কলকাতা, 13 জুলাই: করোনার সময়ও প্রথম অতিমারির টিকা এনেছিল ভারত বায়োটেক ও সেরাম ইনস্টিটিউট ৷ এ বার তাদেরই হাত ধরে ভারতে আসছে ম্যালেরিয়ার দুই টিকা ৷ ব্রিটিশ ফার্মা সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে তৈরি ম্যালেরিয়ার টিকা তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে দেশীয় দুই সংস্থা ৷
ম্যালেরিয়ায় টিকা: বৃষ্টিতে সব থেকে বড় সমস্যা মশা । মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ বাড়ে এই বর্ষাকালেই । ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া-সহ একাধিক মারণ রোগ দেখা যায় । এতদিন ম্যালেরিয়ার টিকার ছিল বড়ই অভাব । শিশুদের ক্ষেত্রে কোন টিকা কার্যকর হবে তা নিয়েও সন্দেহ ছিল । কিন্তু বিশ্বের প্রথম ম্যালেরিয়া টিকা প্রয়োগের অনুমতি দিয়ে দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা । এই টিকাটি বানিয়েছে ব্রিটিশ ফার্মা সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন । পাঁচ মাস বয়সের শিশুদের টিকার চারটি ডোজ দেওয়া হতে পারে ।
ভারত বায়োটেক তৈরি করবে টিকা: তবে এই টিকার চাহিদা এতটাই যে, এর সরবরাহ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল । কিন্তু তাতেও এ বার আশার আলো দেখাল দেশিয় সংস্থা ভারত বায়োটেক । তারা জিএসকে'র তৈরি এই টিকার প্রোটিন অংশটি তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে । 2029 সাল পর্যন্ত তারাই এই টিকা সরবরাহ করবে সারা বিশ্বে । ভারতের থেকেও আফ্রিকাতে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা যায় । তাই আফ্রিকার প্রায় 11টি দেশেই এই টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে ।
সেরাম ইনস্টিটিউটও তৈরি করবে টিকা: শুধু ভারত বায়োটেকের নয়, ম্যালেরিয়ার জন্য আসতে চলছে আরও একটি টিকা । যা বিশ্বে স্থান পাবে দ্বিতীয় হিসেবে । অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে তৈরি এই টিকা ভারতে আসবে সেরাম ইনস্টিটিউটের হাত ধরে । এই টিকার নাম আর 21/ম্যাট্রিক্স-এম । মূলত ম্যালেরিয়া হয় ভাইভ্যাক্স এবং ফ্যালসিফেরাম জাতীয় মশা থেকে । তবে ফ্যালসিফেরাম থেকেই বেশি ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হতে দেখা যায় । তাই সে কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে এই দুই টিকা ।
আরও পড়ুন: শরীরে বিরল ক্যানসার, তা নিয়েই অক্সফোর্ডে শিশুদের টিকা গবেষণায় মালদার অঙ্কনা
'আরও পরীক্ষার প্রয়োজন': তবে এই দুটো টিকার ক্ষেত্রে আরও বেশকিছু পরীক্ষার প্রয়োজন বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দোলুই । তাঁর কথায়, "ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া আমাদের চেনা ও সব থেকে পুরনো দুটি রোগ । তাদের টিকার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা হয়েছে । তবে আশানুরূপ ফল মেলেনি । এই টিকার এখনও পর্যন্ত ফল ভালো । কিন্তু তাড়াহুড়ো করা উচিত নয় । দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল গুরুত্বপূর্ণ । ভারতে আরও কয়েক জনের উপর পরীক্ষা প্রয়োজন ।"
চাই সমাজ সচেতনতা: রাজ্যের ক্লিনিকাল ভ্যাকসিন ট্রায়াল ফ্যাসিলিটেটর স্নেহেন্দু কোনার এই দুই টিকা প্রসঙ্গে জানান, "এই ম্যালেরিয়া ভ্যাকসিনের উৎপাদনের হার বাড়াতে হবে যেহেতু মিলিয়ন্স অফ ডোজের প্রয়োজনীয়তা আছে । তার আগে ইনজেকশনের পর্যাপ্ত সরবরাহ, সঠিক কোল্ড চেন-এর সাহায্যে এর সরবরাহ ব্যবস্থা, ভ্যাকসিন স্টোরে রাখার উপযুক্ত ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর্মীদের ট্রেনিং, এই ভ্যাকসিনের সুবিধা এবং অসুবিধার সম্বন্ধে অবগত করা প্রয়োজন ।" তবে এর পাশাপাশি সমাজকেও সচেতন থাকার উপর জোর দিয়েছেন তিনি ।