কলকাতা, 16 ফেব্রুয়ারি : ভবানীপুরে খুনের ঘটনায় নয়া মোড় ৷ মুক্তিপণ দেওয়া হলেও ফেরেননি স্বর্ণব্যবসায়ী শান্তিলাল বৈদ্য ৷ সামনে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ সোমবার রাত দেড়টা নাগাদ শম্ভুনাথ পণ্ডিত রোডের একটি গেস্টহাউজ়ে একটি ঘরের দরজা ভেঙে পুলিশ তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে (Bhowanipur Gold Merchant Murder in Bhowanipur Guest House) ৷ মৃতদেহ উদ্ধারের সময় তা বিবস্ত্র অবস্থায় ছিল ৷ গলায় ফোনের তার জড়ানো ছিল ৷ ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে কালশিটের চিহ্নের উল্লেখ করা হয়েছে । শান্তিলাল বৈদ্য 20 নম্বর লি রোডের বাসিন্দা ৷ পুলিশ সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রইল ঘটনাক্রম ৷
রবিবার, 13 ফেব্রুয়ারি
পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার সকালে প্রাতঃভ্রমণের নামে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন শান্তিলাল বৈদ্য । তিনি বিশাল শর্মার সঙ্গে বাড়ির কাছে গেস্ট হাউজ়টিতে যান ৷ গেস্ট হাউজ়ের রেজিস্টার থেকে এই ব্যক্তির নাম পাওয়া গিয়েছে ৷ সে দিল্লির বাসিন্দা এবং ওই গেস্ট হাউজ়ে চেক ইন করার সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ী শান্তিলাল বৈদ্যকে 'কাকা' বলে পরিচয় দিয়েছিল বিশাল ৷ রবিবার সন্ধে 6টা 40 মিনিট নাগাদ শান্তিলাল বৈদ্য বিশালের সঙ্গে পান খেতে যাওয়ার নামে গেস্টহাজ়ের নিচে নামেন, জানিয়েছেন গেটহাউজ়ের কর্মীরা ।
সোমবার, 14 ফেব্রুয়ারি
মৃত স্বর্ণব্যবসায়ীর পরিবার পুলিশকে জানায়, সোমবার সন্ধে আনুমানিক 7 টা নাগাদ শান্তিলাল বৈদ্যের বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন আসে । তাঁর ভাইপো বিবেক কুমার ফোন ধরেন । ফোনে 21 মিনিট ধরে কথাবার্তা হয় । সোমবার রাতে তারা পুলিশকে জানায়, স্বর্ণব্যবসায়ীর জন্য 1 কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল ৷ পরিবারের দাবি, শান্তিলালের বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি ও ভিডিয়ো ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেয় অভিযুক্ত । এখানেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি আততায়ীর সঙ্গে মৃতের কোনও মতানৈক্য ছিল ?
মঙ্গলবার রাতে পরিবার জানায়, 25 লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার কথা ঠিক হয় । সোমবার 14 ফেব্রুয়ারি রাত 10 টা নাগাদ ভিক্টোরিয়া সাউথ গেটে মুক্তিপণ নিয়ে আসতে নির্দেশ দেয় অভিযুক্ত বিশাল । মনে করা হচ্ছে, বিশাল ভিক্টোরিয়া সাউথ গেটে পৌঁছয় রাত 10 টা 15 মিনিটে । সময়ের মধ্যে শান্তিলালের বাড়ির লোক সেখানে পৌঁছে যায় ৷
রাত 11টা নাগাদ ভিক্টোরিয়ার সাউথ গেটের সামনে ট্যাক্সিতে এক ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখে শান্তিলাল বৈদ্যের পরিবারের লোকজন ৷ সেই ব্যক্তি ট্যাক্সির জানালার কাচ নামালে তার হাতে 25 লক্ষ টাকা মুক্তিপণ তুলে দেয় পরিবার ৷ তারপর ট্যাক্সির ভিতর থেকে একটি মোবাইল ফোন তাদের উদ্দেশ্যে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে যায় ট্যাক্সিটি ৷ পরিবার বুঝতে পারে সেটি শান্তিলালের এবং তা সুইচড অফ অবস্থায় ছিল ৷ এর এক ঘণ্টা পর ঠিক রাত 12টা নাগাদ পরিবারের লোক ভবানীপুর থানায় অভিযোগ জানায় ৷
আরও পড়ুন : Businessman Dead Body Found : শম্ভুনাথ পণ্ডিত রোডের গেস্টহাউস থেকে উদ্ধার স্বর্ণ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত দেহ
সোমবার, 14 ফেব্রুয়ারি, গেস্ট হাউজ়
সোমবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ গেস্ট হাউজ়ের কর্মীরা একাধিকবার শান্তিলাল বৈদ্য ও বিশালের রুমে ফোন করে ৷ কিন্তু কেউ ফোন না ধরায় তাদের সন্দেহ হয় ৷ তখন কর্মীরা এসে দেখে যে ঘরটি বাইরে থেকে বন্ধ রয়েছে ৷ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় বিশাল একটি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে ৷ তখনই হোটেলের কর্মীদের সন্দেহ হয় বিশাল চেক আউট না করে গেস্ট হাউজ় ছেড়ে চলে গিয়েছে ৷ তারা সাড়ে বারোটা নাগাদ ভবানীপুর থানার পুলিশকে ফোন করে ডেকে পাঠায় ৷ এরপর রাত দেড়টা নাগাদ পুলিশ দরজা ভেঙে স্বর্ণব্যবসায়ী শান্তিলালের দেহ উদ্ধার করে ৷
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট
বিবস্ত্র মৃতদেহ দেখে হোমিসাইড বিভাগের অনুমান, খুনের আগে বিশাল এবং শান্তিলালের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল ৷ তবে খুনের আগে দু'জনের বচসা হয় এবং তারপর তাঁকে বিকেল 3 থেকে 3.30 মিনিটের মধ্যে খুন করা হয়েছে ৷ এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, স্বর্ণব্যবসায়ীকে খুনের পর মুক্তিপণ চেয়ে তাঁর বাড়িতে ফোন করে বিশাল । টাকা নিয়ে বেপাত্তা হয় যুবক ।
শান্তিলাল বৈদ্যের ফোন থেকে বিশাল শর্মার সঙ্গে কথোপকথনের বেশ কিছু অশ্লীল চ্যাট পাওয়া গিয়েছে । সন্দেহের তালিকায় রয়েছে ব্যবসায়ীর পূর্ব পরিচিত এক ব্যক্তি অর্থাৎ বিশালই । গোয়েন্দারা সমস্ত কল ডিটেলস খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বিশালের ফোনের টাওয়ার লোকেট করার চেষ্টা চালাচ্ছে ।