কলকাতা, 23 জানুয়ারি : শহরের এ পাড়া, ও পাড়া সব মাটিতেই তাঁর অনশ্বর পায়ের ছাপ এখনও স্পষ্ট । পায়ে হেঁটে কলকাতার পাড়া ঘুরে দেখলে আজও সুভাষচন্দ্র বসুর উজ্বল উপস্থিতি চোখে পড়বে । যার সামনে ট্যাবলো বিতর্ক, মূর্তি স্থাপন বিতর্ক বড় ক্লিশে মনে হয় । খিদিরপুরের মনসাতলা লেনে আজও অনুভূত হয় সুভাষচন্দ্র বসুর উপস্থিতি (Netaji Special Story) । কীভাবে ? শুনুন সেই কাহিনী ৷
17/2মনসাতলা লেনের আনন্দময়ী দরিদ্র ভাণ্ডার ৷ বিগত 113 বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি আর্ত মানুষের সেবায় নিয়োজিত । 1909 এ আনন্দময়ী দরিদ্র ভাণ্ডারে পথে চলা শুরু হলেও তখন প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার মতো নিজস্ব কোনও জায়গা ছিল না ৷ অস্থায়ী জায়গা থেকেই কাজ করত এই দরিদ্র ভাণ্ডার ৷
1939 সালে এই প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে এখানে আসেন তৎকালীন ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (23rd January Special) । প্রতিষ্ঠানের নাম ফলকে দেশনায়কের নাম আজও জ্বলজ্বল করছে ৷ প্রতিবারের মতো আজ 125তম জন্মদিনেও নেতাজিকে স্মরণ করছে আনন্দময়ী দরিদ্র ভাণ্ডার ৷
তবে মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে পরাধীন ভারতে ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি কীভাবে সম্ভব ? সেই সময় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্টকে রাষ্ট্রপতি বলে সম্বোধন করা হত ।
সুভাষচন্দ্র বসু মনে করতেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসন ভারতীয়দের দারিদ্রের মূল কারণ । 1938 সালে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে 1939 সালে কংগ্রেসের অভ্যন্তরেই ফরোয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠা করেন । তার এই বামপন্থী মনোভাব কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী নেতারা পছন্দ করেননি । এমনকি বিরোধিতা করেছিলেন মহাত্মা গান্ধিও । তাই কংগ্রেসের সঙ্গে তখনই পথ আলাদা করেন দেশনায়ক ।1940 সালে তাঁর নেতৃত্বেই ফরোয়ার্ড ব্লক আলাদা পার্টি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ।
আরও পড়ুন : Netaji Birth Anniversary : ‘দেশনায়ক দিবস’-কে ফের জাতীয় ছুটি ঘোষণার দাবি মমতার
এই সময় বিভিন্ন জনহিতকর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু । রাজনৈতিক কারণে খিদিরপুরে এসে এখানকার তরুণদের কার্যকলাপ সম্পর্কে শোনেন তিনি । যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান জনহিতকর কাজ করতেন তাদের প্রতি সমর্থনও ছিল তাঁর । ফলে 1909 সালে 30 মার্চ যাত্রা শুরু করা আনন্দময়ী দরিদ্র ভাণ্ডার 30 বছর পরে যখন আজকের জায়গায় সংস্থার নিজস্ব বাড়ি বানানোর উদ্যোগ নেয়, তখন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে তদানীন্তন কমিটির সদস্যরা সুভাষচন্দ্র বসুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন । তাঁদের জনহিতকর কর্মকাণ্ডের কথা শুনে এখানে আসতে আগ্রহী হন দেশনায়ক ৷
তবে এই সংস্থার আনন্দময়ী নামকরণের পিছনেও রয়েছে একটি ইতিহাস । খিদিরপুরে রয়েছে প্রায় 200 বছরের পুরনো আনন্দময়ী মা কালীর মন্দির । দেবীর নাম থেকেই সংস্থার নাম আনন্দময়ী । তাছাড়া খিদিরপুরের এই অঞ্চলে অনুশীলন সমিতির দুটি শাখা ছিল । যাদের বকলমে সাহায্য করত এই সংস্থাটি । ফলে বিপ্লবী চিন্তার প্রচ্ছন্ন সমর্থনের সঙ্গে দরিদ্র নারায়ণ সেবার কর্তব্য এই জনহিতকর সংস্থাকে অন্যরূপে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল ।
সুভাষচন্দ্র বসু 1939 সালের 3 মে এখানে এসে শুধু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেই চলে যাননি ৷ সংস্থার ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড কোন পথে এগোলে আরও ভাল কাজ করা যাবে সে বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানান সংস্থার বর্তমান সদস্যরা ৷ 'খিদিরপুরের ইতিহাস' বলে একটি বই লিখেছিলেন আনন্দময়ী দরিদ্র ভাণ্ডারের প্রবীণ সদস্য সমর দত্ত । সেখানেই রয়েছে সেদিনের ঘটনার বিশদ বিবরণ ৷
আরও পড়ুন : Republic Day Parade : সাধারণতন্ত্র দিবসে ব্রাত্য বাংলা-নেতাজি
এই সংস্থার বর্তমান কার্যকরী কমিটির সদস্য ডিউক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সুভাষচন্দ্র বসুর সেদিনের দেখানো পথ এবং আদর্শ নিয়ে আজও আমরা এগিয়ে চলেছি । প্রতিমাসে 20 জন শিক্ষার্থী-সহ 100 জন দুঃস্থকে 200 টাকা ও অতি দুঃস্থদের 250 টাকা করে সাহায্য করা হয় । প্রতিবছর পুজোয় 350 জনকে নতুন বস্ত্র প্রদান করা হয় । বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজ আমরা করে থাকি এবং এই সবকিছুর পিছনেই আমাদের প্রেরণা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ৷"
বর্তমানে 21 জনের কার্যকরী কমিটির সদস্যদের নিজস্ব উদ্যোগে এই প্রতিষ্ঠান আজও চলছে পুরনো নিয়মনীতি মেনে । 125-তম জন্মবার্ষিকীতে যখন নেতাজিকে নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে । তখন খিদিরপুরের এই 17/2 মনসাতলা লেনে সুভাষচন্দ্র বসু বেঁচে রয়েছেন তাঁর আদর্শে বিশ্বাসী এই প্রতিষ্ঠানে ।
আরও পড়ুন : First marble statue of Netaji: দেশে প্রথম জলপাইগুড়িতেই স্থাপিত হয়েছিল নেতাজির মর্মর মূর্তি