ETV Bharat / state

Winter Memories: বিভুঁই থেকে মাকে শীতের চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাঙালি লেখক...

author img

By

Published : Jan 21, 2023, 2:34 PM IST

শীত মানে উৎসব ৷ শীত মানে আনন্দে মেতে ওঠা ৷ আবার এই শীত মানে নস্টালজিয়াও ৷ একটা সময়ে শীতের দিনে চিঠি লেখার চল ছিল ৷ এখন আর তা হয় না ৷ কিন্তু কখনও কখনও ফিরতেই হয় শিকড়ের টানে ৷ আমরাও ফিরলাম শীতের চিঠির কাছে ৷ ইটিভি ভারতের হয়ে এই কলামে কলম ধরবেন বিশিষ্টরা ৷ আজ বাংলাদেশের লেখক মহিবুল আলম...

Bangladeshi Writer Mohibul Alam sent letter to his mother during a Winter Season in New Zealand
শীতের চিঠি

প্রিয় শীত,

আজ তোমাকে একটা গল্প বলব ৷ তখন আমি নিউজিল্যান্ডে ৷ প্রায় দুই যুগ আগের ঘটনা ৷ কোনও এক ভোরে যখন মাকে মন খারাপের প্রথম চিঠি লিখতে বসি, তখন জানালার ওপাশে ছিল হিমশীতল ঠান্ডা ৷ তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নীচে ৷ রুমের ভিতর গায়ে দু'টো কম্বল চাপিয়ে, ইলেকট্রিক হিটার চালিয়েও সেই ঠান্ডা আটকানো যাচ্ছিল না ৷ সূর্যটা তখন উঠি-উঠি করছিল ৷

আমি চিঠি লিখতে লিখতে খানিকক্ষণ পর পর বাইরে তাকাচ্ছিলাম ৷ আমার ভিতর সে কী এক অনুভূতি ! নতুন দেশ, নতুন শহর ! তখন আমি বে অব প্লেন্টির মাউন্ট মাঙ্গানুই শহরে থাকতাম ৷ মাউন্ট মাঙ্গানুই শহরটা প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে বলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নামলেও তুষার পড়ত না ৷ যদিও নিউজিল্যান্ডের কোনও কোনও শহরে ভারী তুষারপাত হয় ৷

আরও পড়ুন: হারিয়ে যাওয়া প্রিয় শীতকে রতনতনুর চিঠি

হ্যাঁ, আমি যে কথা বলছিলাম ৷ আমি মাকে চিঠি লিখছিলাম, আর খানিকক্ষণ পর পর বাইরে তাকাচ্ছিলাম ৷ হঠাৎ দেখি, বাসার সামনের লনে ঘাসের ওপর সকালের সূর্যের প্রথম আলো পড়ে রুপোলি ঝিলিক দিচ্ছে ৷ আমি সেদিকে তাকিয়ে কী যে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ! মনে হচ্ছিল, অসংখ্য হীরে যেন লনের ঘাসের ওপর বিছানো রয়েছে ৷ কীসের হাড়কাঁপানো ঠান্ডা ! কীসের কী ! আমি এক মুহূর্ত দেরি না করে কম্বল দু'টো ঠেলে কোনও মতে গাউনটা গায়ে চাপিয়ে লনে নেমে আসি ৷ রাতে হিমাঙ্কের পাঁচ-সাত ডিগ্রি নীচে তাপমাত্রা ছিল ৷ ফলে সবুজ ঘাসের ওপর তখন হালকা তুষার জমেছে ! তাতে কী যে মায়াময় সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে ! আমি সেদিন রুমে ফিরে মাকে আর মন খারাপের চিঠি লিখিনি ৷ পায়ের নীচে মচমচ করে সাদা বরফ ভাঙার অপূর্ব অনুভূতিগুলোই লিখেছিলাম !

শীত, আরেকটা গল্প তোমাকে না বললেই নয় ৷ এক রাতে নেপিয়ার শহর থেকে একা হ্যামিলটন শহরে ফিরছিলাম ৷ পথে তিওরাঙ্গি নামে ছোট্ট একটা শহর পড়ে ৷ তখন প্রায় মধ্যরাত ৷ গাড়ি নিয়ে তিওরাঙ্গি শহর পার হচ্ছি ৷ হঠাৎ দেখি পেঁজা তুলোর মতো কী যেন উড়ছে ! আমি তখনই বুঝতে পারি, তুষার পড়ছে ! আমি এর আগে কখনও তুষারপাত দেখিনি ৷ আমি গাড়ি থামিয়ে দিই ৷ মুগ্ধ হয়ে তুষারপাত দেখতে থাকি ! আকাশে তখন আস্ত একটা চাঁদ ! তুষারপাত দেখতে দেখতে খানিকক্ষণ পর আমার মুগ্ধতা ছাপিয়ে প্রচণ্ড একটা কষ্ট এসে ধাক্কা দেয় ৷ কিছুদিন আগেই যে আমার মা মারা গিয়েছেন ক্যানসারে ৷ মাকে যে আর তুষারপাতের গল্প বলা হবে না...! অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে তো তোমাকে আর সেভাবে দেখতে পাই না, শীত ৷ কুইন্সল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার উষ্ণপ্রধান অঞ্চল ৷ তারপরও তুমি ভালো থেক ৷

ইতি-

মহিবুল

প্রিয় শীত,

আজ তোমাকে একটা গল্প বলব ৷ তখন আমি নিউজিল্যান্ডে ৷ প্রায় দুই যুগ আগের ঘটনা ৷ কোনও এক ভোরে যখন মাকে মন খারাপের প্রথম চিঠি লিখতে বসি, তখন জানালার ওপাশে ছিল হিমশীতল ঠান্ডা ৷ তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নীচে ৷ রুমের ভিতর গায়ে দু'টো কম্বল চাপিয়ে, ইলেকট্রিক হিটার চালিয়েও সেই ঠান্ডা আটকানো যাচ্ছিল না ৷ সূর্যটা তখন উঠি-উঠি করছিল ৷

আমি চিঠি লিখতে লিখতে খানিকক্ষণ পর পর বাইরে তাকাচ্ছিলাম ৷ আমার ভিতর সে কী এক অনুভূতি ! নতুন দেশ, নতুন শহর ! তখন আমি বে অব প্লেন্টির মাউন্ট মাঙ্গানুই শহরে থাকতাম ৷ মাউন্ট মাঙ্গানুই শহরটা প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে বলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নামলেও তুষার পড়ত না ৷ যদিও নিউজিল্যান্ডের কোনও কোনও শহরে ভারী তুষারপাত হয় ৷

আরও পড়ুন: হারিয়ে যাওয়া প্রিয় শীতকে রতনতনুর চিঠি

হ্যাঁ, আমি যে কথা বলছিলাম ৷ আমি মাকে চিঠি লিখছিলাম, আর খানিকক্ষণ পর পর বাইরে তাকাচ্ছিলাম ৷ হঠাৎ দেখি, বাসার সামনের লনে ঘাসের ওপর সকালের সূর্যের প্রথম আলো পড়ে রুপোলি ঝিলিক দিচ্ছে ৷ আমি সেদিকে তাকিয়ে কী যে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ! মনে হচ্ছিল, অসংখ্য হীরে যেন লনের ঘাসের ওপর বিছানো রয়েছে ৷ কীসের হাড়কাঁপানো ঠান্ডা ! কীসের কী ! আমি এক মুহূর্ত দেরি না করে কম্বল দু'টো ঠেলে কোনও মতে গাউনটা গায়ে চাপিয়ে লনে নেমে আসি ৷ রাতে হিমাঙ্কের পাঁচ-সাত ডিগ্রি নীচে তাপমাত্রা ছিল ৷ ফলে সবুজ ঘাসের ওপর তখন হালকা তুষার জমেছে ! তাতে কী যে মায়াময় সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে ! আমি সেদিন রুমে ফিরে মাকে আর মন খারাপের চিঠি লিখিনি ৷ পায়ের নীচে মচমচ করে সাদা বরফ ভাঙার অপূর্ব অনুভূতিগুলোই লিখেছিলাম !

শীত, আরেকটা গল্প তোমাকে না বললেই নয় ৷ এক রাতে নেপিয়ার শহর থেকে একা হ্যামিলটন শহরে ফিরছিলাম ৷ পথে তিওরাঙ্গি নামে ছোট্ট একটা শহর পড়ে ৷ তখন প্রায় মধ্যরাত ৷ গাড়ি নিয়ে তিওরাঙ্গি শহর পার হচ্ছি ৷ হঠাৎ দেখি পেঁজা তুলোর মতো কী যেন উড়ছে ! আমি তখনই বুঝতে পারি, তুষার পড়ছে ! আমি এর আগে কখনও তুষারপাত দেখিনি ৷ আমি গাড়ি থামিয়ে দিই ৷ মুগ্ধ হয়ে তুষারপাত দেখতে থাকি ! আকাশে তখন আস্ত একটা চাঁদ ! তুষারপাত দেখতে দেখতে খানিকক্ষণ পর আমার মুগ্ধতা ছাপিয়ে প্রচণ্ড একটা কষ্ট এসে ধাক্কা দেয় ৷ কিছুদিন আগেই যে আমার মা মারা গিয়েছেন ক্যানসারে ৷ মাকে যে আর তুষারপাতের গল্প বলা হবে না...! অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে তো তোমাকে আর সেভাবে দেখতে পাই না, শীত ৷ কুইন্সল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার উষ্ণপ্রধান অঞ্চল ৷ তারপরও তুমি ভালো থেক ৷

ইতি-

মহিবুল

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.