কলকাতা, 22 জুন: কমিশন নিয়ে বিতর্কের মাঝেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় 34 শতাংশ থেকে এক ধাক্কায় নামল দশ শতাংশের নীচে ৷ পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে দফায় দফায় আদালত এবং রাজভবনের প্রশ্নের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। রাখঢাক না-করেই এই দুই প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে বারংবার নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উঠে এসেছে প্রশ্ন। কিন্তু এসবের মাঝেও রাজ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীর সংখ্যা এক ধাক্কায় নেমে এল অনেকটাই। তথ্য বলছে, রাজ্যে 1978 থেকে 2013 সাল পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মোট বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন 23 হাজার 185 জন প্রার্থী। 2018 সালে এক ধাক্কায় সেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীর সংখ্যা পৌঁছে যায় 20 হাজারে। অর্থাৎ পঞ্চায়েতের মোট ত্রিস্তরে আসন শতাংশ সংখ্যার 34 শতাংশ আসনেই রাজ্যের শাসক দল জিতেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
এবার নির্বাচন নিয়ে যতই বিতর্ক হোক। আইন-শৃঙ্খলা, হিংসা, রক্তপাত নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের যতই সমালোচনা হোক, এটাও তথ্য 2023 সালে এই রাজ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীর সংখ্যা 34 শতাংশ থেকে কমে হয়েছে মাত্র নয় শতাংশ। যদিও এই সংখ্যাটা এখনই যে চূড়ান্ত তা বলা যাচ্ছে না। কারণ আদালতে প্রায় প্রত্যেকদিনই নতুন নতুন মামলা হচ্ছে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৷ সেক্ষেত্রে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যার পরিবর্তন হচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া শেষ তথ্য অনুসারে এটাই বলা যায় রাজ্যে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ত্রিস্তর মিলিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছে মাত্র নয় শতাংশ আসনে।
2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিসেব বলছে 58 হাজার 692 আসনের মধ্যে 20 হাজার 76টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন প্রার্থীরা। এর মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন ছিল 16 হাজার 814 পঞ্চায়েত সমিতির তিন হাজার 59 এবং জেলা পরিষদের আসন ছিল 203টি। এবার অর্থাৎ 2023 সালে এক ধাক্কায় তা কমে হয়েছে হয়েছে সাত হাজার পাঁচ। তিনটি স্তর মিলে 74 হাজার আসনের মধ্যে এই সংখ্যাটা যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ। এবারের কমিশনের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে 312 টি ব্লকে 63 হাজার 229 টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে অধিকাংশই ৷ পঞ্চায়েত সমিতির আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এসেছে 759 আসনে। আর জেলা পরিষদের 928 আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এসেছে মাত্র আটটা আসনে। কাজেই এ কথা বলাই যায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের তুলনায় এ বছর এক ধাক্কায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীর সংখ্যা কমল অনেকটাই।
বৃহস্পতিবার এই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। সুকান্ত মজুমদার অবশ্য মানছেন এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীর সংখ্যা কমেছে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এটা সম্ভব হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি শক্তিশালী হওয়াতে। গতবারে আমরা যত মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছি এবার তার দ্বিগুণ দিয়েছি। এটা আমরা পাঁচ শতাংশেরও নিচে নামাতে পারতাম যদি ঝামেলা না হতো। কিছু জায়গায় আমরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারিনি, যেমন চোপড়া, দক্ষিণ 24 পরগনা বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ডায়মন্ড হারবার ও বহু জায়গায় আমাদের 14-15 জনকে নমিনেশন তুলে নিতে হয়েছে। আর এই শওকত মোল্লা, শাজাহান শেখ মত মানুষজনের দৌরাতের ফলে সাধারণ মানুষ তাদের গণতান্ত্রিকদের অধিকার পেশ করতে সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলেছে।"
আরও পড়ুন: মানুষের একফোঁটাও রক্ত ঝরলে দায় কমিশনের, কড়াবার্তা রাজ্যপালের
এই বিষয় নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছেও প্রশ্ন করা হয়েছিল এই নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র তথা রাজ্যের বিধায়ক তাপস রায়কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, "এর থেকেই প্রমাণিত বিরোধীরা যে অভিযোগ করছেন তারা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি এই অভিযোগ সত্য নয়। এই অভিযোগ সত্য হলে এত বিপুল পরিমাণে মনোনয়ন জমা পড়লো কীভাবে! আমরা বারবার স্পষ্ট ভাষায় বলেছি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের পক্ষে রাজ্যের শাসক দল। এবার মোটের উপর মনোনয়ন প্রক্রিয়া ছিল শান্তিপূর্ণ। তাই এত বিপুল মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দু'চারটে জায়গায় ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের ধুঁয়ো দেয়া হচ্ছে।"