কলকাতা , 7 এপ্রিল : দীর্ঘদিনের বইয়ের ব্যবসা কলেজ স্ট্রিটে । 1978 সালের ভয়াবহ বন্যার সময়ও নববর্ষের অনুষ্ঠান হয়েছিল বই পাড়ার বই ঘরগুলিতে । কোরোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে এই প্রথম নতুন বছরের বই প্রকাশ বন্ধ থাকছে কলেজ স্ট্রিটের প্রকাশনা সংস্থাগুলিতে ।
কলেজ স্ট্রিটের প্রখ্যাত এক প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার বলেন, " কোরোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে ধাক্কা খেল বইয়ের ব্যবসা । এই প্রথম কলেজস্ট্রিটে পালিত হবে না বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান । প্রতিবছর কলেজ স্কোয়ারে নববর্ষের দিন থেকে শুরু হয় 12 দিনব্যাপী বইমেলা । রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ সেখানে ভিড় করেন । প্রচুর টাকার বই বিক্রি হয় । গত বছর বই বিক্রি করে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের আয় হয়েছিল প্রায় সাত লাখ টাকা । চলতি বছর লকডাউনের জেরে সেই ব্যবসা চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত ৷ "
দে'জ পাবলিশার্সের কর্ণধার সুধাংশু দে বলেন, " কোরোনার জন্য বুদ্ধদেব গুহর উপন্যাস সমগ্র, বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাস সমগ্র এবং প্রফুল্ল রায়ের গল্প সমগ্র প্রকাশিত হবে না নববর্ষে । সংশ্লিষ্ট বইগুলি বাংলা পয়লা বৈশাখে দে'জ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল । পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া এবং মহালয়াতে প্রচুর বাংলা বই প্রকাশিত হয় । কোরোনার জেরে এবছর কোনও নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে না মিত্র ঘোষ, দে'জ এবং আনন্দ পাবলিশার্স থেকে । সন্তোষ কুমার ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, পূর্ণেন্দু পত্রী, সমরেশ বসুরা প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে বই পাড়ায় এসে আড্ডা জমাতেন বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার ঘরে । পুরোনো সেই কথা মনে করিয়ে দিলেন দে'জ পাবলিশার্সের কর্ণধার সুধাংশু দে । তাঁর কথায়, প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে পাট ভাঙা, ধোপদুরস্ত ধুতি - পাঞ্জাবি পড়ে আসতেন সন্তোষ কুমার ঘোষ এবং সমরেশ বসু । জামা প্যান্টে স্বচ্ছন্দভাবেই আসতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, পূর্ণেন্দু পত্রীরা । তাঁদের শুভেচ্ছা বার্তা লিখতেন প্রকাশনা সংস্থার রেখে দেওয়া বড় একটি স্মরণ পত্রিকায় । মিষ্টিমুখ, শরবত , নতুন বইয়ের গন্ধে ম ম করত কলেজ স্ট্রিট । গুণমুগ্ধ পাঠকরা আসতেন প্রিয় লেখকদের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নিতে । প্রিয় লেখকদের সঙ্গে পাঠকদের দেখা হত পয়লা বৈশাখের দিন । সারা বছর অপেক্ষায় থাকতেন পাঠকরা । "
হালফিলে কলেজ স্ট্রিটের বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার ঘরে আসেন সমরেশ মজুমদার, বুদ্ধদেব গুহ, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী প্রমুখ । প্রতিবছর পয়লা বৈশাখের দিন লেখক-পাঠকের পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় এখনও চলে প্রকাশনা সংস্থার ঘরগুলিতে । প্রকাশক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এবছর বড়ই মিস করবেন বইপাড়ায় নববর্ষের বিকেল । "
ফুটপাথের বইবিক্রেতারা বলেন , "ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ল স্কুল পাঠ্য বইয়ের বিক্রেতারা । অধিকাংশ স্কুলের ফল প্রকাশ হয়ে গেলেও বই কিনতে আসছে না পাঠকরা । গোদের ওপর বিষফোঁড়া অনলাইনে পড়াশোনা । ইংরেজি নতুন বছরের পর থেকে এখনও পর্যন্ত মন্দা চলছে কলেজ স্ট্রিটে । বই বাঁধাই কারিগর থেকে শুরু করে, যাঁরা মুদ্রণ করেন, কাগজ বণ্টন করেন, প্রুফ দেখেন এবং সম্পাদনা করেন তাঁরা প্রত্যেকেই গৃহবন্দী । ফলে বই ব্যবসা লাটে উঠতে চলেছে । "