ETV Bharat / state

ভবানীপুর থেকে শেষ হাসি হাসতে পারবেন মমতা ? - পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন 2021

নন্দীগ্রামের লড়াইয়ে কে জিতবেন সেই দিকেই সবার নজর ৷ তবে আরও একটি কেন্দ্র রয়েছে যা মমতার রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ৷ সেটি ভবানীপুর ৷ এই ভবানীপুর থেকেই তিনি বাংলার বিধায়ক হয়েছে ৷ সোমবার ইভিএমে বন্দি হবে ভবানীপুরের রায় ৷ ভবানীপুর কি হাসি ফোটাবে নেত্রীর মুখে ? আলোচনায় দীপঙ্কর বসু ৷

Mamata Banerjee
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
author img

By

Published : Apr 25, 2021, 4:22 PM IST

তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর এক সময়ের কাছের মানুষ শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে লড়াইয়ের কারণে নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসনটি এবারের ভোটে আলোচনার কেন্দ্রতে পরিণত হয়েছে । অনেকে এটাকে লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেও উল্লেখ করেছেন ।

তবে নন্দীগ্রাম ছাড়াও আরও একটি আসন রয়েছে যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি, বাংলার রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকার উপর অনেকটাই প্রভাব বিস্তার করছে । সেটি হল দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের ভবানীপুর কেন্দ্র । এই ভবানীপুর কেন্দ্রটিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের বিধায়ক বানিয়েছে । সেই ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রটিতে সোমবার রাজ্যের সপ্তম ধাপে ভোট গ্রহণ হতে চলেছে ।

আর সে জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও স্পষ্ট করে বললে তৃণমূল কংগ্রেস এই আসনটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে । যে আসনটি পর পর দুই বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছে ।

2011 সালে যখন মমতা বামেদের হারিয়ে রাজ্যের শাসন ভার গ্রহণ করেছিলেন, সেবার 49,936 ভোটের বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন । এই আসনটিতে প্রায় 63.78 শতাংশ স্মার্ট ভোটার । মমতার জয়ের ব্যবধান ছিল 21.91 শতাংশ । স্পষ্টতই এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি ।

এর পর 2014 সালে লোকসভা নির্বাচন হয় । তিন বছরে এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা গোঁত্তা খায় । যদিও এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত বক্সী বিজেপির তথাগত রায়কে 136000 ভোটে লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত করেন । কিন্তু, তিনি ওই কেন্দ্র থেকে 185 ভোটে পিছিয়ে যান । মমতা বুঝে যান, তিন বছরে পরিস্থিতি বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে, ওই আসন সংখ্যা কমার একটা কারণ সমন্বয় সাধনের অভাব । আবার কলকাতা পুরসভার 73 নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট । এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ।

অন্তঃকলহ এবং বিভিন্ন সমন্বয়ের অভাব মিটিয়ে ওই আসনটি থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 2016 সালে বিধানসভায় নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন । সেই বছর এই আসনটি ছিল দিদি ( মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নামেই বাংলার রাজনীতিতে পরিচিত ) এবং বৌদি , দীপা দাশমুন্সির মধ্যে লড়াইয়ের ক্ষেত্র । দীপা দাশমুন্সি হলেন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এক কালে কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্ত্রী । বাম এবং কংগ্রেসের জোট প্রার্থী হয়ে সেবার ভোটে লড়াই করেছিলেন দীপা । তাঁর হয়ে প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন স্বয়ং রাহুল গান্ধি এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । স্বাভাবিক ভাবেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপার প্রচারে এই দুই নেতার অংশগ্রহণ অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল । কিন্তু, ফলাফল যখন সামনে আসে, তখন শেষ হাসি হেসেছিলেন মমতাই । তবে সেই হাসির জৌলুস অনেকটাই কমে গিয়েছিল । হাসিতে ছিল অন্ধকারের কালো আভাস । কারণ, 2011 সালে মমতা এই ভবানীপুর থেকে যে ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন, এবার সেই ব্যবধান অর্ধেকের থেকেও কমে গিয়েছিল । মমতা জয় পেয়েছিলেন 25,301 ভোটে । জয়ের ব্যবধান ছিল 10.21 শতাংশের । অন্য দিকে, বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রকুমার বোস পেয়েছিলেন 26,299টি ভোট । শতকরা হিসেবে 19.13 শতাংশ ।

আরও পড়ুন : শেষ দফার 23% প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা, খুনে অভিযুক্ত 6

আক্ষরিক অর্থে, ভবানীপুর এমন একটি কেন্দ্র যেখানে গুজরাতি, মারোয়ারি, শিখ সম্প্রদায়ের প্রবল উপস্থিতি রয়েছে । বাঙালিরা সংখ্যালঘু সীমানার খুব কাছে । এই বিধানসভার মধ্যেকার পুর ওয়ার্ড 63,70,72 এবং 74 বিজেপির চেনা মাঠ বলেই পরিচিত ।

এবার মমতা ভাবানীপুর থেকে প্রার্থী না হলেও, তিনি তাঁর বহু পরিচিত, দলের অন্যতম প্রবীণ -বিশ্বস্ত সদস্য শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে এখান থেকে প্রার্থী করেছেন । শোভনদেব বর্তমানে পাশের রাসবিহারী কেন্দ্র থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন গতবার । এবং 2016 সালের রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যও । তিনি বিজেপির অভিনেতা- রাজনীতিবিদ রুদ্রনীল ঘোষের বিরুদ্ধে ভবানীপুর থেকে লড়াই করছেন এবার । এই রুদ্রনীল যিনি, গত বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্তও তৃণমূল কংগ্রেসের লোক বলেই পরিচিত ছিলেন ।

2019 সালের শেষ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল 3168 টি ভোট পেলেও ওয়ার্ড নম্বর 73 তাঁর হাতছাড়া হয়েছিল । সেখান থেকে 496 ভোটে জিতেছিল বিজেপি । আর এই ওয়ার্ডেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির ঠিকানা ।

ভবানীপুর কেন্দ্রটি গেরুয়া ব্রিগেডের কাছে বরাবারই সম্মানের লড়াই । কারণ এখানেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মস্থান । ওই বিধানসভা কেন্দ্রটিতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস এবং সত্যজিত রায়ের জন্মস্থান । যদিও এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রাম চলে যাওয়ায় কিছুটা হলেও আসনটির জৌলুস কমেছে । তা সত্ত্বেও মমতা এবং বিজেপির এই লড়াইয়ে মর্যাদার মূল চাবিকাঠি অবশ্যই ভবানীপুরের হাতে ।

তৃণমূল সুপ্রিমো জানেন, বর্তমান পরিস্থিতি 2011 সালের মতো আর নেই । বিজেপি ঝড়ের গতিতে উঠে এসেছে । এখন প্রশ্ন বিজেপি পারবে ভবানীপুরে পদ্ম ফোটাতে, নাকি শেষ হাসি হাসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে 2 মে ।

(লেখক, ইটিভি ভারতের নিউজ কো-অর্ডিনেটর)

তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর এক সময়ের কাছের মানুষ শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে লড়াইয়ের কারণে নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসনটি এবারের ভোটে আলোচনার কেন্দ্রতে পরিণত হয়েছে । অনেকে এটাকে লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেও উল্লেখ করেছেন ।

তবে নন্দীগ্রাম ছাড়াও আরও একটি আসন রয়েছে যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি, বাংলার রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকার উপর অনেকটাই প্রভাব বিস্তার করছে । সেটি হল দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের ভবানীপুর কেন্দ্র । এই ভবানীপুর কেন্দ্রটিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের বিধায়ক বানিয়েছে । সেই ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রটিতে সোমবার রাজ্যের সপ্তম ধাপে ভোট গ্রহণ হতে চলেছে ।

আর সে জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও স্পষ্ট করে বললে তৃণমূল কংগ্রেস এই আসনটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে । যে আসনটি পর পর দুই বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছে ।

2011 সালে যখন মমতা বামেদের হারিয়ে রাজ্যের শাসন ভার গ্রহণ করেছিলেন, সেবার 49,936 ভোটের বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন । এই আসনটিতে প্রায় 63.78 শতাংশ স্মার্ট ভোটার । মমতার জয়ের ব্যবধান ছিল 21.91 শতাংশ । স্পষ্টতই এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি ।

এর পর 2014 সালে লোকসভা নির্বাচন হয় । তিন বছরে এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা গোঁত্তা খায় । যদিও এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত বক্সী বিজেপির তথাগত রায়কে 136000 ভোটে লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত করেন । কিন্তু, তিনি ওই কেন্দ্র থেকে 185 ভোটে পিছিয়ে যান । মমতা বুঝে যান, তিন বছরে পরিস্থিতি বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে, ওই আসন সংখ্যা কমার একটা কারণ সমন্বয় সাধনের অভাব । আবার কলকাতা পুরসভার 73 নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট । এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ।

অন্তঃকলহ এবং বিভিন্ন সমন্বয়ের অভাব মিটিয়ে ওই আসনটি থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 2016 সালে বিধানসভায় নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন । সেই বছর এই আসনটি ছিল দিদি ( মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নামেই বাংলার রাজনীতিতে পরিচিত ) এবং বৌদি , দীপা দাশমুন্সির মধ্যে লড়াইয়ের ক্ষেত্র । দীপা দাশমুন্সি হলেন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এক কালে কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্ত্রী । বাম এবং কংগ্রেসের জোট প্রার্থী হয়ে সেবার ভোটে লড়াই করেছিলেন দীপা । তাঁর হয়ে প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন স্বয়ং রাহুল গান্ধি এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । স্বাভাবিক ভাবেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপার প্রচারে এই দুই নেতার অংশগ্রহণ অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল । কিন্তু, ফলাফল যখন সামনে আসে, তখন শেষ হাসি হেসেছিলেন মমতাই । তবে সেই হাসির জৌলুস অনেকটাই কমে গিয়েছিল । হাসিতে ছিল অন্ধকারের কালো আভাস । কারণ, 2011 সালে মমতা এই ভবানীপুর থেকে যে ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন, এবার সেই ব্যবধান অর্ধেকের থেকেও কমে গিয়েছিল । মমতা জয় পেয়েছিলেন 25,301 ভোটে । জয়ের ব্যবধান ছিল 10.21 শতাংশের । অন্য দিকে, বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রকুমার বোস পেয়েছিলেন 26,299টি ভোট । শতকরা হিসেবে 19.13 শতাংশ ।

আরও পড়ুন : শেষ দফার 23% প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা, খুনে অভিযুক্ত 6

আক্ষরিক অর্থে, ভবানীপুর এমন একটি কেন্দ্র যেখানে গুজরাতি, মারোয়ারি, শিখ সম্প্রদায়ের প্রবল উপস্থিতি রয়েছে । বাঙালিরা সংখ্যালঘু সীমানার খুব কাছে । এই বিধানসভার মধ্যেকার পুর ওয়ার্ড 63,70,72 এবং 74 বিজেপির চেনা মাঠ বলেই পরিচিত ।

এবার মমতা ভাবানীপুর থেকে প্রার্থী না হলেও, তিনি তাঁর বহু পরিচিত, দলের অন্যতম প্রবীণ -বিশ্বস্ত সদস্য শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে এখান থেকে প্রার্থী করেছেন । শোভনদেব বর্তমানে পাশের রাসবিহারী কেন্দ্র থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন গতবার । এবং 2016 সালের রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যও । তিনি বিজেপির অভিনেতা- রাজনীতিবিদ রুদ্রনীল ঘোষের বিরুদ্ধে ভবানীপুর থেকে লড়াই করছেন এবার । এই রুদ্রনীল যিনি, গত বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্তও তৃণমূল কংগ্রেসের লোক বলেই পরিচিত ছিলেন ।

2019 সালের শেষ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল 3168 টি ভোট পেলেও ওয়ার্ড নম্বর 73 তাঁর হাতছাড়া হয়েছিল । সেখান থেকে 496 ভোটে জিতেছিল বিজেপি । আর এই ওয়ার্ডেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির ঠিকানা ।

ভবানীপুর কেন্দ্রটি গেরুয়া ব্রিগেডের কাছে বরাবারই সম্মানের লড়াই । কারণ এখানেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মস্থান । ওই বিধানসভা কেন্দ্রটিতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস এবং সত্যজিত রায়ের জন্মস্থান । যদিও এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রাম চলে যাওয়ায় কিছুটা হলেও আসনটির জৌলুস কমেছে । তা সত্ত্বেও মমতা এবং বিজেপির এই লড়াইয়ে মর্যাদার মূল চাবিকাঠি অবশ্যই ভবানীপুরের হাতে ।

তৃণমূল সুপ্রিমো জানেন, বর্তমান পরিস্থিতি 2011 সালের মতো আর নেই । বিজেপি ঝড়ের গতিতে উঠে এসেছে । এখন প্রশ্ন বিজেপি পারবে ভবানীপুরে পদ্ম ফোটাতে, নাকি শেষ হাসি হাসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে 2 মে ।

(লেখক, ইটিভি ভারতের নিউজ কো-অর্ডিনেটর)

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.