নয়াদিল্লি ও কলকাতা, 17 মার্চ: আগেই কেঁদে ভাসিয়েছিলেন ! আর এবার নিজেকে একেবারে নির্দোষ বলে দাবি করে বসলেন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) এবং তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি (Manish Kothari) ! তাঁর দাবি, দুর্নীতি সম্পর্কে তিনি নাকি কিছুই জানেন না ! 'যত দোষ' সবই আসলে 'নন্দ ঘোষের', থুড়ি অনুব্রত মণ্ডলের ! উলটোদিকে, অনুব্রতও দুর্নীতির দায় স্বীকার করতে নারাজ ৷ ইডি আধিকারিকদের জেরার মুখে তাঁর দাবি, সবকিছু জানেন মণীশ ! তিনি কিছুই জানেন না ! ইডি সূত্রে সামনে এসেছে এমনই দায় ঠেলাঠেলির তথ্য !
গরুপাচার কাণ্ডে (WB Cattle Smuggling Scam) একে একে গ্রেফতার হয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেন, অনুব্রত নিজে এবং তাঁর হিসাবরক্ষক মণীশ ৷ গ্রেফতার হওয়ার পরই সংবাদমাধ্যমের ক্য়ামেরার সামনে হাপুস নয়নে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল মণীশকে ! তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর একমাত্র অপরাধ হল, তিনি একজন চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ! ইডি সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যেই মণীশকে আলাদাভাবে জেরা করেছেন আধিকারিকরা ৷ জেরায় মণীশ জানিয়েছেন, 2016 সাল থেকে অনুব্রতর হিসাবরক্ষক হিসাবে কাজ করছেন তিনি ৷ একইসঙ্গে, অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যার টাকাপয়সার হিসাবও তাঁকেই দেখতে হত ৷
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি কোনও দিন দুর্নীতির কোনও আঁচ পাননি মণীশ ? তাঁর মনে প্রশ্ন জাগেনি, কোথা থেকে আসছে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ? মণীশের দাবি, তিনি সবকিছুই করেছেন অনুব্রতর নির্দেশে ৷ কোন সংস্থায় কত টাকা বিনিয়োগ করা হবে, কাকে ব্যক্তিগতভাবে কত টাকা পাঠাতে হবে, এই সব নির্দেশই নাকি দিতেন কেষ্ট নিজে ৷ কোনও কারণে তিনি ব্যস্ত থাকলে তাঁর বার্তা পৌঁছে দিতেন সায়গল হোসেন ৷ অথচ, ইডির হাতে আসা তথ্য বলছে, অনুব্রত-সুকন্যাকে বিনিয়োগ সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া-সহ যাবতীয় আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন মণীশ ৷ কিন্তু, ইডির কাছে জেরায় সেই তত্ত্ব মানতে নারাজ কেষ্টর হিসাবরক্ষক ৷
সুকন্যা মণ্ডলের নামে প্রায় 16-17 কোটি টাকার একটি ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে ৷ সেটি দীর্ঘদিন ধরেই ইডির নজরে আছে ৷ এ নিয়ে মণীশকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, অনুব্রত মণ্ডল এবং সায়গল হোসেনের কথা মতো ওই ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়েছে ! কিন্তু, ওই টাকা কি গরুপাচারের কালো টাকা ? এর কোনও জবাব মণীশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি ৷ এই প্রেক্ষাপটে সুকন্যা মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি বলে মনে করছেন ইডি গোয়েন্দারা ৷ গত বুধবার তাঁর ইডির দিল্লির দফতরে হাজিরা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি আসেননি ৷ মণীশ ইডিকে আরও জানিয়েছেন, শুধুমাত্র অনুব্রত, সুকন্যার ব্যাংক অ্যাকাউন্টই নয়, কেষ্টর কথায় সায়গল হোসেনের ব্যাংক অ্য়াকাউন্টেও বিভিন্ন সময় কোটি কোটি টাকা জমা দিয়েছেন তিনি ! প্রশ্ন হল, একজন চাটার্ড অ্য়াকাউন্ট্যান্ট হিসাবে এসব নিয়ে কি কখনও সন্দেহ হয়নি মণীশের ?
আরও পড়ুন: হিন্দি প্রশ্নের বাংলায় জবাব ! কেষ্টর জেরায় দোভাষীর ভূমিকায় দুই ইডি আধিকারিক
উলটো দিকে যখন অনুব্রতকে এইসব লেনদেন, টাকা জমা দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে, তখন তিনি যাবতীয় দায় মণীশের ঘাড়েই ফেলছেন ৷ কেষ্টর যুক্তি, আর্থিক বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া-সহ সমস্ত কাজকর্ম দেখভাল করার জন্যই মণীশকে বেতন দিয়ে নিয়োগ করা হয়েছিল ৷ কাজেই এসব সম্পর্কে তাঁর থেকে মণীশই ভালো জানবেন !