কলকাতা, 30 মে : COVID-19-র সংক্রমণ বাড়ছে । এখন পিক টাইম । এর মধ্যেই বিভিন্ন বিষয়ে ছাড় দেওয়ার কথা বলছে সরকার । এই পরিস্থিতিতে একাংশ সরকারি চিকিৎসক বলছেন, লকডাউনের দুই মাস সময় সরকার পেয়েছে । COVID-19 মোকাবিলায় সরকার এখন প্রস্তুত তো ? যদি না হয়, তা হলে ভবিষ্যতে বিপর্যয়ের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই । তবে লকডাউনই সমাধান নয় । সরকারের প্রয়োজন চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ে তোলা, সবরকমভাবে প্রস্তুত থাকা বলে জানালেন চিকিৎসকরা ।
সরকারি চিকিৎসকদের অন্য একটি অংশ বলছে, দায়িত্ব পালন না করে হাত তুলে নিয়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার । মানুষকে মৃত্যুর মুখে ফেলে দিয়েছে । এটা ক্রিমিনাল অফেন্স । লকডাউন তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি । কারণ, COVID-19-র সংক্রমণ এখন বাড়ছে, এখন পিক টাইম । এই অবস্থায় বৈজ্ঞানিকভাবে অন্তত গোটা জুন মাস লকডাউনের প্রয়োজন ।
রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস । তার সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, "অপরিকল্পিত লকডাউনের জন্য মানুষের যা দুর্ভোগ হয়েছে, তা অবিশ্বাস্য । লকডাউন থাকলেই সংক্রমণ বন্ধ হয়ে যাবে, এরকম নয় । প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা । লকডাউনের শুরুতে COVID-19 সংক্রমণের সংখ্যা ছিল প্রায় 500 । দুই মাস পরে এই সংখ্যা এখন দেড় লাখের উপর । লকডাউন মানে চিকিৎসা নয় । লকডাউন করা হচ্ছে নিজের প্রস্তুতির জন্য । সরকার যদি মনে করে রোগের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত তা হলে লকডাউন তুলতেই পারে । সারা জীবন লকডাউন চলবে না । মানুষকে বুঝতে হবে, কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে ।”
অপরিকল্পিত লকডাউনের জন্য গরিব মানুষের জীবন-জীবিকার যা হল, তা ভয়ঙ্কর । কোনও পরিকল্পনা না করে লকডাউন শুরু হয়েছিল । কোটি কোটি মানুষকে চূড়ান্ত দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে । লকডাউন যদি চলতে থাকে , তা হলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়তে থাকবে । আবার আচমকা লকডাউন তুলে দেওয়া হবে, তাও ঠিক নয় বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মানসবাবু । অর্থাৎ প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনার । ধাপে ধাপে তুলতে হবে লকডাউন । সরকার সবরকমভাবে প্রস্তুত কি না প্রশ্ন চিকিৎসকদের ।
রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম । তার সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "সরকার পুরোপুরি হাল ছেড়ে দিয়েছে । দায়িত্ব পালন করল না । যার ফলে লকডাউনের মেয়াদ বাড়তে থাকল এবং মানুষের উপর বোঝা চাপল । এই সময় সরকারের যা করা উচিত ছিল, তা করল না । এর জন্য সেই পরিকাঠামোও কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের নেই । এখন পুরোপুরি হাল ছেড়ে দিয়েছে । জনগণ বুঝে নিক, যা পারে করুক, বিষয়টা এইরকমই ।”
এখন সংক্রমণ বাড়ার সময়, এই সময় লকডাউন হয়ত খানিকটা শিথিল করা যেতে পারে । কিন্তু লকডাউন তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি । বিজ্ঞানসম্মতভাবে আরও কিছু দিন লকডাউন দরকার । কিন্তু পুরো বিষয়টা থেকে রাজ্য ও কেন্দ্র হাত তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সজলবাবু ।
সজলবাবু বলেন, "এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক । এটা একটা অপরাধমূলক কাজ । জনগণকে বিপদের সামনে ফেলে দিয়ে নিজেরা হাত গুটিয়ে নিল । মানুষের এটা বোঝা উচিত, মানুষেরই এর জবাব দেওয়া উচিত ।”
31 মে পর্যন্ত লকডাউন। অন্তত গোটা জুন মাস লকডাউন প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন রাজ্যের চিকিৎসকরা । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে কথা বলেছেন । অন্তত এই বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত যে আরও 15দিন বাড়তে পারে লকডাউনের মেয়াদ । এইদিকে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, লকডাউন সমাধান নয় । লকডাউন নিজেদের জন্য বরাদ্দ সময় । যে সময়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে রাজ্য ও কেন্দ্র । কোরোনা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত তো দেশ , এই প্রশ্নই বারবার ফিরে এসেছে চিকিৎসকদের থেকে ।