কামারহাটি, 21 মার্চ: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে (Recruitment Scam) ধৃত অয়ন শীলের বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তীর (Ayan Girlfriend Flat at Kamarhati) নাম উঠে এসেছে ইডি-র তদন্তে ৷ ইডি সূত্রে গতকালই জানা যায়, ধৃত অয়ন শীলের হোয়াটসঅ্যাপে একটি নম্বর থেকে 'ইডি আসতে পারে' এই খবর এসেছিল ৷ অয়নকে পালিয়ে যাওয়ার উপদেশও দেওয়া হয় সেই নম্বর থেকে । এরপর নম্বর যাচাই করে জানা যায়, মেসেজটি পাঠিয়েছিলেন অয়নের বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তী (Sweta Chakraborty Latest News)।
শ্বেতার বাড়ি নৈহাটী পৌরসভার 19 নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়নগর জেলাপাড়াতে । প্রথমে হুগলি জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে চুক্তিভিত্তিক এসটিপি (Skill Technical Person) পদে চাকরি করতেন তিনি । তখন অয়ন শীল হুগলির চুঁচুড়া যগুদাস পাড়ার আদি বাড়িতে থাকতেন । সেই সময় কোনও ভাবে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় শ্বেতা চক্রবর্তীর । তারপর থেকে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ।
এরপর কামারহাটি পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরিতে যোগ দেন শ্বেতা । তাঁর বাবা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাক্তন কর্মী । শ্বেতাকে অয়ন শীল (Ayan Sil Latest News) 25 লক্ষ টাকা দিয়ে একটি সাদা এক্সইউভি গাড়ি দিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে । অয়ন শীলের প্রোমোটারি-সহ বিভিন্ন ব্যবসা সামাল দিতেন শ্বেতা । তাঁর সঙ্গে অয়ন শীলের জয়েন্ট অ্যাকাউন্টেরও হদিশ পেয়েছে ইডি । তাতে মোটা অংকের লেনদেনও হয়েছে বলে দেখা গিয়েছে ।
এছাড়া ইডি-র তদন্তে বেশকিছু জায়গায় ফ্ল্যাটের হদিশ মিলেছে । তার মধ্যে কামারহাটি পৌরসভার সামনেই একটি আবাসনে শ্বেতার ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গিয়েছে । এলাকার বাসিন্দারা ভাবতেই পারছেন না যে, এমন চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে শ্বেতার নাম । তবে বিলাসবহুল সাদা রঙের এক্সইউভি গাড়িতে তাঁকে যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে ।
শ্বেতা চক্রবর্তীর বাবার দাবি, অয়নের ব্যবসার প্রোমোশনে অ্যাম্বাসাডর হিসেবে কাজ করতেন তাঁর মেয়ে । পরবর্তীকালে অয়ন শীলের স্ত্রী কাকলি শীল অয়নের বিভিন্ন ব্যবসায় সাহায্য করতে বলেন শ্বেতাকে । তখন থেকেই তিনি অয়নের ব্যবসা দেখাশোনার কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন শ্বেতার বাবা । তাঁর দাবি, বিলাসবহুল গাড়ির জন্য অয়ন 4-5 লাখ টাকা দিয়েছিলেন মাত্র । মেয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে না জানিয়ে লেনদেন হয়ে থাকতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি । তবে তাঁর মেয়ে কোনও দুর্নীতিক সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন শ্বেতার বাবা অরুণ চক্রবর্তী ।
আরও পড়ুন: অয়নের সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলল তাঁর বান্ধবীর, কে এই শ্বেতা ?
এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলার পার্থপ্রতিম দাশগুপ্ত জানান, "আমরা একে চিনিই না ৷ ভোটের সময় তাঁদের কাছে হয়তো ভোট চাইতে গিয়েছি ৷ কিন্তু তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে আমরা চিনি না এবং তাঁরা কী করেন সেটাও আমরা জানি না ৷" তাঁর পালটা অভিযোগ, 34 বছরের বাম আমলে বহু লোক চিরকুটের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন । তাঁদের যদি বরখাস্ত করা হত, তাহলে পৌরসভা খালি হয়ে যেত বলে দাবি করেন তিনি । পার্থপ্রতিমের দাবি, "আমাদের আমলে চাকরি হয়েছে ৷ তবে সেখানে কোনও আর্থিক দুর্নীতি হয়নি ।"
এই ঘটনায় সিপিআইএম নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায় বলেন, শুধু নৈহাটি নয়, বাংলার সর্বত্র এ রকম দুর্নীতি হয়েছে । এইসব ছোটখাটো লোকদের না ধরে যাঁরা মাথা, তাঁদের ধরা উচিত বলে মনে করেন তিনি ৷ তাঁর দাবি, পৌরসভা, কলেজ ও বিভিন্ন খাতে নৈহাটিতে চরম দুর্নীতি হয়েছে ৷ এই নিয়ে তাঁর দল আন্দোলনে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিপিআইএম নেত্রী ৷