কলকাতা, 6 জুন : গাইডলাইনে এমনটা বলা হয়নি । অথচ, কোনও COVID-19 রোগীর মৃত্যু হলে, শেষ বারের মতো প্রিয়জনকে দেখতে পাচ্ছেন না পরিজনরা । শেষকৃত্যেও থাকতে পারছেন না । শুধুমাত্র তাই নয় । বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠছে, হাসপাতালে ভরতির পরে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে আর খোঁজখবর পাচ্ছেন না পরিজনরা । তাঁরা যখন ওই রোগীর বিষয়ে জানতে পারছেন, তখন তাঁদের প্রিয়জন আর বেঁচে নেই । এই ধরনের বিভিন্ন অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার অবিলম্বে অবসান চাইছে সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ ।
সরকারি গাইডলাইনের বক্তব্য অনুযায়ী, বিষয়টি এমন নয় যে, কোনও COVID-19 রোগীর মৃত্যু হলে, মৃত ওই রোগী অর্থাৎ, প্রিয়জনকে শেষবারের মতো দেখতে পাবেন না তাঁর পরিজনরা । এই গাইডলাইন অনুযায়ী বিষয়টি এমন নয় , সরকারি নিয়ম মেনে মৃত ওই রোগীর শেষকৃত্যেও থাকতে পারবেন না পরিজনরা । অথচ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠছে, মৃত রোগীর শেষকৃত্যর পরে পরিজনরা জানতে পারছেন COVID-19 আক্রান্ত তাঁদের প্রিয়জন আর বেঁচে নেই । বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিযোগও উঠছে বিভিন্ন ৷ COVID-19 পজ়িটিভ ধরা পড়ার পরে প্রিয়জনকে সেই যে হাসপাতালে ভরতি করানো হল ৷ তারপর থেকে আর খোঁজখবর পাননি পরিজনরা । তাঁরা খবর পেলেন ওই রোগীর মৃত্যুর পরে । অভিযোগ, এ রাজ্যে চলতে থাকা এই ধরনের বিভিন্ন অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার যাতে অবিলম্বে অবসান হয় ৷ সেজন্য আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিল রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ । হাসপাতালে ভরতি করানোর পরে COVID-19 আক্রান্ত প্রিয়জনের খোঁজে হাসপাতালে গিয়ে পরিজনরা জানতে পেরেছেন, তাঁদের প্রিয়জনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়ে গেছে । অথবা, হাসপাতালে ভরতি করানোর পরে COVID-19 আক্রান্ত প্রিয়জনের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে আর কোনও খোঁজখবর পাননি পরিজনরা । পরে, স্বাস্থ্যদপ্তরের ফোনে পরিজনরা জানতে পেরেছেন, তাঁদের প্রিয়জন আর বেঁচে নেই ।
এই ধরনের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন ৷ অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ । ওই চিঠিতে এমনই জানানো হয়েছে ৷ COVID-19 নির্ণয় হওয়ার পরে কোনও রোগীকে সেই যে বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ তারপর থেকে ওই রোগীর পরিজনদের সঙ্গে ন্যুনতম যোগাযোগ রাখা হয় না স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফে । হাসপাতালে চিকিৎসাধীন COVID-19 রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও, ওই রোগীর সঙ্গে তাঁর পরিজনদের যোগাযোগ হয়নি । এক্ষেত্রে, কোনও অজ্ঞাত কারণে হাসপাতালে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার জন্য যেমন ওই রোগী তাঁর পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি । তেমনই, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফেও ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে রোগীর সঙ্গে তাঁর পরিজনদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়নি । এই ধরনের ঘটনা যেমন পরিজনদের মানসিক যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয় ৷ তেমনই চিকিৎসাধীন রোগীর মনের উপরেও প্রভাব ফেলে । এর থেকেও বেশি যন্ত্রণাদায়ক, যখন দুর্ভাগ্যবশত কোনও COVID-19 রোগীর মৃত্যু হয় । সবকিছু সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরে পরিজনরা জানতে পারেন রোগীর মৃত্যু হয়ে গেছে । লজ্জাজনকভাবে মৃত রোগীর শেষকৃত্যর দিনক্ষণ সম্পর্কে অন্ধকারে রাখা হয় পরিজনদের । প্রিয়জনকে শেষবারের মতো দেখার সুযোগও দেওয়া হয় না পরিজনদের । এই ধরনের বিভিন্ন ঘটনা অমানবিক ও অসম্মানজনক । এই ধরনের ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে । এমনই জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে ।
এই ধরনের বিভিন্ন ঘটনার অবিলম্বে অবসানের জন্য গতকাল সরকারি চিকিৎসকদের এই সংগঠনের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে তাঁর হস্তক্ষেপের আর্জি জানানো হয়েছে । ওই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে কয়েকটি পরামর্শও দেওয়া হয়েছে । যার মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে ভিডিয়ো কলের ব্যবস্থা । এর ফলে রোগীর সঙ্গে তাঁর পরিজনদের যোগাযোগ থাকবে । কোনও COVID-19 রোগীর মৃত্যু হলে, প্রিয়জনকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ থেকে পরিজনকে বঞ্চিত করা যাবে না । মৃত COVID-19 রোগীর শেষকৃত্যের সময় COVID-19-এর প্রোটোকল অনুযায়ী পরিজনকে থাকার অনুমতি দিতে হবে ।
COVID-19 : গাইডলাইনস অন ডেড বডি ম্যানেজমেন্ট অনুযায়ী , গত 15 মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী এমন হওয়ার কথা নয় যে, কোনও COVID-19 রোগীর মৃত্যু হলে, প্রিয়জনকে শেষবারের মতো দেখতে পাবেন না পরিজনরা । এই গাইডলাইন অনুযায়ী এমনও নয় যে, COVID-19-এ মৃত প্রিয়জনের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না পরিজনরা । এবিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, " এই বিষয়টি গাইডলাইনের জন্য নয়, অব্যবস্থার জন্য হচ্ছে । রোগীর পরিজনকে রোগীর অবস্থা জানানো হচ্ছে না । পরিজন ফোনে জানতে চাইলেও জানতে পারছেন না । মৃত্যু হলে অনেক সময় বাড়ির লোককে না জানিয়ে মৃতদেহ মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ ফলে তাঁরা শেষ দেখাও দেখতে পাচ্ছেন না । " এমন যে বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে, এই বিষয়ে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, " প্রশাসনিক খামতি ও অব্যবস্থার কারণে এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে । " সূত্রের খবর, কোনও COVID-19 রোগীর মৃত্যু হলে পরিজনরা যাতে শেষ বারের মতো তাঁদের প্রিয়জনকে দেখার সুযোগ পান ৷ সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তাভাবনা করছে রাজ্য সরকার ।