কলকাতা, 6 মে: ইতিহাস সাক্ষী ৷ যখনই মানুষ পথভ্রষ্ট হয়েছে তখনই ধর্ম শাস্ত্র অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে সে আবার ঠিক পথ খুঁজে পেয়েছে । তাই এবার সনাতন হিন্দু ধর্মে মানুষদের বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে শাস্ত্র জ্ঞান দিতে রাজ্যে পাঠ করা হবে শ্রীমদ্ভগবত গীতা । বৈদিক জ্ঞানে বিদগ্ধ সাধু সন্ন্যাসী এবং পণ্ডিতরা চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে কলকাতায় একসঙ্গে গীতা পাঠ করবেন । আর এই বিশেষ কর্মসূচির পরিচালনায় থাকছে বঙ্গ কুম্ভ মেলা পরিষদ ।
শাস্ত্র অনুসারে, পঞ্চ পাণ্ডবদের এক ভাই অর্জুন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বিরোধী পক্ষে থাকা নিকট আত্মীয়দের উপরেই অস্ত্র নিক্ষেপ করতে হবে দেখে চরম অবসাদ এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজের অস্ত্র ত্যাগ করেন। তখন তাঁর সারথি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের মনোবল ফেরাতে যে বাণী দিয়েছিলেন, তাই শ্রীমদ্ভাগবত গীতার উপপাদ্য। ঠিক এই ভাবনা থেকেই রাজ্যের মানুষের গীতার পাঠ মনে করিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ ৷ চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের 17 তারিখে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে এক লক্ষ সাধুসন্ত একসঙ্গে গীতা পাঠ করবেন ।
বঙ্গ কুম্ভ মেলা পরিষদের বক্তব্য, নতুন প্রজন্মের মানুষ গীতাকে ভুলতে বসেছে । গীতার চর্চা হচ্ছে না কোথাও । জানা গিয়েছে, এই মেগা গীতা পাঠ কর্মসূচি উদ্বোধনের জন্য হয়ত আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মুকে। তবে এই বিষয় এখনও চূড়ান্তভাবে কিছু জানা যায়নি। বঙ্গ কুম্ভ মেলা পরিষদের অন্যতম প্রধান সদস্য প্রসাদ মহারাজ জানান, নতুন প্রজন্মের মনে গীতার জ্ঞানকে জাগ্রত করতে হবে । স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বে সনাতনী হিন্দু ধর্মের প্রচার এবং প্রসার ঘটিয়ে ছিলেন ৷ তাই তাঁর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুনরায় যাতে সনাতনী ধর্মের জাগরণ ঘটানো সম্ভব হয় ৷ সেই লক্ষ্যেই এই গীতা পাঠ ।
রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন মঠ ও মিশন-সহ সমস্ত জায়গা থেকেই সাধু সন্ন্যাসী এবং মহারাজরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। ভারত সেবাশ্রম, প্রেম মন্দির, ইসকন, মহানির্মাণ মঠ, বিবেকানন্দ মঠ ও মিশন, রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মঠ এবং ছোট বড় সব আশ্রম থেকে সাধু এবং পণ্ডিতরা আসবেন। রাজনৈতিক মহলে এই গীতা পাঠ কর্মসূচিতে যে বঙ্গ বিজেপির একটা যোগ রয়েছে সেই বিষয় একটা জল্পনা চলছে। জানা গিয়েছে, এই মেগা অনুষ্ঠানকে সুসম্পন্ন করতে ইতিমধ্যেই বিজেপির অন্দরে সাধুদের নিয়ে কয়েক দফা প্রস্তুতি বৈঠকও হয়েছে।
তবে এ বিষয় প্রসাদ মহারাজ স্পষ্ট জানান, এই কর্মসূচির সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের যোগ নেই। এখানে রাজনৈতিক বিবাদ ভুলে সমস্ত জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ আসবেন। সাধুদের কাছে সমস্ত রাজনৈতিক দলই এক। এর আগে এই ধরনের গীতা পাঠের আসর বসেছিল মায়াপুরের ইসকন মন্দিরে। যেখানে 5 হাজার ভক্ত এবং সধুসন্তরা একসঙ্গে গীতা পাঠ করেছিলেন সেখানে। এর আগেও বঙ্গ কুম্ভ মেলা পরিষদের উদ্যোগে গতবছর কল্যাণীতে কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয় । আর এদেরই উদ্যোগে এখন ধর্মতলা চত্বরে চলছে ধর্ম ঠাকুরের পুজো ।
আরও পড়ুন: 'অবিভক্ত ভারতের পক্ষেই ছিল মুসলমান সমাজের বড় অংশ', তা তুলে ধরবে আন্তর্জাতিক কর্মশালা !