেন ৷
দার্জিলিং লোকসভা আসনে 2009 সাল থেকে জয় পাচ্ছে বিজেপি ৷ ওই বছর সেখানে সাংসদ হয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো যশবন্ত সিং ৷ 2014 সালে সেখান থেকে সাংসদ হন সুরন্দর সিং আলুওয়ালিয়া ৷ 2019 সালে ওই কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জেতেন রাজু বিস্তা ৷ প্রতিবারই ভোটে গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গ ওঠে ৷ 2019 সালেও উঠেছিল ৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে বিষ্ণুপ্রসাদের এই আন্দোলনে কি রাজু বিস্তারও সমর্থন আছে ?
এই প্রসঙ্গে কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক বলেন, ‘‘এই প্রশ্ন আপনি ওঁকে (রাজু বিস্তা) করবেন ৷ এর জবাব উনি দিতে পারবেন ৷ আমি দিতে পারব না ৷’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, গোর্খাল্যান্ডের দাবি পূরণের জন্য 2019 সালে রাজু বিস্তাকে জেতানো হয়েছিলে ৷ রাজুকে জেতানোর জন্য তিনি জেলেও গিয়েছেন ৷ কিন্তু রাজু ভোটে জিতে গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে সরে আসায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ৷
আরও পড়ুন: দলীয় নেতারাই মিথ্যা বলে ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন, বিস্ফোরক বিজেপি বিধায়ক
তাঁর আরও দাবি, 2019 সালে পাহাড়ে বিজেপি প্রায় সাড়ে 4 লক্ষ ভোটে জিতেছিল ৷ কিন্তু পাহাড়ের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় পঞ্চায়েতে খারাপ ফল হয়েছে গেরুয়া শিবিরের ৷ তাই তাঁর দাবি, 2024 সালের লোকসভা ভোটের আগে দাবিপূরণ করতে হবে ৷ কোনও রকম আশ্বাস দিলে চলবে না ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বঙ্গ বিজেপির থেকে আগেই স্পষ্ট করা হয়েছে যে তারা বাংলাভাগের বিপক্ষে ৷ বিধানসভায় এই নিয়ে আলোচনার সময়ও বিজেপির নিজের এই অবস্থান স্পষ্ট করে ৷ কিন্তু সেদিন বিধানসভাতেই বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা গোর্খাল্যান্ডের পক্ষে আওয়াজ তুলেছিলেন ৷ এ দিনও সেই কথা জানিয়েছেন কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার অবস্থান রেখেছি ৷ আর পাহাড়েরও এটাই স্ট্যান্ড ৷ জনগণের বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক দল থাকতে পারবে না ৷’’
আরও পড়ুন: ফের জোরালো হচ্ছে গোর্খাল্যান্ডের দাবি, সুর চড়াচ্ছে শাসক-বিরোধীরা; দিল্লিতে হবে আন্দোলন
তার পরও তাঁর এই অবস্থান তো দল বিরোধী ৷ তাহলে বিজেপি তো তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে ৷ সেই বিষয়ে সরাসরি উত্তর দেননি তিনি ৷ পুরো বিষয়টি তিনি ঈশ্বরের হাতে ছেড়েছেন ৷ আর জানিয়েছেন যে মানুষ তাঁকে ভোট দিয়েছেন ৷ তাই তিনি মানুষের পাশে থাকতে চান ৷ আর তাঁর ভোটাররা যাতে নিজেদের প্রতারিত মনে না করেন, সেই কারণেই তিনি এই প্রতিবাদ করছেন ৷ একই সঙ্গে বলছেন, ‘‘ভবিষ্যতে পাহাড়ের জনগণের জন্য কী ধরনের রাজনীতি করতে হবে, সেই পথ আমি তৈরি করব ৷’’