কলকাতা, 25 এপ্রিল : ভোট বড় বালাই । নির্বাচনের ঘণ্টা বাজলেই সমাজসেবীর আলখাল্লা পড়ে, পাশে থাকার আর্জি নিয়ে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা সকলেই আমজনতার সাহায্যে সদা তৎপর । অন্তত ভাবখানা সেইরকমই । চলতি বিধান সভা নির্বাচন সেই মনোভাবের মুখোশে একটা জোর টান দিয়েছে । যার সামনে বেআব্রু হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলির বিশেষ করে দক্ষিনপন্থীদের মনোভাব ।
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে নগ্ন করে দিয়েছে । কেন্দ্র এবং রাজ্যের বর্তমান সরকার পারস্পরিক দোষারোপের খেলায় মত্ত । অথচ নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে মানুষের পাশে দাড়ানোর ব্রত পালনের স্বদিচ্ছা নেই । শেষ দুই দফায় সত্তরের বেশি আসনে নির্বাচন বাকি । প্রচার বিধিমেনে চলছে । এই অবস্থায় গত ছয়টি দফার নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থী এবং তাদের দলের মানসিকতা মানুষের কাছে বড় ধাক্কা ।
কেষ্টপুরের এক বৃদ্ধ দম্পতি কোনও একটি প্রয়োজনে সেই অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন । আশ্চর্যজনক ভাবে কোনও সদুত্তর মেলেনি । অথচ একবছর আগে একই অসহায়তায় সাহায্য মিলেছিল । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বলছিলেন, "আসলে ভোট হয়ে গিয়েছে তাই মোটিভেশনে একটা আলগা ভাব ধরা পড়ছে । তাছাড়া প্রশান্ত কিশোরের আই প্যাকের স্কিম ছিল । দিদিকে বলো প্রজেক্টের অর্ন্তভুক্ত ছিল পুরোটা । এখন ভোট শেষ সব বন্ধ । তাছাড়া ছেলেরা নির্বাচনের জন্য খেটেছে ।এখন পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর । তাই বেশিরভাগই বেরোতে চাইছে না । আপনি বললেন, আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করব ।"
ভ্যাকসিন অপ্রতুল, অক্সিজেন মিলছে না, কোভিড পরীক্ষার লম্বা লাইনে অনেকেই আতঙ্কিত । এই অবস্থায় কোভিড টেস্টের ব্যবস্থা করলে উপকার হত বলছেন এবং মানছেন সকলে । কিন্তু উদ্যোগ সেই তিমিরে । বিজেপির কামারহাটি এবং পানিহাটি মণ্ডলের এক সভাপতি বলছেন, "দেখুন এমন কোনও নির্দেশ আসেনি । আমরা মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি । তবে পরিস্থিতিটা কঠিন । কোনও খবর পেলে অবশ্যই পাশে দাড়াচ্ছি ।"
এখানেই পার্থক্য করে দিয়েছেন বামপন্থী সংগঠন । বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ডাক্তার ফুয়াদ হালিম রবিবারও রোগী দেখায় ব্যস্ত রইলেন । সাতবার প্লাজমা দানকারী চিকিৎসক প্রার্থী বলেন, "আমি সারাবছর মানুষের পাশে থাকি । চিকিৎসক হিসেবে আমার কর্তব্য । সেখানে সবার আগে আমার কাছে মানুষ । দলমত নির্বিশেষে প্রার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছেন । সবাইকে বলব সচেতন, সাবধান হন । ভ্যাকসিন নিন ।রোগকে দূরে ঠেলুন, রোগীকে নয় । আক্রান্তের পাশে বিধিনিষেধ মেনে সাহায্যের হাত বাড়ান । যাতে সে অসহায় না বোধ করে ৷"
![Social activities of CPIM](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/wb-kol-01-left-back-in-social-work-copy-7203838_25042021143810_2504f_1619341690_27.jpg)
আরও পড়ুন : মন কি বাত বন্ধ করে কোভিড নিয়ে বলুন, মোদিকে খোঁচা মমতার
ক্ষমতায় না থাকলেও পাশে থাকার স্লোগান দিয়েছিল সিপিএম । মহম্মদ সেলিম বলেন, "কথাটা অসত্য নয় তা প্রমাণিত । শ্রমজীবী ক্যান্টিন, কমিউনিটি কিচেন করেগত একবছরে আমরাই মানুষের পাশে ছিলাম । এখন ভোট হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদের যুব শাখার কমরেডরা সাহায্যের ডালি নিয়ে পাশে দাড়াচ্ছে । আমরা নীতির কথা বলে ভোট চাইছি । পাশে দাড়িয়ে সহমর্মিতার হাত বাড়াচ্ছি ।এবার সিদ্ধান্ত মানুষের ৷"
বামেদের পোস্টার গার্ল মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলছেন ,"গত একবছরে কেন্দ্র রাজ্য দুই সরকার কোনও শিক্ষা নেয় না । পূজোর জন্য 37হাজার কমিটিকে মোট 185কোটি টাকা দিয়েছেন মাননীয়া । অথচ অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির পরিকল্পনা করেননি । এখনও পারস্পরিক দোষারোপের পালা চলছে । আগামী দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন । আমরা মানুষের পাশে ছিলাম, আছি থাকব ।"
এসএফআই এর রাজ্য সভাপতি সৃজন ভট্টাচার্য বলছেন, "মানুষের হয়ে কথা আমরাই বলি । নির্বাচন যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে কেউ বিশ্রাম নিচ্ছে না । বরং ফের কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে থাকছি ।"
এই পাশে থাকার মানসিকতা কি বাকি দুই দফার সত্তরের বেশি প্রার্থীপদে পার্থক্য গড়ে দেবে ? "আমি তো হাত গুনিনা।আমরা নীতির কথা নিয়ে নির্বাচনে লড়াই করছি।মানুষ বাকিটা ঠিক করবেন," বলছেন সেলিম।
ভোট বড় বালাই । নির্বাচনের আবহে বেআব্রু চেহারা সামনে নিয়ে আসছে কোভিড আবহ । তাই সমাজ সেবার নামে কাজ না করতে পারার আক্ষেপে চিড়ে ভিজবে না ।