কলকাতা, 12 সেপ্টেম্বর : আলাপ শিমুলিয়া মাদ্রাসায় । দু'জনকেই পছন্দ করত কওসর ওরফে বোমারু মিজান । জামাত-উল মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার তৎকালীন চিফ কওসর কথা বলিয়ে দিয়েছিল জামাত আমের সালাউদ্দিনের সঙ্গেও । তারপর থেকেই বলতে গেলে জুটি ইজ়াজ়-আসাদুল্লা । এমন কী আন্ডারগ্রাউন্ডে তারা থাকত একসঙ্গেই । একে অপরকে দিত সুরক্ষা ৷ গোয়েন্দা সূত্রে এমনই খবর পাওয়া গেছে ।
কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) সূত্রে খবর, জামাত-উল-মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার বর্তমান আমের ইজ়াজ়কে (ইজ়াজ় গ্রেপ্তার হওয়ার পর নতুন আমের এখনও পর্যন্ত নির্বাচিত হয়নি বলে খবর) গ্রেপ্তার করতে গিয়ে চার জায়গায় তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স । বিহারের গয়ার পাঠানতলিতে একটি ভাড়াবাড়িতে পরিচয় গোপন করে প্রায় দু'বছর লুকিয়ে ছিল ইজ়াজ় । সেখান থেকে অবশ্য মাঝেমধ্যে বেপাত্তা হয়ে যেত । এমনই জানিয়েছেন ওই বাড়ির মালিক । পাঠানতলিতে সে নিজের পরিচয় দিয়েছিল রাজমিস্ত্রি হিসেবে । মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রির কাজও করত । সেই সূত্রে সে ঘরে রাখত রাজমিস্ত্রির বিভিন্ন সরঞ্জাম । সঙ্গে পাঠানতলির প্রত্যন্ত এলাকার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রয়োজনে লোকজনের চিকিৎসা করত । সেই সূত্রে তার নাম হয়ে যায় ডাক্তারবাবু । যদিও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, একাধিক নামে পরিচিত ছিল সে । কোথাও তার নাম ইজ়াজ় মৌলবী । কোথাও আবার জিতু । আর তার আসল নাম তো ছিলই । শেখ ইউসুফ । এইসব ছদ্য নামে সে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত । নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের কাজে তার এই সফর । দেশের কোথাও কোথাও সে ফেরিওয়ালা বেশও ধরেছে বলে জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা । এক্ষেত্রে সব সময় তার সঙ্গেই থাকত আসাদুল্লা । তবে পাঠানতলিতে থাকত না সে । থাকত পাঁচ কিলোমিটার দূরে ।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ইজ়াজ়কে গ্রেপ্তার করার দিন আসাদুল্লা তিনটি SMS করে তাকে । উত্তর না পেতেই সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী সতর্ক হয়ে যায় সে । প্রায় এক কাপড়ে বেরিয়ে পড়ে গয়ার ভাড়াবাড়ি থেকে । সঙ্গে ছিল বিবি এবং পাঁচ ছেলে । তার বিবি বর্তমানে সন্তানসম্ভবা । তাদের সে তুলে দেয় কলকাতাগামী ট্রেনে । ইজ়াজ়কে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আসাদুল্লার খোঁজ ছিল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের কাছে । সেই সূত্রে বর্ধমানে তার বিবিকে আটকায় গোয়েন্দারা । তখন তিনি সন্তানসম্ভবা অবস্থায় পাঁচ সন্তানকে নিয়ে প্রায় দিশেহারা । কিন্তু কলকাতা পুলিশকে ধোঁকা দেওয়া যায়নি । তাঁকে চেপে ধরতেই বেরিয়ে পড়ে সত্যি । জানা যায়, ইজ়াজ়ের ধরা পড়ার খবর পেতেই সক্রিয় হয় আসাদুল্লা । বিবিকে নিয়ে পালায় গয়ার ডেরা থেকে । কোনও মতে আসে গয়া স্টেশনে । সেখান থেকে সে কলকাতাগামী ট্রেনে তুলে দেয় সন্তানসম্ভবা বিবি সহ সন্তানদের । তারা বর্ধমানে এসে নামে । প্রসঙ্গত, বর্ধমানের ভাতারে বাড়ি আসাদুল্লার ।
বর্ধমান স্টেশনে আসাদুল্লার বিবিকে আটক করে পুলিশ । তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পারে, বিবিকে কলকাতাগামী ট্রেনে তুলে দিয়ে নিজে বেপাত্তা হয়েছে আসাদুল্লা । এরই মাঝে কলকাতায় মিটিং করার ছক করে জামাত-উল মুজাহিদিন ইন্ডিয়া । সেই সূত্র ধরে গ্রেপ্তার হয় কাশেম বারি সহ তিনজন । সূত্র জানাচ্ছে, যে 11 জনের কলকাতায় এসে বৈঠক করার কথা ছিল, তাদের নেতা এই আসাদুল্লা । গোয়েন্দারা তার বিবির মারফত জানতে পারে তামিলনাড়ুতে আগে থাকত এই আসাদুল্লা । বর্ধমান স্টেশনে ট্রেনের টাইম মিলিয়ে পুলিশ বুঝতে পারে, ফের তামিলনাড়ুতেই যাচ্ছে আসাদুল্লা । সেখানে বহুদিন থেকেছে এই জঙ্গি । ঠিকানা তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের 1/108 AA নগর, সেনালপুরম চেন্নাই । তার পরিচিত ছিল রাজমিস্ত্রি হিসেবে ।
শেষরক্ষা হয়নি । পুলিশ পৌঁছে যায় চেন্নাইয়ে ইজ়াজ়ের ডানহাত আসাদুল্লার নেওয়া ভাড়াবাড়িতে । মঙ্গলবার সকালে সেখানে পৌঁছে যায় পুলিশ । গ্রেপ্তার করা হয় আসাদুল্লাকে ।