ETV Bharat / state

বাংলার মাটিতে কি গেরুয়া ঝড় আসন্ন ? - lok sabha election 2019

294 সদস্যের রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূল এখনও এগিয়ে থাকলেও দুরন্ত গতিতে উঠে আসছে BJP । সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের হিসেব বলছে রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পাহাড় থেকে জঙ্গল, সর্বত্রই বিপুল ভাবে উঠে এসেছে গেরুয়া শিবির।

ফাইল ফোটো
author img

By

Published : Jun 2, 2019, 11:14 AM IST

Updated : Jun 2, 2019, 1:54 PM IST

কলকাতা, 2 জুন : চমক দিয়েছে লোকসভা ভোট । রাজ্যে BJP-র আসন সংখ্যা রকেট গতিতে 2 থেকে 18তে পৌঁছে গেছে । আর লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে এই মুহূর্তে রাজ্য বিধানসভাওয়াড়ি আসন বিন্যাসেও ভেঙে পড়ার মুখে তৃণমূলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা । লোকসভা নির্বাচনে কোন বিধানসভা থেকে কারা লিড পেয়েছে, নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, 294 সদস্যের রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূল এখনও এগিয়ে থাকলেও দুরন্ত গতিতে উঠে আসছে BJP। লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে রাজ্যে তৃণমূল এগিয়ে 164 টি বিধানসভা আসনে, অন্য দিকে বিজেপি এগিয়ে আছে 121 টি আসনে । আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় মুছে যেতে বসেছে বামেরা ।

লোকসভা ভোটের প্রেক্ষিতে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাহলে কি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে? প্রশ্নটা একটু তাড়াতাড়ি হলেও এখনই তা উঠতে শুরু করে দিয়েছে । কারণ, 2014 লোকসভা নির্বাচন তো বটেই, 2016-র শেষ বিধানসভা নির্বাচনেও নিজের নিরঙ্কুশ একাধিপত্য বজায় রেখেছিল তৃণমূল । সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের হিসেব বলছে রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পাহাড় থেকে জঙ্গল, সর্বত্রই বিপুল ভাবে উঠে এসেছে গেরুয়া শিবির। আর তিন বছরে মধ্যে 211 টি থেকে কমে 164 হয়ে গেছে তৃণমূলের আসন সংখ্যা । একই সময়ে তিন থেকে বেড়ে এই মুহূর্তে রাজ্যের 121 টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে BJP । রাজ্যে গেরুয়া ঝড়ের দাপট থেকে রেহাই পায়নি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর খাসতালুক ভবানীপুরও।

শুধু ভবানীপুর নয় । কলকাতা থেকে কোনও লোকসভা আসনে না জিতলেও শহরের কয়েকটি বিধানসভায় এগিয়ে BJP । এই তালিকায় রয়েছে বিধাননগর, রাজারহাট-গোপালপুর, রাসবিহারী, জোড়াসাঁকো এবং শ্যামপুকুরের মতো জায়গা । তবে তৃণমূলের মান রেখেছে দমদম, রাজারহাট-নিউটাউন, কসবা, যাদবপুর, টালিগঞ্জ, বেহালা পূর্ব এবং পশ্চিম, মহেশতলা, বজবজ, মেটিয়াবুরুজ, কলকাতা বন্দর, ভবানীপুর, বালিগঞ্জ, চৌরঙ্গি, এন্টালি এবং বেলেঘাটা । সেই এলাকাগুলিতে এগিয়ে ঘাসফুল । যা প্রমাণ করে, শহরের ভোটাররা এখনও মমতার উপরই ভরসা রাখতে আগ্রহী ।

এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন : মিশন 2021 : রাজ্যে BJP-র টার্গেট 180 আসন !

কিন্তু, গ্রামের ভোট ব্যাঙ্ক অনেকটাই মুখ ফিরিয়েছে তৃণমূলের দিক থেকে । বিষয়টি একটু স্পষ্ট করা যাক । ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রায় প্রতিটি জনসভায় পাহাড় আর জঙ্গলে শান্তি ফেরানোর দাবি করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । উন্নয়নকে হাতিয়ার করে গোর্খা আন্দোলনের পাশাপাশি মাওবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলতে শোনা গেছে তাঁকে । কিন্তু, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের হিসেবে অবশ্য পাহাড় আর জঙ্গলমহলে তৃণমূলের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। দার্জিলিং, কার্শিয়াং আর কালিম্পঙ, পাহাড়ের এই তিনটি আসনেই তৃণমূলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে BJP । মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মমতা যতবার পাহাড়ে ছুটে গেছেন, সম্ভবত আগে কোনওদিন কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে তা করতে দেখা যায়নি । পাহাড়ের পরিস্থিতি শান্ত করা, পর্যটকদের পাহাড়মুখী করার মতো একাধিক উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে তাঁকে । কিন্তু, তাও মুখ ফেরাল পাহাড় । অর্থাৎ, বুঝতে অসুবিধা নেই, গলতি ছিলই । আসল পরিস্থিতি-সাধারণ মানুষের মন বুঝতে ভুল করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব ।

bjp
পাহাড় -জঙ্গলমহলে গেরুয়া ঝড়। ফাইল ফোটো

শুধু পাহাড় নয়, উত্তরবঙ্গ জুড়েই ধস নেমেছে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে । দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, মালদহ (উত্তর) এবং মালদহ (দক্ষিণ), এই আটটি লোকসভা আসনের 56 টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে আছে 36 টি আসনে, তৃণমূল 14 টি আসনে এবং কংগ্রেস ছ’টি আসনে ।

এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন : কাঁটা বিছানো পথেই কি যাত্রা শুরু অমিত-রাজনাথ-নির্মলাদের

একই ছবি জঙ্গলমহলেও । ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া আর পুরুলিয়া মিলিয়ে জঙ্গলমহলের মোট 14 টি বিধানসভা আসনের মধ্যে 12 টিতেই এগিয়ে বিজেপি । তালিকায় রয়েছে নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, গড়বেতা, মেদিনীপুর, বান্দোয়ান, বলরামপুর, বাঘমুন্ডি, জয়পুর, পুরুলিয়া, রানিবাঁধ, রাইপুর । অন্যদিকে, মানবাজার আর বিনপুরে এগিয়ে কিছুটা মান বাঁচিয়েছে তৃণমূল । পাহাড়, জঙ্গলমহল এবং উত্তরবঙ্গ তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও দক্ষিণবঙ্গে এখনও আধিপত্য জারি আছে ঘাসফুলের । বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার, উলুবেড়িয়া, কাঁথি এবং তমলুক, এই সাতটি লোকসভা আসনের 49 টি বিধানসভায় একটিতেও এগিয়ে নেই গেরুয়া শিবির । অর্থাৎ, দুই 24 পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকারী সাম্রাজ্যে এখনও দুর্ভেদ্য তৃণমূলের গড় । তবে মোদিনীপুরে অধিকারী পরিবারের জয়ের মার্জিন কিন্তু বেশ খানিকটা কমেছে ।

TMC
কলকাতায় এখনও ভোটব্যাঙ্ক মজবুত তৃণমূলের । ফাইল ফোটো

এখানেই উঠে আসছে মুকুল রায়ের প্রসঙ্গ । এক সময় তৃণমূলের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছেন দক্ষ সেনাপতির মতো । কালের গতিতে আজ আর সেই দিন নেই । তৃণমূলের মুকুল এখন BJP-র গাছে । মুকুলের হাত ধরে তৃণমূল থেকে অনেকেই BJP-তে যোগ দিয়েছেন । দিলীপ ঘোষ-মুকুল রায়দের দাবি, আগামী দিন আরও অনেক তৃণমূলকর্মী BJP-তে যোগ দেবেন । ক্রমেই মুকুল রায় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠছেন মমতা-অভিষেকদের । মুকুল জানতেন আগে গ্রামবাংলার ভোটব্যাঙ্কটা নিজেদের দখলে আনতে হবে । লোকসভা ভোটে সে কাজটাই সুচতুরভাবে সেরেছেন তিনি । তৃণমূল যখন রাজ্যে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা শুরু করেছিল, সেই সময় প্রথম ধাপে গ্রামের ভোটটা অন্তত কিছুটা হলেও ধরে রাখতে পেরেছিল বামেরা । কিন্তু, তৃণমূলের হাত থেকে রশি হালকা হওয়ার মুহূর্তে সেই গ্রামের ভোটব্যাঙ্কই নড়বড়ে দেখাচ্ছে ।

সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক এবং বাম ভোট রামে যাওয়ার কথাও বলতে হবে । পরিসংখ্যান বলছে, 2014 সালের লোকসভা ভোটে বামেদের প্রাপ্তি ছিল 29.71 শতাংশ ভোট। পাঁচ বছরে অবশ্য গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে । তিন বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ভোট নেমে এসেছিল 19.75%-এ । তবে সে বার কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা ছিল বলে বামেদের এই প্রাপ্ত ভোটের হিসেব নিখাদ নয়, তার মধ্যে কংগ্রেসের ভোটও মিশে আছে । গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেদের ভোট ছিল প্রায় 16 শতাংশ । ঘরোয়া আলোচনায় বাম নেতৃত্বের অনেকের আশঙ্কা, আগে তৃণমূলকে হারানো যাক, তার পরে বুঝে নেওয়া যাবে— নিচু তলার এই মনোভাব থেকে কিছু ভোট বিজেপির দিকে যেতে পারে । আবার ভোট-পর্বের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকে আশঙ্কা করছেন, সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশ আগেই বামেদের দিক থেকে তৃণমূলে গেছে। এখন তফসিলি জাতি ও উপজাতি ভোটের একটা অংশ BJP-র দিকে ঝুঁকতে পারে । বামেদের ভোট BJP দিকে গেছে বলেও আশঙ্কা অনেকের । বাম এবং সংখ্যালঘু ভোট তাদের দিকে যাওয়ায় হাত মজবুত হয়েছে BJP-র । প্রকাশ্যে অবশ্য CPI(M) নেতারা ‘বাম ভোট রামে’ যাওয়ার তত্ত্ব মানতে নারাজ।

এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন : পোস্টাল ব্যালটে ধরাশায়ী : প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক পার্থর

2011 তে 34 বছরের বাম রাজত্বের পতনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছিল 2009 সালের লোকসভা নির্বাচনেই । সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও 18 টি আসন জিতে তৃণমূলের ঠিক পিছনেই আছে BJP । দু’বছর পরেই ফের বিধানসভা নির্বাচন। তাহলে কি দশ বছর তৃণমূল শাসনের পর ফের এক বার পালাবদলের মুখোমুখি হতে চলেছে বাংলা? পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার রং কি গেরুয়া হতে চলেছে ? না, রাস্তায় নেমে BJP-র বিজয়রথে লাগাম টানতে পারবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ইতিহাস কিন্তু বলে, মমতা যখনই পথে নেমেছেন, তখনই হাজার জনতাকে পাশে পেয়েছেন । পরিস্থিতি যাই হোক, বাংলার রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চ আগামীদিনে বেশ জমজমাট হতে চলেছে সন্দেহ নেই ।

কলকাতা, 2 জুন : চমক দিয়েছে লোকসভা ভোট । রাজ্যে BJP-র আসন সংখ্যা রকেট গতিতে 2 থেকে 18তে পৌঁছে গেছে । আর লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে এই মুহূর্তে রাজ্য বিধানসভাওয়াড়ি আসন বিন্যাসেও ভেঙে পড়ার মুখে তৃণমূলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা । লোকসভা নির্বাচনে কোন বিধানসভা থেকে কারা লিড পেয়েছে, নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, 294 সদস্যের রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূল এখনও এগিয়ে থাকলেও দুরন্ত গতিতে উঠে আসছে BJP। লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে রাজ্যে তৃণমূল এগিয়ে 164 টি বিধানসভা আসনে, অন্য দিকে বিজেপি এগিয়ে আছে 121 টি আসনে । আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় মুছে যেতে বসেছে বামেরা ।

লোকসভা ভোটের প্রেক্ষিতে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাহলে কি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে? প্রশ্নটা একটু তাড়াতাড়ি হলেও এখনই তা উঠতে শুরু করে দিয়েছে । কারণ, 2014 লোকসভা নির্বাচন তো বটেই, 2016-র শেষ বিধানসভা নির্বাচনেও নিজের নিরঙ্কুশ একাধিপত্য বজায় রেখেছিল তৃণমূল । সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের হিসেব বলছে রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পাহাড় থেকে জঙ্গল, সর্বত্রই বিপুল ভাবে উঠে এসেছে গেরুয়া শিবির। আর তিন বছরে মধ্যে 211 টি থেকে কমে 164 হয়ে গেছে তৃণমূলের আসন সংখ্যা । একই সময়ে তিন থেকে বেড়ে এই মুহূর্তে রাজ্যের 121 টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে BJP । রাজ্যে গেরুয়া ঝড়ের দাপট থেকে রেহাই পায়নি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর খাসতালুক ভবানীপুরও।

শুধু ভবানীপুর নয় । কলকাতা থেকে কোনও লোকসভা আসনে না জিতলেও শহরের কয়েকটি বিধানসভায় এগিয়ে BJP । এই তালিকায় রয়েছে বিধাননগর, রাজারহাট-গোপালপুর, রাসবিহারী, জোড়াসাঁকো এবং শ্যামপুকুরের মতো জায়গা । তবে তৃণমূলের মান রেখেছে দমদম, রাজারহাট-নিউটাউন, কসবা, যাদবপুর, টালিগঞ্জ, বেহালা পূর্ব এবং পশ্চিম, মহেশতলা, বজবজ, মেটিয়াবুরুজ, কলকাতা বন্দর, ভবানীপুর, বালিগঞ্জ, চৌরঙ্গি, এন্টালি এবং বেলেঘাটা । সেই এলাকাগুলিতে এগিয়ে ঘাসফুল । যা প্রমাণ করে, শহরের ভোটাররা এখনও মমতার উপরই ভরসা রাখতে আগ্রহী ।

এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন : মিশন 2021 : রাজ্যে BJP-র টার্গেট 180 আসন !

কিন্তু, গ্রামের ভোট ব্যাঙ্ক অনেকটাই মুখ ফিরিয়েছে তৃণমূলের দিক থেকে । বিষয়টি একটু স্পষ্ট করা যাক । ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রায় প্রতিটি জনসভায় পাহাড় আর জঙ্গলে শান্তি ফেরানোর দাবি করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । উন্নয়নকে হাতিয়ার করে গোর্খা আন্দোলনের পাশাপাশি মাওবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলতে শোনা গেছে তাঁকে । কিন্তু, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের হিসেবে অবশ্য পাহাড় আর জঙ্গলমহলে তৃণমূলের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। দার্জিলিং, কার্শিয়াং আর কালিম্পঙ, পাহাড়ের এই তিনটি আসনেই তৃণমূলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে BJP । মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মমতা যতবার পাহাড়ে ছুটে গেছেন, সম্ভবত আগে কোনওদিন কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে তা করতে দেখা যায়নি । পাহাড়ের পরিস্থিতি শান্ত করা, পর্যটকদের পাহাড়মুখী করার মতো একাধিক উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে তাঁকে । কিন্তু, তাও মুখ ফেরাল পাহাড় । অর্থাৎ, বুঝতে অসুবিধা নেই, গলতি ছিলই । আসল পরিস্থিতি-সাধারণ মানুষের মন বুঝতে ভুল করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব ।

bjp
পাহাড় -জঙ্গলমহলে গেরুয়া ঝড়। ফাইল ফোটো

শুধু পাহাড় নয়, উত্তরবঙ্গ জুড়েই ধস নেমেছে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে । দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, মালদহ (উত্তর) এবং মালদহ (দক্ষিণ), এই আটটি লোকসভা আসনের 56 টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে আছে 36 টি আসনে, তৃণমূল 14 টি আসনে এবং কংগ্রেস ছ’টি আসনে ।

এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন : কাঁটা বিছানো পথেই কি যাত্রা শুরু অমিত-রাজনাথ-নির্মলাদের

একই ছবি জঙ্গলমহলেও । ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া আর পুরুলিয়া মিলিয়ে জঙ্গলমহলের মোট 14 টি বিধানসভা আসনের মধ্যে 12 টিতেই এগিয়ে বিজেপি । তালিকায় রয়েছে নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, গড়বেতা, মেদিনীপুর, বান্দোয়ান, বলরামপুর, বাঘমুন্ডি, জয়পুর, পুরুলিয়া, রানিবাঁধ, রাইপুর । অন্যদিকে, মানবাজার আর বিনপুরে এগিয়ে কিছুটা মান বাঁচিয়েছে তৃণমূল । পাহাড়, জঙ্গলমহল এবং উত্তরবঙ্গ তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও দক্ষিণবঙ্গে এখনও আধিপত্য জারি আছে ঘাসফুলের । বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার, উলুবেড়িয়া, কাঁথি এবং তমলুক, এই সাতটি লোকসভা আসনের 49 টি বিধানসভায় একটিতেও এগিয়ে নেই গেরুয়া শিবির । অর্থাৎ, দুই 24 পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকারী সাম্রাজ্যে এখনও দুর্ভেদ্য তৃণমূলের গড় । তবে মোদিনীপুরে অধিকারী পরিবারের জয়ের মার্জিন কিন্তু বেশ খানিকটা কমেছে ।

TMC
কলকাতায় এখনও ভোটব্যাঙ্ক মজবুত তৃণমূলের । ফাইল ফোটো

এখানেই উঠে আসছে মুকুল রায়ের প্রসঙ্গ । এক সময় তৃণমূলের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছেন দক্ষ সেনাপতির মতো । কালের গতিতে আজ আর সেই দিন নেই । তৃণমূলের মুকুল এখন BJP-র গাছে । মুকুলের হাত ধরে তৃণমূল থেকে অনেকেই BJP-তে যোগ দিয়েছেন । দিলীপ ঘোষ-মুকুল রায়দের দাবি, আগামী দিন আরও অনেক তৃণমূলকর্মী BJP-তে যোগ দেবেন । ক্রমেই মুকুল রায় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠছেন মমতা-অভিষেকদের । মুকুল জানতেন আগে গ্রামবাংলার ভোটব্যাঙ্কটা নিজেদের দখলে আনতে হবে । লোকসভা ভোটে সে কাজটাই সুচতুরভাবে সেরেছেন তিনি । তৃণমূল যখন রাজ্যে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা শুরু করেছিল, সেই সময় প্রথম ধাপে গ্রামের ভোটটা অন্তত কিছুটা হলেও ধরে রাখতে পেরেছিল বামেরা । কিন্তু, তৃণমূলের হাত থেকে রশি হালকা হওয়ার মুহূর্তে সেই গ্রামের ভোটব্যাঙ্কই নড়বড়ে দেখাচ্ছে ।

সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক এবং বাম ভোট রামে যাওয়ার কথাও বলতে হবে । পরিসংখ্যান বলছে, 2014 সালের লোকসভা ভোটে বামেদের প্রাপ্তি ছিল 29.71 শতাংশ ভোট। পাঁচ বছরে অবশ্য গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে । তিন বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ভোট নেমে এসেছিল 19.75%-এ । তবে সে বার কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা ছিল বলে বামেদের এই প্রাপ্ত ভোটের হিসেব নিখাদ নয়, তার মধ্যে কংগ্রেসের ভোটও মিশে আছে । গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেদের ভোট ছিল প্রায় 16 শতাংশ । ঘরোয়া আলোচনায় বাম নেতৃত্বের অনেকের আশঙ্কা, আগে তৃণমূলকে হারানো যাক, তার পরে বুঝে নেওয়া যাবে— নিচু তলার এই মনোভাব থেকে কিছু ভোট বিজেপির দিকে যেতে পারে । আবার ভোট-পর্বের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকে আশঙ্কা করছেন, সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশ আগেই বামেদের দিক থেকে তৃণমূলে গেছে। এখন তফসিলি জাতি ও উপজাতি ভোটের একটা অংশ BJP-র দিকে ঝুঁকতে পারে । বামেদের ভোট BJP দিকে গেছে বলেও আশঙ্কা অনেকের । বাম এবং সংখ্যালঘু ভোট তাদের দিকে যাওয়ায় হাত মজবুত হয়েছে BJP-র । প্রকাশ্যে অবশ্য CPI(M) নেতারা ‘বাম ভোট রামে’ যাওয়ার তত্ত্ব মানতে নারাজ।

এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন : পোস্টাল ব্যালটে ধরাশায়ী : প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক পার্থর

2011 তে 34 বছরের বাম রাজত্বের পতনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছিল 2009 সালের লোকসভা নির্বাচনেই । সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও 18 টি আসন জিতে তৃণমূলের ঠিক পিছনেই আছে BJP । দু’বছর পরেই ফের বিধানসভা নির্বাচন। তাহলে কি দশ বছর তৃণমূল শাসনের পর ফের এক বার পালাবদলের মুখোমুখি হতে চলেছে বাংলা? পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার রং কি গেরুয়া হতে চলেছে ? না, রাস্তায় নেমে BJP-র বিজয়রথে লাগাম টানতে পারবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ইতিহাস কিন্তু বলে, মমতা যখনই পথে নেমেছেন, তখনই হাজার জনতাকে পাশে পেয়েছেন । পরিস্থিতি যাই হোক, বাংলার রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চ আগামীদিনে বেশ জমজমাট হতে চলেছে সন্দেহ নেই ।

Guwahati (Assam), May 30 (ANI): Md. Sanaullah, an ASI of Border Police, was declared as a 'foreigner' and was sent to detention centre. The incident took place on May 29 after a Foreigners' Tribunal in Assam declared him as a foreigner. He had also served in Army for 30 years, was designated as Captain. He was also conferred a medal by President of India for his service. Md. Azmal Haq, retired Army officer and Md. Sanaullah's relative said, "This is a conspiracy hatched by some Border Police personnel. They submitted false information about him that he was born in Dhaka, Bangladesh and also that he doesn't know how to read and works as a labourer".
Last Updated : Jun 2, 2019, 1:54 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.