কলকাতা, 14 অগস্ট: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল 1930 সালের লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন । এই আন্দোলনে সারা জাগিয়ে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের উৎসাহ জন্মেছিল লবণ তৈরি ও ব্যবসায় । 1934 সালে মনুজেন্দ্র দত্তের উদ্যোগে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পরিকল্পনায় 1934 সালে পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর থানার অন্তর্গত মন্দারমনির কাছে শুরু হয় 'বেঙ্গল সল্ট কোম্পানি লিমিটেড'-এর যাত্রা । 1 হাজার 600 একর জমিতে গড়ে ওঠে বাংলার এই লবণ তৈরির কারখানা । এই কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় নিজে ৷ আর ম্যানেজিং এজেন্ট হন হাটখোলা দত্ত পরিবারের মনুজেন্দ্র দত্ত ।
তবে এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন ইতিহাসের পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে বেঙ্গল সল্ট কোম্পানির ম্যানেজিং এজেন্ট এই মনুজেন্দ্র দত্তের কথা । সেই কথাই সকলকে জানাতে তাঁর সেজ বোন বিমলাবালা মিত্র দাদাকে নিজের আত্মজীবনী লিখতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন । তবে নিজের প্রচার নিজে করার আগ্রহ ছিল না মনুজেন্দ্রবাবুর ৷ তবুও বোনের ইচ্ছেতেই সেদিন নিজের আত্মজীবনী লেখা শুরু করলেও শেষ করেননি তিনি । এরপর তাঁর ছেলে রথীন্দ্র 2008 সালে নতুন করে কলম ধরেন বাবার জীবনী লেখার জন্য ৷ এরপর 2022 এর 13 অগস্ট সন্ধ্যায় দেশপ্রিয় পার্কের দত্ত বাড়িতেই অবশেষে পারিবারিক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মৃত্যুর 47 বছর পর প্রকাশিত হল মনুজেন্দ্র দত্তের জীবনকাহিনী 'পিতৃদেব ও বেঙ্গল সল্ট কোম্পানি'(biography of the founder of Bengal Salt Company Manujendra Dutta was published by his son)৷ এই দিনের সন্ধ্যায় তাঁরা সকলের সামনে তুলে ধরেন মনুজেন্দ্র দত্তকে পাঠানো মহাত্মা গান্ধীর সেই অনন্য চিঠি ৷
আরও পড়ুন : কে কেলাপ্পানদের নেতৃত্বে কেরালায় ছড়িয়ে পড়েছিল লবণ সত্যাগ্রহ
ছেলে রথীন্দ্র দত্ত এই বইয়ে তুলে ধরেন বাবার অজানা ইতিহাস। এ বিষয়ে রথীন্দ্র বলেন,"একবার শীতের ছুটিতে আমি আর দাদা বাবার অফিসে ঘুরতে গিয়েছিলাম । তখনই দেখেছিলাম নুন কীভাবে তোলা হয়, কীভাবে সমস্ত কাজকর্ম করা হয় । পরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক কিছু উপলব্ধি করি । তাই আমার মনে হয়েছিল বাবার এই জীবনটা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তারপরই আমি এই বইটা লিখি । মূলত 2008 সাল থেকে আমি এ বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করি । তারপর করোনায় দু'বছর গৃহবন্দি জীবনে শুরু করি এই বই লেখা ।"
মনুজেন্দ্র দত্তর সেজ বোন বিমলা দেবীর ইচ্ছা ছিল দাদাকে নিয়ে একটি বই তৈরি হোক । তবে আত্মজীবনী লিখতে নারাজ ছিলেন মনুজেন্দ্রবাবু । তাই অতঃপর দাদার জীবনী নিজেই গল্পের ছলে পরিবারের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শুনিয়েছিলেন বিমলা দেবী । বিমলা দেবীর কন্যা যূথিকা মিত্র জানান, একটা সময় কলকাতার শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের মধ্য দিয়ে এটি জাগরণ এসেছিল । যে জাগরণ আমাদের বর্তমান সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে । কারণ একটা সময় কলকাতা শহরে বনেদিয়ানা মানে বিলাসিতা গৃহসুখ দেখা যেত, তার মধ্যে একটা সমাজ ছিল যারা চেয়েছিল মানুষকে চিত্তশক্তিতে উদ্ভূত করে শক্তিশালী করে তোলা । যেটা ছিল আমার মামার মধ্যে । আর আমার মা আমাকে সেই শিক্ষাই দিতে চেয়েছিলেন ।"
আরও পড়ুন : সত্যাগ্রহে গান্ধির তৈরি লবণ সংরক্ষিত এলাহাবাদে