কলকাতা, 27 নভেম্বর: গত এক সপ্তাহে কলকাতা পুলিশ এবং বিধাননগর কমিশনারেটের আওতাধীন এলাকায় মোট চারটি অস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনায় এবার উদ্বিগ্ন লালবাজার। ইতিমধ্যেই পুলিশের তরফে প্রত্যেকটি ঘটনার পৃথক তদন্ত শুরু করা হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে প্রশ্ন একটাই, তা হল কেন এই প্রকারের ঘটনা বেড়ে চলেছে? তাহলে কি পুলিশের নিজের এলাকায় দখল বলে কিছুই নেই? এই বিষয়ে রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এডিজি নজরুল ইসলাম ইটিভি ভারতকে বলেন, "এক্ষেত্রে পুলিশের ব্যর্থতা হল প্রধান কারণ। রাজ্য পুলিশ হোক বা কলকাতা পুলিশ, সব জায়গাতেই নাইট পেট্রলিং থেকে শুরু করে নাকা তল্লাশির ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে শহর কলকাতার রাস্তায় রাতের বেলায় কোন পেট্রলিং হয় না। ফলে রাতের দিকে অপরাধীরা বেতাজ বাদশার মতো রাস্তায় অবাধ ঘোরাফেরা করতে সক্ষম হয়।"
তাঁর কথায়, "দ্বিতীয় কারণ হল, পুলিশের নিজেদের এলাকায় দখল একেবারেই কমে গিয়েছে। এলাকায় কোন ব্যক্তি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তার কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই সংশ্লিষ্ট থানার অ্যান্টি রাউডি অফিসারদের কাছে। এছাড়াও রাজনৈতিক চাপে পড়ে অনেক সময় পুলিশকর্মীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে কোনও অভিযুক্তকে থানায় আনার পরেই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একাধিক নেতারা তাদের জামিনের ব্যবস্থা করে দেয় কিংবা থানা থেকেই ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করে নেয়। ফলে তারা এইটুকু বুঝতে শিখে গিয়েছে, তারা যতই অপরাধ প্রবণতার সঙ্গে যুক্ত থাকুক না কেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকলে তারা পুলিশের জাল থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারবে।"
এদিন রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আধিকারিক নজরুল ইসলামের দাবি, শুধুমাত্র যে পুলিশের দায়ী এমন ঘটনার জন্য, তা নয়। তিনি সরাসরি বিচার ব্যবস্থাকেও সামনে এনেছেন। তিনি বলেন, "অভিযুক্তদের মামলা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন আদালতে জমা হয়ে থাকে। আর তার ফলেই অপরাধীরা জামিন পেয়ে এলাকায় তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।"
সম্প্রতি টাকা-পয়সাকে কেন্দ্র করে বচসার জেরে এক যুবক অপর এক যুবককে ছুরি দিয়ে কোপায় ৷ ঘটনায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়। পরে অবশ্য পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। এরপরের দিনই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় চিতপুর থানার পুলিশ। সেই ঘটনার ঠিক পরের দিনই দক্ষিণ কলকাতার ময়দানে ফের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টার ঘটনা ঘটে। রহস্যজনকভাবে ঠিক তার পরের দিনই বিধাননগর কমিশনারেটের আওতাধীন চিংড়িঘাটায় দুই যুবকের হাতাহাতি এবং সেখান থেকে এক যুবক অন্য যুবককে গলায় কাঁচি চালিয়ে খুন করে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের এদিন সকালে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকায় এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যাকারীর ঘটনা সামনে এসেছে ৷
আরও পড়ুন