ETV Bharat / state

Bijon Theater: আরও এক নাট্যমঞ্চ বিজন থিয়েটারের স্মৃতি বিলীন, সেখানে মাথা তুলবে বহুতল

স্মৃতিটুকু সম্বল রয়ে গেল ৷ ভাঙা পড়ল নাট্য অভিনেতার স্মৃতি বিজাড়িত বিজন থিয়েটর (bijon theater demolished) ৷ ভারতীয় গণনাট্য সংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিজন ভট্টাচার্যের নামে এই থিয়েটারের নামকরণ হয়েছিল ৷ এখন সে সবই কেবল স্মৃতি ৷ উত্তর কলকাতার হাতিবাগান এলাকার এই থিয়েটার হলে পায়ের ধুলো পড়েছিল তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ৷

author img

By

Published : Feb 18, 2023, 10:23 PM IST

Bijon Theater
বিজন থিয়েটর

কলকাতা, 18 ফেব্রুয়ারি: ভারতীয় গণনাট্য সংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিজন ভট্টাচার্য (Bijon Theater)। তাঁর স্মৃতিতে নামাঙ্কিত উত্তর কলকাতার হাতিবাগান এলাকার নাট্য পাড়ার নাট্যমঞ্চ বিজন থিয়েটার । 34 বছর ধরে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল ৷ সেবই এখন স্মৃতি ! ভেঙে ফেলা হল বিজন থিয়েটর ৷ সেই জমিতেই উঠবে এবার মাথা তুলে দাঁড়াবে বহুতল ৷ নাট্য জগতের বহু মানুষের কাছেই যা বেদনাদায়ক।

একে একে সব স্মৃতি যেন বিলীন হচ্ছে । এক সময় এই চত্ত্বরে ছিল একাধিক নাট্যমঞ্চ ও প্রেক্ষাগৃহ । হাতিবাগান, শ্যামবাজার, গোয়াবাগান এলাকা জুড়ে ছিল একাধিক থিয়েটার । শ্রী, উত্তরা, রাধা, রঙমহল, বিশ্বরূপা, দর্পনা সব একে একে বিভিন্ন ডিপার্টমন্টাল স্টোর, বহুতল মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে । হয়েছে বিকিকিনির বাজার । এখন সেখানে চলছে স্টার থিয়েটার হল, মিনার, টকিশো হাউজ । বন্ধ হয়েছে রঙ্গনা, শর্কারিনা থিয়েটার । বিজন থিয়েটারের গেটেও অনেকদিন আগেই তালা ঝুলছে ৷ পৌরসভায় বিপুল পরিমাণ কর বাকি পড়ে গিয়েছিল ৷ এবার সেই বিজন থিয়েটার ভেঙে গুড়িয়ে গেল ।

Bijon Theater
ভাঙা হচ্ছে স্মৃতি বিজড়িত বিজন থিয়েটর

বিজন থিয়েটরের ইতিহাস : বিজন থিয়েটর তৈরির আগে এখানে খাটাল ছিল ৷ 1989 সাল নাগাদ এই জমিতে গড়ে উঠেছিল বিজন থিয়েটার । সায়ক নামের একটি নাটকের দল এই থিয়েটার হলের দেখাশোনা করত । তাঁদের তত্ত্বাধানে চলত এই হল । তবে পরবর্তী সময় লাভ না-হওয়াতে অর্থ কষ্টের মুখে জেরবার হতে হয় এই নাট্যদলকে । কর্মীদের বেতন থেকে শুরু করে বিদ্যুতের খরচও চালানো যেত না এই থিয়েটার হলে এতটাই কম আয় হত ৷ তবে হাল ফেরাতে মাঝেমধ্যে অভিনেতা ও নাট্যকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই হলে তাঁর দলের নাটক মঞ্চস্থ করতেন । তবু লাভের মুখ দেখেনি হলটি । ফলে বারবার টালমাটাল অবস্থার শিকার হতে হয় । এরপর নাটকের দল সায়ক, অন্য থিয়েটার, শোহান ও থিয়েটার ওয়ার্কশপ এই চারদল মিলিতভাবে চালানোর চেষ্টা করে । সেই অভিপ্রায় ব্যর্থ হয় । এই হলে বহু সময় বিশিষ্ট নাট্য ব্যাক্তিত্ব নাটক মঞ্চস্থ করেছেন । একটানা 10 দিন নাটকের উৎসব হত এই হলে ।


স্থানীয় সূত্রে খবর, এত বছরের নাটকের জগতের নানা উত্থান, পতনের সাক্ষী থাকা বিজন থিয়েটর আজ বিলীন । ভাঙা শুরু হয়েছে । কলকাতা কর্পোরেশনের আরও এক অধিকারিক জানান, সেই জমিতে দক্ষিণ কলকাতার একটি নির্মাণ সংস্থা বহুতল নির্মাণ করছে ৷ 14টি ফ্ল্যাট হবে । কলকাতা কর্পোরেশনের নকশার অনুমোদন হয়েছে । পাশে একটি গ্যারেজ ও আর একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া নাট্যমঞ্চ শার্করিনা জায়গা নেওয়া নিয়েও কথা চলছে । সেগুলো ভেঙে ওই জায়গা নিলে আবাসন বেশ বাড়বে ৷

আরও পড়ুন: নিঁখোজ থিয়েটার কর্মীর খোঁজে ইয়ামি, ওভার দ্য টপেই মুক্তি পাচ্ছে 'লস্ট'

এই প্রসঙ্গেই বিজন থিয়েটারে অভিনয় করা এক নাট্যকর্মী গুলশনারা বলেন, "বিজন থিয়েটার ভেঙে ফেলা হচ্ছে এতে আমি খুব একটা চমকে উঠিনি ৷ এ তো প্রায়ই ঘটছে ৷ এরসঙ্গে আমরা নাট্যকর্মীরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি এক প্রকার ৷ অ্যাকাডেমিতে এসি বন্ধ হয়ে যায় মাঝে মাঝে ৷ তপন থিয়েটার বাথরুমের অবস্থা বলাই বাহুল্য ৷ আমরা বর্ষপুর্তির কথা বলি ৷ অবস্থার উন্নতির কথা ভাবি না ৷ বিজন থিয়েটারে অভিনয় করে এসেছি ৷ খারাপ লাগার কথা মুখ ফুটে বলার দরকার পড়ে না ৷ "

তাঁর কথার রেশ টেনেই নাট্য নির্দেশক শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, "আমার চোখের সামনেই বিজন থিয়েটার গড়ে উঠেছিল । আবার আমার চোখের সামনেই জায়গাটা ফাঁকা মাঠ হয়ে যেতে দেখলাম । বেশ কয়েকটা দল মিলে আটকানোর চেষ্টা করেছিল, শেষরক্ষা হল না । মানুষের চাহিদা আসলে অনেক । পরের দিকে এসি করে দেওয়া হয়েছিল । তবে, চেয়ারগুলো অতটা আরামের ছিল না, যতটা মানুষ চেয়েছিল । এই হলের সংস্কারের ব্যাপারে আগের সরকার এবং এখনকার সরকার কেউই এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি । তাই বিশেষ সংস্কারসাধন হয়নি। তাই এখন চুপ করে সবটা দেখা ছাড়া আর উপায় নেই । বাংলা নাটকের দেড়শো বছর পূর্তি চলছে । আর সেই সময়েই ভেঙে পড়ল বাংলা নাটকের অন্যতম পীঠস্থান বিজন থিয়েটর ।"

কলকাতা, 18 ফেব্রুয়ারি: ভারতীয় গণনাট্য সংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিজন ভট্টাচার্য (Bijon Theater)। তাঁর স্মৃতিতে নামাঙ্কিত উত্তর কলকাতার হাতিবাগান এলাকার নাট্য পাড়ার নাট্যমঞ্চ বিজন থিয়েটার । 34 বছর ধরে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল ৷ সেবই এখন স্মৃতি ! ভেঙে ফেলা হল বিজন থিয়েটর ৷ সেই জমিতেই উঠবে এবার মাথা তুলে দাঁড়াবে বহুতল ৷ নাট্য জগতের বহু মানুষের কাছেই যা বেদনাদায়ক।

একে একে সব স্মৃতি যেন বিলীন হচ্ছে । এক সময় এই চত্ত্বরে ছিল একাধিক নাট্যমঞ্চ ও প্রেক্ষাগৃহ । হাতিবাগান, শ্যামবাজার, গোয়াবাগান এলাকা জুড়ে ছিল একাধিক থিয়েটার । শ্রী, উত্তরা, রাধা, রঙমহল, বিশ্বরূপা, দর্পনা সব একে একে বিভিন্ন ডিপার্টমন্টাল স্টোর, বহুতল মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে । হয়েছে বিকিকিনির বাজার । এখন সেখানে চলছে স্টার থিয়েটার হল, মিনার, টকিশো হাউজ । বন্ধ হয়েছে রঙ্গনা, শর্কারিনা থিয়েটার । বিজন থিয়েটারের গেটেও অনেকদিন আগেই তালা ঝুলছে ৷ পৌরসভায় বিপুল পরিমাণ কর বাকি পড়ে গিয়েছিল ৷ এবার সেই বিজন থিয়েটার ভেঙে গুড়িয়ে গেল ।

Bijon Theater
ভাঙা হচ্ছে স্মৃতি বিজড়িত বিজন থিয়েটর

বিজন থিয়েটরের ইতিহাস : বিজন থিয়েটর তৈরির আগে এখানে খাটাল ছিল ৷ 1989 সাল নাগাদ এই জমিতে গড়ে উঠেছিল বিজন থিয়েটার । সায়ক নামের একটি নাটকের দল এই থিয়েটার হলের দেখাশোনা করত । তাঁদের তত্ত্বাধানে চলত এই হল । তবে পরবর্তী সময় লাভ না-হওয়াতে অর্থ কষ্টের মুখে জেরবার হতে হয় এই নাট্যদলকে । কর্মীদের বেতন থেকে শুরু করে বিদ্যুতের খরচও চালানো যেত না এই থিয়েটার হলে এতটাই কম আয় হত ৷ তবে হাল ফেরাতে মাঝেমধ্যে অভিনেতা ও নাট্যকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই হলে তাঁর দলের নাটক মঞ্চস্থ করতেন । তবু লাভের মুখ দেখেনি হলটি । ফলে বারবার টালমাটাল অবস্থার শিকার হতে হয় । এরপর নাটকের দল সায়ক, অন্য থিয়েটার, শোহান ও থিয়েটার ওয়ার্কশপ এই চারদল মিলিতভাবে চালানোর চেষ্টা করে । সেই অভিপ্রায় ব্যর্থ হয় । এই হলে বহু সময় বিশিষ্ট নাট্য ব্যাক্তিত্ব নাটক মঞ্চস্থ করেছেন । একটানা 10 দিন নাটকের উৎসব হত এই হলে ।


স্থানীয় সূত্রে খবর, এত বছরের নাটকের জগতের নানা উত্থান, পতনের সাক্ষী থাকা বিজন থিয়েটর আজ বিলীন । ভাঙা শুরু হয়েছে । কলকাতা কর্পোরেশনের আরও এক অধিকারিক জানান, সেই জমিতে দক্ষিণ কলকাতার একটি নির্মাণ সংস্থা বহুতল নির্মাণ করছে ৷ 14টি ফ্ল্যাট হবে । কলকাতা কর্পোরেশনের নকশার অনুমোদন হয়েছে । পাশে একটি গ্যারেজ ও আর একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া নাট্যমঞ্চ শার্করিনা জায়গা নেওয়া নিয়েও কথা চলছে । সেগুলো ভেঙে ওই জায়গা নিলে আবাসন বেশ বাড়বে ৷

আরও পড়ুন: নিঁখোজ থিয়েটার কর্মীর খোঁজে ইয়ামি, ওভার দ্য টপেই মুক্তি পাচ্ছে 'লস্ট'

এই প্রসঙ্গেই বিজন থিয়েটারে অভিনয় করা এক নাট্যকর্মী গুলশনারা বলেন, "বিজন থিয়েটার ভেঙে ফেলা হচ্ছে এতে আমি খুব একটা চমকে উঠিনি ৷ এ তো প্রায়ই ঘটছে ৷ এরসঙ্গে আমরা নাট্যকর্মীরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি এক প্রকার ৷ অ্যাকাডেমিতে এসি বন্ধ হয়ে যায় মাঝে মাঝে ৷ তপন থিয়েটার বাথরুমের অবস্থা বলাই বাহুল্য ৷ আমরা বর্ষপুর্তির কথা বলি ৷ অবস্থার উন্নতির কথা ভাবি না ৷ বিজন থিয়েটারে অভিনয় করে এসেছি ৷ খারাপ লাগার কথা মুখ ফুটে বলার দরকার পড়ে না ৷ "

তাঁর কথার রেশ টেনেই নাট্য নির্দেশক শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, "আমার চোখের সামনেই বিজন থিয়েটার গড়ে উঠেছিল । আবার আমার চোখের সামনেই জায়গাটা ফাঁকা মাঠ হয়ে যেতে দেখলাম । বেশ কয়েকটা দল মিলে আটকানোর চেষ্টা করেছিল, শেষরক্ষা হল না । মানুষের চাহিদা আসলে অনেক । পরের দিকে এসি করে দেওয়া হয়েছিল । তবে, চেয়ারগুলো অতটা আরামের ছিল না, যতটা মানুষ চেয়েছিল । এই হলের সংস্কারের ব্যাপারে আগের সরকার এবং এখনকার সরকার কেউই এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি । তাই বিশেষ সংস্কারসাধন হয়নি। তাই এখন চুপ করে সবটা দেখা ছাড়া আর উপায় নেই । বাংলা নাটকের দেড়শো বছর পূর্তি চলছে । আর সেই সময়েই ভেঙে পড়ল বাংলা নাটকের অন্যতম পীঠস্থান বিজন থিয়েটর ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.