ETV Bharat / state

কারও কাছে প্রথম জামাইষষ্ঠীর স্মৃতি বেনারসের বেগুনভাজা, কারও কাছে...

পবিত্র সরকারের কাছে জামাইষষ্ঠী মানে বেনারসের বেগুনভাজা ও শ্যালক-শ্যালিকাদের সঙ্গে খুনসুটি ৷ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি আবার জামাইষষ্ঠীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে স্ত্রীকে "পৌনে বাঙাল" আখ্যা দিয়ে ফেললেন ৷ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জানালেন, জামাইষষ্ঠীতে তিনি উপহার পেয়েছিলেন জামা ও প্যান্টের কাপড় ৷ কবি অংশুমান করের কাছে জামাইষষ্ঠী মানে, বাঙাল-ঘটির সেতুবন্ধনের একটা দিন ৷

jamaisasthi
jamaisasthi
author img

By

Published : May 28, 2020, 2:05 PM IST

Updated : May 28, 2020, 2:44 PM IST

কলকাতা, 28 মে : জামাইষষ্ঠীতে যেন সাতাশ থেকে সাতাত্তরের নস্টালজিয়া । কারও কাছে আগাম, কারও কাছে ফেলে আসা দিন । সেই নস্টালজিয়ায় ভাসছেন পবিত্র সরকার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, অংশুমান কর-দের মতো সাহিত্যিকরা । তাঁদের স্মৃতিকথায় আঁকা রইল প্রথম জামাইষষ্ঠীর নকশিকাঁথা ।

পবিত্র সরকার
পবিত্র সরকার

পবিত্র সরকারের কাছে জামাইষষ্ঠী মানেই বেনারসের বেগুনভাজা ও শ্যালক-শ্যালিকাদের সঙ্গে খুনসুটি । প্রথম জামাইষষ্ঠীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, "আমার যা বয়স তাতে জামাইষষ্ঠী কখনও হয়েছিল কি না তা প্রায় ভুলেই গেছি । যাইহোক, সব সাধারণ মানুষের মতো আমার মতো অপাত্রেরও একজন মহিলা স্ত্রী হিসেবে জুটেছিলেন । তিনি আমার সহপাঠিনী ছিলেন । আমাদের মধ্যে জাতের পার্থক্য ছিল । আমি সমাজের তথাকথিত নিচুতলার মানুষ ছিলাম ৷ আর তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণকন্যা । এই রকম অস্বাভাবিক ঘটনা কখনও কখনও সমাজে ঘটে । প্রথমদিকে একটু অসুবিধা ছিল বাড়ি থেকে । তাঁর বাড়ি ছিল বেনারসে । সেখানে আমার প্রথম জামাইষষ্ঠী হয়েছিল । মনে আছে, তাঁরা খুবই যত্ন করেছিলেন । বেনারসের যা কিছু শ্রেষ্ঠ খাদ্যদ্রব্য তা আমার ভাগ্যে জুটেছিল । তার মধ্যে বেগুনভাজার কথা ভালোভাবে মনে আছে । বিশাল বিশাল বেগুন । বেনারসের বেগুন এমনিতেই খুব বিখ্যাত । "

বলেন, "আমার জামাইষষ্ঠীতে ফাউ ছিল, যেটা অনেকের থাকে না । সেটি হল 6টি শ্যালক ও শ্যালিকা । আমি একতলায় ঢুকেছি, আর তাঁরা উপর থেকে জল ঢেলে দিল । প্রথম প্রথম এই রকম অভ্যর্থনার কথা মনে আছে । প্রয়াত শ্বশুরমশাই ও শাশুড়ি মা'র খুবই স্নেহ পেয়েছিলাম । খাদ্যদ্রব্যের কথা তেমন মনে নেই । তবে বেনারসের মিষ্টিও তো খুব বিখ্যাত ছিল । তখন মিষ্টি খেতেও পারতাম । মিষ্টি, মাংস সবই ছিল । সেই স্মৃতিগুলো খুব উজ্জ্বল হয়ে আমার মনের মধ্যে আছে । এটুকুই বলতে পারি।"

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি আবার জামাইষষ্ঠীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে স্ত্রীকে "পৌনে বাঙাল" আখ্যা দিয়ে ফেললেন । তাঁর কথায়, "প্রথমত, আমি বাংলাদেশের লোক । পাবনা জেলায় আমার জন্ম । কাজেই এ'দেশে এসে জামাইষষ্ঠী পালন করা শুরু হয়েছে । জামাইষষ্ঠী ওদেশে খুব বেশি হত না । ঘটিদের মধ্যে যেটার চল খুব । আমাদের বাঙালদের মধ্যে জামাইষষ্ঠীর এতটা প্রচলন ছিল না । যেখানে আমার বিয়ে হয়েছে সেখানেও বাঙালদের প্রভাব রয়েছে কিছুটা । যদিও আমার শ্বশুরমশাই এদেশেরই মানুষ ছিলেন । এদেশে এসে সবার দেখাদেখি আমাদেরও জামাইষষ্ঠীও চালু হয়েছিল । বিয়ের পর প্রথম জামাইষষ্ঠী স্বাভাবিকভাবেই একটু অন্যরকম হয়েই থাকে । সবার সঙ্গে পরিচয় হয় । জামাইষষ্ঠীর দিন খাওয়া-দাওয়া যথেষ্ট হত । মাংস খাই না বলে প্রচুর মাছের আয়োজন হত । শ্যালকদের সঙ্গে আড্ডাবাজি চলত । ভালোই কেটেছে সেইসব দিন । আমার অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ নয় । ফলে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের যত ধরনের চমকানো ব্যাপার থাকে, সেটা ছিল না । বিয়ে হয়েছে ১৯৭৬ সালে । সেই সময়েও চেনাশোনার মধ্যে বিয়ে হয়েছিল ৷ আমরা একসঙ্গে পড়তাম ৷ তাই অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের নানারকম চমৎকার ছিল না । খানিকটা গতানুগতিকই ছিল । তবে জামাইষষ্ঠী নিয়ে অত মাথা ঘামাইনি কোনওদিন । প্রেম করে বিয়ে করাটাই যথেষ্ট ছিল । রসশাস্ত্র ভাষায় চমৎকার যাকে বলে সেটা ওটাই ছিল ।" স্ত্রী'র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমার স্ত্রী হাফ বাঙাল । আমি তাকে বলব পৌনে এক বাঙাল । শ্বশুরমশাই বসিরহাটের বাড়িতে থাকতেন না । বদলির চাকরি ছিল তাঁর । ফলত, জন্মসূত্রে বাঙাল হওয়ায় স্ত্রী'কে আমি কোয়ার্টার ঘটি ও পৌনে এক বাঙাল বলি ।"

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমার জামাইষষ্ঠী বলতে গেলে হতই না । আমি কলকাতায় থাকতাম আর শ্বশুরবাড়ি ছিল কোচবিহারে । কাজেই জামাইষষ্ঠী বলতে কিছুই ছিল না । তখন আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না । কাজেই বিয়ের পর একবারই জামাইষষ্ঠী হয়েছিল বলে মনে পড়ে । তারপর থেকে খুব একটা হয়নি । সেবার খুব ভালো খাওয়া-দাওয়া হয়েছিল । শাশুড়ি-শ্বশুরমশাই একটা প্যান্টের কাপড়, একটা জামার কাপড় দিয়েছিলেন । তারপর খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা হয়েছিল । এই আর কী । আমি তো নিরামিষাশি ছিলাম ৷ বিয়ের পর আমি নিরামিষ খাওয়া শুরু করি । কাজেই তাঁরা আর কী খাওয়াবে আমাকে । আমি মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি বলে ওঁরা দুঃখ পেয়েছিলেন । ভালো করে খাওয়াতে পারলেন না বলে আক্ষেপ করেছিলেন । আমি বলেছিলাম, ভালোই তো খেয়েছি, আমার তো আক্ষেপ নেই ৷ আপনারা কেন আক্ষেপ করছেন ? তারপর আর তেমন জামাইষষ্ঠী হয়নি । দূরত্ব ছিল আর একটু অসুবিধাও ছিল ।"

অংশুমান কর
অংশুমান কর

কবি অংশুমান করের কাছে জামাইষষ্ঠী বাঙাল-ঘটির সেতুবন্ধনের একটা দিন । যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে এ'বছর জামাইষষ্ঠীর কথা মনে ছিল না, অকপট স্বীকারোক্তি তাঁর । অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, "কাল জামাইষষ্ঠী? ভুলেই গেছিলাম । আমার প্রথম জামাইষষ্ঠী নিয়ে সত্যিকারের কোনও অভিজ্ঞতা নেই । একটা বড় ব্যাপার আছে । সেটা হল, আমরা পূর্ববঙ্গীয় ও আমার স্ত্রী এপার বঙ্গের । ওদের পরিবারে যেটা প্রচলিত ছিল সেটা হল "জামাই বাঁধনা" । সেটা একটা অন্যদিন ছিল । আমি যেহেতু পূর্ববঙ্গীয় জামাই, তাই আমার জন্যই ওদের বাড়িতে জামাইষষ্ঠীর দিনে জামাইষষ্ঠী পালন করা শুরু হয় । সেটা ছিল একটা অন্যরকম ব্যাপার । বাঙাল-ঘটির মধ্যে একটা বিদ্বেষের ব্যাপার থাকে । জামাইষষ্ঠী যেন সেই বিদ্বেষ কোথাও একটা জায়গায় গিয়ে মুছে দিয়েছিল । এছাড়া বিশেষ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি । তার একটা বড় কারণ হল, আমি ও আমার স্ত্রী দু'জনই বড় হয়েছি বেলিয়াতোড় গ্রামে । আমাদের বাড়িও একই পাড়াতে । ফলে জামাই অনেক দূরের মানুষ, অপরিচিত, দু-তিনবার মাত্র এসেছে, শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালক-শ্যালিকাদের তেমন করে চেনা হয়নি- আমার ক্ষেত্রে এর কোনওটাই ঘটেনি । তাই উত্তেজনাটা হয়ত খুব একটা বেশি ছিল না । তবে, যেটা বললাম সেটা সত্যি । ওদের পরিবারে এই জায়গাটাই ছিল না । ওদের জামাই বাঁধনা বলে একটা কিছু ছিল । যার বদলে পুরোদস্তুর জামাইষষ্ঠী পালন করার বিষয়টা এসে গেছিল । তবে, লকডাউনের কারণে এ'বছর জামাইষষ্ঠীর কথা আমরা সকলেই ভুলে গেছি । এত রকমের সংকট চতুর্দিকে । তাতে আমার মনে হয়, আগামী দু'এক বছর আড়ম্বরহীনভাবে সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় উৎসবগুলো উদযাপন করা উচিত ।"

প্রথম জামাইষষ্ঠীর অভিজ্ঞতা....

কলকাতা, 28 মে : জামাইষষ্ঠীতে যেন সাতাশ থেকে সাতাত্তরের নস্টালজিয়া । কারও কাছে আগাম, কারও কাছে ফেলে আসা দিন । সেই নস্টালজিয়ায় ভাসছেন পবিত্র সরকার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, অংশুমান কর-দের মতো সাহিত্যিকরা । তাঁদের স্মৃতিকথায় আঁকা রইল প্রথম জামাইষষ্ঠীর নকশিকাঁথা ।

পবিত্র সরকার
পবিত্র সরকার

পবিত্র সরকারের কাছে জামাইষষ্ঠী মানেই বেনারসের বেগুনভাজা ও শ্যালক-শ্যালিকাদের সঙ্গে খুনসুটি । প্রথম জামাইষষ্ঠীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, "আমার যা বয়স তাতে জামাইষষ্ঠী কখনও হয়েছিল কি না তা প্রায় ভুলেই গেছি । যাইহোক, সব সাধারণ মানুষের মতো আমার মতো অপাত্রেরও একজন মহিলা স্ত্রী হিসেবে জুটেছিলেন । তিনি আমার সহপাঠিনী ছিলেন । আমাদের মধ্যে জাতের পার্থক্য ছিল । আমি সমাজের তথাকথিত নিচুতলার মানুষ ছিলাম ৷ আর তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণকন্যা । এই রকম অস্বাভাবিক ঘটনা কখনও কখনও সমাজে ঘটে । প্রথমদিকে একটু অসুবিধা ছিল বাড়ি থেকে । তাঁর বাড়ি ছিল বেনারসে । সেখানে আমার প্রথম জামাইষষ্ঠী হয়েছিল । মনে আছে, তাঁরা খুবই যত্ন করেছিলেন । বেনারসের যা কিছু শ্রেষ্ঠ খাদ্যদ্রব্য তা আমার ভাগ্যে জুটেছিল । তার মধ্যে বেগুনভাজার কথা ভালোভাবে মনে আছে । বিশাল বিশাল বেগুন । বেনারসের বেগুন এমনিতেই খুব বিখ্যাত । "

বলেন, "আমার জামাইষষ্ঠীতে ফাউ ছিল, যেটা অনেকের থাকে না । সেটি হল 6টি শ্যালক ও শ্যালিকা । আমি একতলায় ঢুকেছি, আর তাঁরা উপর থেকে জল ঢেলে দিল । প্রথম প্রথম এই রকম অভ্যর্থনার কথা মনে আছে । প্রয়াত শ্বশুরমশাই ও শাশুড়ি মা'র খুবই স্নেহ পেয়েছিলাম । খাদ্যদ্রব্যের কথা তেমন মনে নেই । তবে বেনারসের মিষ্টিও তো খুব বিখ্যাত ছিল । তখন মিষ্টি খেতেও পারতাম । মিষ্টি, মাংস সবই ছিল । সেই স্মৃতিগুলো খুব উজ্জ্বল হয়ে আমার মনের মধ্যে আছে । এটুকুই বলতে পারি।"

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি আবার জামাইষষ্ঠীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে স্ত্রীকে "পৌনে বাঙাল" আখ্যা দিয়ে ফেললেন । তাঁর কথায়, "প্রথমত, আমি বাংলাদেশের লোক । পাবনা জেলায় আমার জন্ম । কাজেই এ'দেশে এসে জামাইষষ্ঠী পালন করা শুরু হয়েছে । জামাইষষ্ঠী ওদেশে খুব বেশি হত না । ঘটিদের মধ্যে যেটার চল খুব । আমাদের বাঙালদের মধ্যে জামাইষষ্ঠীর এতটা প্রচলন ছিল না । যেখানে আমার বিয়ে হয়েছে সেখানেও বাঙালদের প্রভাব রয়েছে কিছুটা । যদিও আমার শ্বশুরমশাই এদেশেরই মানুষ ছিলেন । এদেশে এসে সবার দেখাদেখি আমাদেরও জামাইষষ্ঠীও চালু হয়েছিল । বিয়ের পর প্রথম জামাইষষ্ঠী স্বাভাবিকভাবেই একটু অন্যরকম হয়েই থাকে । সবার সঙ্গে পরিচয় হয় । জামাইষষ্ঠীর দিন খাওয়া-দাওয়া যথেষ্ট হত । মাংস খাই না বলে প্রচুর মাছের আয়োজন হত । শ্যালকদের সঙ্গে আড্ডাবাজি চলত । ভালোই কেটেছে সেইসব দিন । আমার অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ নয় । ফলে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের যত ধরনের চমকানো ব্যাপার থাকে, সেটা ছিল না । বিয়ে হয়েছে ১৯৭৬ সালে । সেই সময়েও চেনাশোনার মধ্যে বিয়ে হয়েছিল ৷ আমরা একসঙ্গে পড়তাম ৷ তাই অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের নানারকম চমৎকার ছিল না । খানিকটা গতানুগতিকই ছিল । তবে জামাইষষ্ঠী নিয়ে অত মাথা ঘামাইনি কোনওদিন । প্রেম করে বিয়ে করাটাই যথেষ্ট ছিল । রসশাস্ত্র ভাষায় চমৎকার যাকে বলে সেটা ওটাই ছিল ।" স্ত্রী'র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমার স্ত্রী হাফ বাঙাল । আমি তাকে বলব পৌনে এক বাঙাল । শ্বশুরমশাই বসিরহাটের বাড়িতে থাকতেন না । বদলির চাকরি ছিল তাঁর । ফলত, জন্মসূত্রে বাঙাল হওয়ায় স্ত্রী'কে আমি কোয়ার্টার ঘটি ও পৌনে এক বাঙাল বলি ।"

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমার জামাইষষ্ঠী বলতে গেলে হতই না । আমি কলকাতায় থাকতাম আর শ্বশুরবাড়ি ছিল কোচবিহারে । কাজেই জামাইষষ্ঠী বলতে কিছুই ছিল না । তখন আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না । কাজেই বিয়ের পর একবারই জামাইষষ্ঠী হয়েছিল বলে মনে পড়ে । তারপর থেকে খুব একটা হয়নি । সেবার খুব ভালো খাওয়া-দাওয়া হয়েছিল । শাশুড়ি-শ্বশুরমশাই একটা প্যান্টের কাপড়, একটা জামার কাপড় দিয়েছিলেন । তারপর খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা হয়েছিল । এই আর কী । আমি তো নিরামিষাশি ছিলাম ৷ বিয়ের পর আমি নিরামিষ খাওয়া শুরু করি । কাজেই তাঁরা আর কী খাওয়াবে আমাকে । আমি মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি বলে ওঁরা দুঃখ পেয়েছিলেন । ভালো করে খাওয়াতে পারলেন না বলে আক্ষেপ করেছিলেন । আমি বলেছিলাম, ভালোই তো খেয়েছি, আমার তো আক্ষেপ নেই ৷ আপনারা কেন আক্ষেপ করছেন ? তারপর আর তেমন জামাইষষ্ঠী হয়নি । দূরত্ব ছিল আর একটু অসুবিধাও ছিল ।"

অংশুমান কর
অংশুমান কর

কবি অংশুমান করের কাছে জামাইষষ্ঠী বাঙাল-ঘটির সেতুবন্ধনের একটা দিন । যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে এ'বছর জামাইষষ্ঠীর কথা মনে ছিল না, অকপট স্বীকারোক্তি তাঁর । অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, "কাল জামাইষষ্ঠী? ভুলেই গেছিলাম । আমার প্রথম জামাইষষ্ঠী নিয়ে সত্যিকারের কোনও অভিজ্ঞতা নেই । একটা বড় ব্যাপার আছে । সেটা হল, আমরা পূর্ববঙ্গীয় ও আমার স্ত্রী এপার বঙ্গের । ওদের পরিবারে যেটা প্রচলিত ছিল সেটা হল "জামাই বাঁধনা" । সেটা একটা অন্যদিন ছিল । আমি যেহেতু পূর্ববঙ্গীয় জামাই, তাই আমার জন্যই ওদের বাড়িতে জামাইষষ্ঠীর দিনে জামাইষষ্ঠী পালন করা শুরু হয় । সেটা ছিল একটা অন্যরকম ব্যাপার । বাঙাল-ঘটির মধ্যে একটা বিদ্বেষের ব্যাপার থাকে । জামাইষষ্ঠী যেন সেই বিদ্বেষ কোথাও একটা জায়গায় গিয়ে মুছে দিয়েছিল । এছাড়া বিশেষ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি । তার একটা বড় কারণ হল, আমি ও আমার স্ত্রী দু'জনই বড় হয়েছি বেলিয়াতোড় গ্রামে । আমাদের বাড়িও একই পাড়াতে । ফলে জামাই অনেক দূরের মানুষ, অপরিচিত, দু-তিনবার মাত্র এসেছে, শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালক-শ্যালিকাদের তেমন করে চেনা হয়নি- আমার ক্ষেত্রে এর কোনওটাই ঘটেনি । তাই উত্তেজনাটা হয়ত খুব একটা বেশি ছিল না । তবে, যেটা বললাম সেটা সত্যি । ওদের পরিবারে এই জায়গাটাই ছিল না । ওদের জামাই বাঁধনা বলে একটা কিছু ছিল । যার বদলে পুরোদস্তুর জামাইষষ্ঠী পালন করার বিষয়টা এসে গেছিল । তবে, লকডাউনের কারণে এ'বছর জামাইষষ্ঠীর কথা আমরা সকলেই ভুলে গেছি । এত রকমের সংকট চতুর্দিকে । তাতে আমার মনে হয়, আগামী দু'এক বছর আড়ম্বরহীনভাবে সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় উৎসবগুলো উদযাপন করা উচিত ।"

প্রথম জামাইষষ্ঠীর অভিজ্ঞতা....
Last Updated : May 28, 2020, 2:44 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.