ETV Bharat / state

লকডাউনে রোজগারহীন কলকাতার লক্ষাধিক অটোচালক - কলকাতা

লকডাউনের জেরে সব বন্ধ ৷ শুধুমাত্র জরুরি কয়েকটা ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৷ কিন্তু সমস্যায় পড়েছেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলি ৷ যাঁদের মধ্যে অটোচালকরাও আছেন ৷ প্রত্যেকদিন তাঁদের প্রায় 500-600 টাকা রোজগার হত ৷ কিন্তু এখন তা পুরোপুরি বন্ধ ৷ জমানো টাকাও প্রায় শেষ ৷ অভিযোগ, সরকারি তরফে শ্রমিকদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ৷

Kolkata Auto
বেরোজগার অটোচালক
author img

By

Published : Apr 11, 2020, 4:43 PM IST

Updated : Apr 14, 2020, 9:29 PM IST

কলকাতা, 11 এপ্রিল : শুধু কলকাতা আর শহরতলিতেই লক্ষাধিক পরিবার । রাজ্যজুড়ে কয়েক লাখ । তাঁদের অবলম্বন তিন চাকার অটো । তাতেই চলে পেট । সংসার প্রতিপালন । লকডাউনের জেরে সেই সংসারগুলিতে নেমে এসেছে অন্ধকার । সরকারি তরফে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । আর শাসকদলের শ্রমিক ইউনিয়নের সভানেত্রী দোলা সেনের বক্তব্য, সেদ্ধ ভাত খেয়ে কোনওরকমে বেঁচে থাকুন । এর বেশি আর কী করতে পারি ? কী-ই বা করার আছে ?



গড়িয়া-যাদবপুর কিংবা গড়িয়াহাট , উলটোডাঙা হোক বা খিদিরপুর । হলুদ সবুজের তিন চাকার যানগুলি কালো পিচ রাস্তা ধরে ছোটে অনবরত । সাধারণ সময়ে অটোওয়ালাদের দৌরাত্ম নিয়ে অভিযোগের অন্ত থাকে না । অটোর দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ হলেও, কলকাতাও জানে ওই তিন চাকার গুরুত্ব । বহু জায়গায় অটোই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম । কিন্তু আজ সেই অটোওয়ালারাই সমস্যায় পড়েছেন ৷

কী বলছেন অটোচালকরা ? শুনে নিন
রাজ্য পরিবহন দপ্তরের কাছে নথিবদ্ধ যে রিপোর্ট রয়েছে সেটি 2018 সালের । সেই রিপোর্ট বলছে , কলকাতায় সবথেকে বেশি মানুষ ব্যবহার করেন বাস । সপ্তাহের সাধারণ দিনগুলিতে রোজ 58.3 লাখ মানুষ ব্যবহার করেন বাস । ট্রেন ব্যবহার করেন 33.9 লাখ মানুষ । অটো ব্যবহার করেন 31.5 লাখ জনতা । আর মেট্রো সফর করেন 6.4 লাখ মানুষ । গত দু'বছরে সবকটিতেই যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক লাখ । অর্থাৎ এই মুহূর্তে কলকাতায় অটো যাত্রীর সংখ্যা প্রায় 33 লাখ । অর্থাৎ সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকে কলকাতার তৃতীয় বৃহত্তম পরিবহন মাধ্যম অটো ।নথিবদ্ধ হিসাব বলছে , 2016 সালে শুধুমাত্র কলকাতায় অটো চলত 40,740 টি । 2017 সালে তা বেড়ে হয় 42,120 টি । 2018 সালে সংখ্যাটা দাঁড়ায় 44,110 টি । আর বিগত দু'বছরে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে 50 হাজারের কিছু বেশি । এটা নথিভুক্ত অটোর হিসাব । বাস্তব তথ্য বলছে , শুধুমাত্র কলকাতা শহরে এর সঙ্গে আরও প্রায় হাজার দশেক নথিভুক্তহীন অটো চলে । উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব শহরতলি মিলিয়ে আইনি-বেআইনি অটোর সংখ্যা প্রায় 1 লাখ 10 হাজারের মতো । প্রতি পরিবারে পাঁচ জন করে হিসেব করলে শুধুমাত্র কলকাতা ও শহরতলিতে অটোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত প্রায় 10 লাখ মানুষের ভবিষ্যত । কারণ , অনেক ক্ষেত্রেই একটি অটো দু'জন ব্যবহার করে । দেখা যায় , অটোর মূল মালিক চালালেন একবেলা । বাকি সময়টা চালান অন্য অটো ড্রাইভার । তিনি মালিকের থেকে একটি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে অটো নিয়ে যান । সেই অটোর ভাড়া খেটে মালিককে নির্দিষ্ট পয়সা দেওয়ার পর বাকি টাকাতে চালান সংসার । অটো ড্রাইভাররা জানাচ্ছেন , সেই সংখ্যাটা নেহাত কম নয় । এই বিপুল পরিবহন শ্রমিক এই মুহূর্তে দিন কাটাচ্ছেন অনিশ্চয়তার অন্ধকারে । জমানো টাকা শেষের পথে । নতুন করে কোন রোজগার নেই । সংসার নিয়ে কীভাবে চলবেন বুঝতে পারছেন না ওঁরা । সোদপুরে অটো চালায় গোপাল সাহা , বাপি মণ্ডল , সুজিত দাস-রা । প্রত্যেকের গলাতেই একসুর । তাঁরা বললেন , “ 15 দিন ধরে অটো পুরোপুরি বন্ধ । সংসার চলে এই অটোর উপরেই । অন্যান্য সময় যে 500 -600 টাকা রোজ রোজগার হত , এখন পুরোপুরি বন্ধ । কোনওরকমে একবেলা খেতে পারছি । অটো ইউনিয়ন থেকে মিন্টু ঘোষ, বাবাই দাস চাল, আলু দিয়ে সাহায্য করেছিলেন । তাতেই চলছে সংসার ।" স্থানীয় অটো ইউনিয়নের নেতা মিন্টু ঘোষ বলেন , “ আমরা যতটা পারছি সাহায্য করছি । একটা কথা বলতে পারি , যদি আমরা একবেলা খেয়ে থাকি , অটোওয়ালারাও একবেলা খেতে পাবে ।" অভিযোগ , অনেক জায়গায় ইউনিয়ন এগিয়ে আসেনি । অথচ, যে কোনও মিটিং মিছিলে সামনের সারিতে রাখা হয় এই অটো ড্রাইভারদেরই । রাজ্যের INTTUC সভানেত্রী দোলা সেন বলেন , “ শুধু অটো কেন, বাস, লরি, টোটো চালিয়ে প্রচুর মানুষ সংসার প্রতিপালন করেন । আমাদের রাজ্যে 8 কোটি মানুষ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক । রাজ্য সরকারের তরফে অসংগঠিত শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে 1000 টাকা করে দেওয়া হচ্ছে । সঙ্গে রেশনে বিনামূল্যে চাল দেওয়া হচ্ছে । আপাতত সেদ্ধ ভাত খেয়ে কোনও রকমে বেঁচে থাকতে হবে । ইউনিয়নের দিক থেকে আমরা কী করতে পারি ? যা করার সরকার করছে ।"

কলকাতা, 11 এপ্রিল : শুধু কলকাতা আর শহরতলিতেই লক্ষাধিক পরিবার । রাজ্যজুড়ে কয়েক লাখ । তাঁদের অবলম্বন তিন চাকার অটো । তাতেই চলে পেট । সংসার প্রতিপালন । লকডাউনের জেরে সেই সংসারগুলিতে নেমে এসেছে অন্ধকার । সরকারি তরফে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । আর শাসকদলের শ্রমিক ইউনিয়নের সভানেত্রী দোলা সেনের বক্তব্য, সেদ্ধ ভাত খেয়ে কোনওরকমে বেঁচে থাকুন । এর বেশি আর কী করতে পারি ? কী-ই বা করার আছে ?



গড়িয়া-যাদবপুর কিংবা গড়িয়াহাট , উলটোডাঙা হোক বা খিদিরপুর । হলুদ সবুজের তিন চাকার যানগুলি কালো পিচ রাস্তা ধরে ছোটে অনবরত । সাধারণ সময়ে অটোওয়ালাদের দৌরাত্ম নিয়ে অভিযোগের অন্ত থাকে না । অটোর দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ হলেও, কলকাতাও জানে ওই তিন চাকার গুরুত্ব । বহু জায়গায় অটোই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম । কিন্তু আজ সেই অটোওয়ালারাই সমস্যায় পড়েছেন ৷

কী বলছেন অটোচালকরা ? শুনে নিন
রাজ্য পরিবহন দপ্তরের কাছে নথিবদ্ধ যে রিপোর্ট রয়েছে সেটি 2018 সালের । সেই রিপোর্ট বলছে , কলকাতায় সবথেকে বেশি মানুষ ব্যবহার করেন বাস । সপ্তাহের সাধারণ দিনগুলিতে রোজ 58.3 লাখ মানুষ ব্যবহার করেন বাস । ট্রেন ব্যবহার করেন 33.9 লাখ মানুষ । অটো ব্যবহার করেন 31.5 লাখ জনতা । আর মেট্রো সফর করেন 6.4 লাখ মানুষ । গত দু'বছরে সবকটিতেই যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক লাখ । অর্থাৎ এই মুহূর্তে কলকাতায় অটো যাত্রীর সংখ্যা প্রায় 33 লাখ । অর্থাৎ সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকে কলকাতার তৃতীয় বৃহত্তম পরিবহন মাধ্যম অটো ।নথিবদ্ধ হিসাব বলছে , 2016 সালে শুধুমাত্র কলকাতায় অটো চলত 40,740 টি । 2017 সালে তা বেড়ে হয় 42,120 টি । 2018 সালে সংখ্যাটা দাঁড়ায় 44,110 টি । আর বিগত দু'বছরে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে 50 হাজারের কিছু বেশি । এটা নথিভুক্ত অটোর হিসাব । বাস্তব তথ্য বলছে , শুধুমাত্র কলকাতা শহরে এর সঙ্গে আরও প্রায় হাজার দশেক নথিভুক্তহীন অটো চলে । উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব শহরতলি মিলিয়ে আইনি-বেআইনি অটোর সংখ্যা প্রায় 1 লাখ 10 হাজারের মতো । প্রতি পরিবারে পাঁচ জন করে হিসেব করলে শুধুমাত্র কলকাতা ও শহরতলিতে অটোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত প্রায় 10 লাখ মানুষের ভবিষ্যত । কারণ , অনেক ক্ষেত্রেই একটি অটো দু'জন ব্যবহার করে । দেখা যায় , অটোর মূল মালিক চালালেন একবেলা । বাকি সময়টা চালান অন্য অটো ড্রাইভার । তিনি মালিকের থেকে একটি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে অটো নিয়ে যান । সেই অটোর ভাড়া খেটে মালিককে নির্দিষ্ট পয়সা দেওয়ার পর বাকি টাকাতে চালান সংসার । অটো ড্রাইভাররা জানাচ্ছেন , সেই সংখ্যাটা নেহাত কম নয় । এই বিপুল পরিবহন শ্রমিক এই মুহূর্তে দিন কাটাচ্ছেন অনিশ্চয়তার অন্ধকারে । জমানো টাকা শেষের পথে । নতুন করে কোন রোজগার নেই । সংসার নিয়ে কীভাবে চলবেন বুঝতে পারছেন না ওঁরা । সোদপুরে অটো চালায় গোপাল সাহা , বাপি মণ্ডল , সুজিত দাস-রা । প্রত্যেকের গলাতেই একসুর । তাঁরা বললেন , “ 15 দিন ধরে অটো পুরোপুরি বন্ধ । সংসার চলে এই অটোর উপরেই । অন্যান্য সময় যে 500 -600 টাকা রোজ রোজগার হত , এখন পুরোপুরি বন্ধ । কোনওরকমে একবেলা খেতে পারছি । অটো ইউনিয়ন থেকে মিন্টু ঘোষ, বাবাই দাস চাল, আলু দিয়ে সাহায্য করেছিলেন । তাতেই চলছে সংসার ।" স্থানীয় অটো ইউনিয়নের নেতা মিন্টু ঘোষ বলেন , “ আমরা যতটা পারছি সাহায্য করছি । একটা কথা বলতে পারি , যদি আমরা একবেলা খেয়ে থাকি , অটোওয়ালারাও একবেলা খেতে পাবে ।" অভিযোগ , অনেক জায়গায় ইউনিয়ন এগিয়ে আসেনি । অথচ, যে কোনও মিটিং মিছিলে সামনের সারিতে রাখা হয় এই অটো ড্রাইভারদেরই । রাজ্যের INTTUC সভানেত্রী দোলা সেন বলেন , “ শুধু অটো কেন, বাস, লরি, টোটো চালিয়ে প্রচুর মানুষ সংসার প্রতিপালন করেন । আমাদের রাজ্যে 8 কোটি মানুষ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক । রাজ্য সরকারের তরফে অসংগঠিত শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে 1000 টাকা করে দেওয়া হচ্ছে । সঙ্গে রেশনে বিনামূল্যে চাল দেওয়া হচ্ছে । আপাতত সেদ্ধ ভাত খেয়ে কোনও রকমে বেঁচে থাকতে হবে । ইউনিয়নের দিক থেকে আমরা কী করতে পারি ? যা করার সরকার করছে ।"
Last Updated : Apr 14, 2020, 9:29 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.