কলকাতা, 1 নভেম্বর: নবান্নে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করে ফের একবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তবে বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম না নিলেও মুখ্যমন্ত্রী ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন এইভাবে গ্রেফতার করে দমানো যাবে না ৷ তাঁর কথায়, "নির্বাচনের আগে বিরোধীদের গ্রেফতার করতে হবে ! এটা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলছে ৷ বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে ৷"
অন্যদিকে, জ্যোতিপ্রিয় নিয়ে প্রশ্ন উঠলে 'রাজনৈতিক বিষয়' বলে সাংবাদিক সম্মেলনে এড়িয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "এ বিষয়ে সঠিক প্রতিক্রিয়া দিতে পারেন আমার দলের রাজনৈতিক মুখপাত্র।"
এদিন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, "অবশ্যই তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য। ডিজিটাল রেশন কার্ড চালু করতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এক কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড তিনি বাতিল করেছিলেন। তিনি কৃষকদের কাছ থেকে ধান প্রোকিওরমেন্টের যে পদক্ষেপ করেন তাকে গ্রিন রেভলিউশন বলা চলে। অন্য আইনি প্রশ্নের আমি এখন উত্তর দেব না। এ বিষয়ে নিজেকেই নিজের ডিফেন্ড করতে হবে। আমি শুধু তাঁর শারীরিক সুস্থতা কামনা করছি।"
এদিন রেশন ব্যবস্থা নিয়ে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বাম আমলে রেশন ব্যবস্থাকে শেষ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রায় এক কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড ছিল। এই ভুয়ো রেশন কার্ডের টাকা কোথায় যেত ! আমরা ধীরে ধীরে এই রেশন কার্ড বাতিল করেছি। রেশন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করেছি।" মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম তখন এক কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড ছিল। যারা বড় বড় কথা বলছেন সেই এক কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড থাকা মানে সেটা তারা তুলতেন। এই টাকাটা কোথায় যেত ? আজ পর্যন্ত তার কোনও তদন্ত হয়েছে। এই কাজটা করতে গিয়ে আমাদের সাত-আট বছর সময় লেগেছে। এক কোটি রেশন কার্ড আমরা বাতিল করেছি। অনেক দালাল মানুষের রেশন বাইরে বিক্রি করে দিত। তাদের বিরুদ্ধে আমরাই কেস করেছি। গ্রেফতার করা হয়েছে এবং চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে। এক সময় ফুড কর্পোরেশন আধভাঙা চাল দিত ৷ পরে তাও বন্ধ করে দিয়েছিল। ইতিহাসটা সকলের জানা উচিত। যখন তারা বন্ধ করে দিল রেশন সিস্টেমটা বন্ধ হওয়ার মুখে চলে গিয়েছিল। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই ভাঙাচাল খাওয়ার থেকে আমরা চাষির ঘর থেকে চাল কিনব। গত চার পাঁচ বছর ধরে সে কারণেই চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে কৃষকদের থেকে। বিনা পয়সায় রেশন দিতে গিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে 23-24 টাকায়। কিন্তু কৃষকরা দাম পাচ্ছেন।"
আরও পড়ুন: গুরুদেব আমাদের রক্তে, তাঁর সম্মানের খেয়াল রাখা প্রয়োজন; বললেন রাজ্যপাল
একইভাবে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "এই সরকার রেশন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতেই ডিজিটাল রেশন কার্ড চালু করেছে। এতেও সময় লেগেছে , এতদিনে গোটা বিষয়টি কার্যকরী হয়েছে।" মোটের উপর এদিন আরও একবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ শোনা গেল। সাংবাদিকদের তরফ থেকে তাকে জ্যোতিপ্রিয় এবং মহুয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, গোটা বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইস্যু বলেও, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার তত্ত্ব খাড়া করেছেন তিনি।